সান নিউজ ডেস্ক:
বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ সমরবিদ জেনারেল কাশেম সোলাইমানির হত্যাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সংঘাতের ফলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব, এমন আশঙ্কা সর্বত্র। এরই মধ্যে যুদ্ধের মহড়া শুরু করে দিয়েছে ইরান। বিশ্লেষকদের ধারণা, মার্কিন প্রেসিডেন্টের নির্দেশে ইরানের জাতীয় বীর হয়ে ওঠা জেনারেল কাশেম সোলাইমানির হত্যার প্রতিশোধ নিতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঝুঁকি নিচ্ছে ইরান। শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, ইরানের পশ্চিম আকাশে যুদ্ধবিমানের মহড়া চলছে। যুদ্ধবিমান সতর্ক অবস্থানে থেকে পাহারা দিচ্ছে। আর ইরানের হামলার আশঙ্কায় মধ্যপ্রাচ্যে নতুন সাড়ে তিন হাজার সেনা পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রামাজান শরিফ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের ক্ষণিকের এই আনন্দ-উল্লাস শোকে পরিণত হবে। ইরান প্রয়োজনে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ করতেও পিছপা হবে না। এর আগে সোলাইমানি নিহত হওয়ার পর ভয়ংকর প্রতিশোধের ঘোষণা দেন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, ইরানের পশ্চিম আকাশে যুদ্ধবিমান উড়তে দেখা গেছে। কুদস ফোর্সের কমান্ডার মেজর জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে হত্যার পর যুদ্ধের মহাড়া শুরু করে দিয়েছে ইরান।
এদিকে সোলাইমানির মৃত্যুর পর টুইটারে ট্রেন্ডিং হয়েছে ‘ওয়ার্ল্ড ওয়ার থ্রি’ (তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ)। শুধু টুইটারেই নয়, হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই গুগলের সার্চ রেকর্ডেও উপরের দিকে উঠে এসেছে ‘ওয়ার্ল্ড ওয়ার থ্রি’। আর গুগলে খোঁজ করার দিক দিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে আছে ‘ইরান’।
চলমান উত্তেজনার মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে আরও সাড়ে তিন হাজার সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন বাহিনীর ওপর ইরানের হামলার আশঙ্কায় সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে এসব সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে। নতুন সাড়ে তিন হাজার সেনা কুয়েতে অবস্থানরত সাড়ে সাতশ’ মার্কিন সেনা বহরে যোগ দেবে।
শুক্রবারই ইরাক ও ইরানে অবস্থানরত সব মার্কিন নাগরিককে আকাশপথে দ্রুত দেশ ছাড়ার অনুরোধ জানিয়েছে বাগদাদে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস। প্রয়োজনে স্থলপথে ইরাক ছড়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ বিবৃতির পর নতুন করে হামলা-পাল্টা হামলার ইঙ্গিত দেখছে বিশ্লেষকরা। এতে করে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ’র সূচনা হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হলে তার মূল ভূমি হবে ইরান, ইরাক ও সিরিয়া। যা পরে ইসরায়েলসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ, ইউরোপ, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও চীন পর্যন্ত ছড়িয়ে যাবে।
এদিকে চলামান উত্তেজনার মধ্যে ইরাকে আবারও হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। হামলায় নিহত হয়েছেন ছয়জন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, স্থানীয় সময় শুক্রবার দিবাগত রাত ১টা ১২ মিনিটের দিকে বাগদাদের উত্তরের তাজি রোডের মিলিশিয়া ক্যাম্পের কাছে এ বিমান হামলা চালানো হয়।
ইরাকের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, মিলিশিয়া কাফেলার তিনটি গাড়ির মধ্যে দুইটি পুড়ে গেছে। সেখান থেকে ছয়জনের পোড়া মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পাশাপাশি হামলাতে আরও তিনজন আহত হয়েছেন।
মার্কিন এক কর্মকর্তা বলেন, এই হামলা আমেরিকা চালায়নি। অবশ্য এর আগের হামলাটি, যেটিতে সোলেমানি নিহত হয়েছেন, সেটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে চালানো হয়েছে।
পিএমইউ, যা আরবিতে হাশদ আল-শাবি নামেও পরিচিত। হামলার অন্যতম টার্গেট ছিল পিএমইউ-র এক শীর্ষ কমান্ডার। তারা ওই হামলায় তাদের কোনও কমান্ডার নিহত হওয়ার খবর অস্বীকার করেছে।