ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:
নাগরিকত্ব আইন নিয়ে এবার নিজের তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। কেন্দ্র সরকারের পাকিস্তানি হিন্দুদের প্রতি মনোনিবেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আগে নিজের দেশকে ঠিক করা উচিৎ। সংসদের উচিৎ এই আইন খারিজ করা”। শুক্রবার কেজরিওয়াল এনডিটিভি-কে জানান, “এই আইন হিন্দু-মুসলিম উভয়কেই আঘাত করবে।” তিনি দাবি করেন “এই বিলের ফলে হিন্দু মুসলিম উভয়কেই বহিষ্কার করা হবে।”
কেরালার বিধানসভায় এই বিল খারিজ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানান, “বিধানসভায় এটা পাশ হয়েছে না বাতিল হয়েছে সেটা বিষয় নয়। কিন্তু এটা সারা দেশে ও সংসদে বাতিল হওয়া উচিৎ। ” পাশাপাশি তিনি বলেন, “যদি আমি বিধানসভায় এই বিল খারিজ করি, এটা কি তবে বন্ধ হয়ে যাবে? সংসদেও এটা খারিজ হতে হবে।”
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, “পাকিস্তান থেকে আসা হিন্দুদের প্রতি দরদ, আর যারা ভারতীয় হিন্দু? তাদের জন্য কোন আইন?” তিনি বলেন “অর্থনীতি তলানিতে,বাচ্চাদের জন্য চাকরি নেই, বাড়ি নেই। আর তাঁরা (কেন্দ্র সরকার) ২ কোটি পাকিস্তানি হিন্দুকে নিয়ে আসতে চাইছে। “
উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে দাবি, ভারতের তিনটি মুসলিম প্রতিবেশী দেশ – বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে যে সংখ্যালঘুরা ধর্মীয় নির্যাতনের কারণে ভারতে পালিয়ে এসেছে এই নাগরিকত্ব আইন তাঁদের নাগরিকত্ব পেতে সহায়তা করবে। সমালোচকদের দাবি, এটি মুসলিমদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণের জন্য তৈরি করা হয়েছে এবং তা সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ নীতিগুলি লঙ্ঘন করছে।
এদিকে নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসির মাধ্যমে কেন্দ্র বিভাজনের রাজনীতি করছে বলে অভিযোগ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাঁর মতে, কেন্দ্রীয় সরকার ধর্মের নামে দেশকে টুকরো করার চেষ্টা করছে ।
শুক্রবার ভারতের শিলিগুড়িতে পথে নেমে কেন্দ্র-বিরোধিতায় সোচ্চার হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শিলিগুড়ির প্রধাননগর থেকে বাঘাযতীন পার্ক পর্যন্ত মিছিল করেন মমতা। এনআরসি নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরাই দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করছেন বলে অভিযোগ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এ প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী-কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দু’জন দু’রকম কথা বলছেন। পরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদও ভিন্ন কথা বলছেন। ওঁদের নিজেদের কথাতেই কোনও মিল নেই। সকালে একরকম কথা বলেন, বিকেলে অন্য কথা বলেন।’
রাজনৈতিক দলগুলিকেও তাঁদের দায়িত্ব পালনে কেন্দ্র বাধা দিচ্ছে বলে এদিন অভিযোগ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে লখনউ বিমানবন্দরের ঘটনার কথা উল্লেখ করেন তিনি। সম্প্রতি লখনউয়ে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন তৃণমূল প্রতিনিধিরা। তৃণমূল প্রতিনিধি দলকে বিমানবন্দর থেকে বেরোতেই দেওয়া হয়নি। ১৪৪ ধারা জারির নাম করে বিমানবন্দরেই তাঁদের আটকে দেওয়া হয়। নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসির প্রতিবাদে উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। কেন্দ্র বিরোধী আন্দোলনে নেমে উত্তরপ্রদেশে পুলিশের গুলিতে ২৩ জনের মৃত্যু হয়। নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার পথে বাধার মুখে পড়েন তৃণমূল নেতারা।
কেন্দ্রকে হুঁশিয়ারি দিয়ে এদিন ফের এরাজ্যে নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসি কার্যকর করা হবে না বলে আবার জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
উল্লেখ্য ভারতের নতুন নাগরিকত্ব আইন এবং আসামের এনআরসি নিয়ে দেশটির অনেক রাজ্যে তুমুল অস্থিরতা চলছে।
সান/ এমইপি