আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আবারও নতুন সঙ্কটের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে নেপালের রাজনীতি। প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির আবেদনে সাড়া দিয়ে রাষ্ট্রপতি পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দিয়ে আগামী বছর নতুন নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
রোববার (২০ ডিসেম্বর) বিশেষ পরিস্থিতিতে পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়েছেন দেশটির রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভান্ডারি। সেই সঙ্গে আগামী নতুন বর্ষে দুই ধাপে ৩০ এপ্রিল ও ১০ মে নতুন নির্বাচন আয়োজনের নির্দেশনা দিয়েছেন রাষ্ট্রপতির দফতর। খবর কাঠমান্ডু পোস্ট।
করোনা ভাইরাস মহামারি মোকাবেলা, অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠার ব্যর্থতাসহ রাজনৈতিক সংকট নিয়ে কেপি শর্মা ওলি ব্যর্থতার অভিযোগ ছিল। এর সঙ্গে যুক্ত হয় নেপালের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে চীন-ভারতের রশি টানাটানি। এসব ইস্যুকে সামনে নিয়ে পার্লামেন্টে ক্রমেই চাপ বাড়াচ্ছিলেন বিরোধীরা। এমনকি নিজ দল নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির ভেতর থেকেও বর্তমান সরকারের ওপর অনাস্থা তৈরি হয়েছিল।
গত সপ্তাহে নেপালের পার্লামেন্টে সাংবিধানিক কাউন্সিল আইনের অধ্যাদেশ অনুমোদন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিরোধীরা সক্রিয় হয়ে ওঠেন। যদিও প্রধানমন্ত্রী কেপি ওলি তড়িঘড়ি করে এ অধ্যাদেশে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অনুমোদন করিয়ে নেন। এর পর থেকে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অসন্তোষ আরও জোরালো হয়।
এমন পরিস্থিতিতে শনিবার দলের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন কেপি শর্মা ওলি। সেই বৈঠকে দলের চেয়ারম্যান পুষ্প কমল দহলের সঙ্গে এবং সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেন তিনি। এর পরপরই ওলি সরকারের পতনের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। নেপালের অনেক রাজনীতিবিদ আশা করেছিলেন সাংবিধানিক সংকট এড়াতে অধ্যাদেশ সংশোধনের পথে হাঁটবেন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি।
কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে রোববার সকালে মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক শেষে রাষ্ট্রপতির কাছে পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার প্রস্তাব করেন। প্রস্তাবে বলা হয়, পার্লামেন্টের আস্থা হারিয়েছে বর্তমান প্রশাসন। তাই পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে দ্রুত পরবর্তী নির্বাচন আয়োজন করা প্রয়োজন। ওলির এমন প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে কার্যত বর্তমান সরকারের যবনিকাপাত হলো।
প্রস্তাবের বিরোধিতা করে ওলি প্রশাসনের ৭ মন্ত্রী পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এ তালিকায় দেশটির শিক্ষামন্ত্রী গিরিরাজ মানি পোখরেল, কৃষিমন্ত্রী ঘনশ্যাম ভুশাল, পর্যটন ও সংস্কৃতিমন্ত্রী জোগেশ কুমার ভট্টরাই প্রমুখ রয়েছেন। তারা সবাই সরকার ও দলে ওলির বিপক্ষ বলয়ের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
এক যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী ওলির পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার অসাংবিধানিক প্রস্তাবের সঙ্গে আমরা একমত নই। তাই বর্তমান সরকারে থেকে কাজ করা সম্ভব নয় বলেই একযোগে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে প্রধানমন্ত্রীর এ প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছেন নেপালের রাষ্ট্রপতি ভান্ডারি।
রোববার বিকালে জারি করা এক নোটিশে রাষ্ট্রপতির দফতর জানিয়েছে, সংবিধানের ৭৬ (১) ও (৭) এবং ৮৫ ধারা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে আসা পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন রাষ্ট্রপতি। একই সঙ্গে তিনি আগামী ৩০ এপ্রিল ও ১০ মে দুই দফায় পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছেন।
নেপালের বর্তমান সংবিধানের অধীনে অনুষ্ঠিত প্রথম সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হন কেপি শর্মা ওলি। তিন বছরের কম সময়ের ব্যবধানে তার পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন দেশটির সংবিধান বিশেষজ্ঞরা। কেননা এ প্রস্তাব বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনেক সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
তাদের দাবি, সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতাকে পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার প্রস্তাব তোলার অনুমোদন দেয় না সংবিধান। তাই প্রধানমন্ত্রী ওলির এ প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পেলেও আদালতে উঠতে পারে। দেশটির সাংবিধানিক আইন বিশেষজ্ঞ ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দ্র কান্ত গৌয়ালি বলেন, চরম রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকটে পড়েছে নেপাল।
সান নিউজ/এসএ