আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পশ্চিমবাংলায় ৩৪ বছরের বাম রাজত্বের অবসান ঘটিয়ে ২০১১ সালে ক্ষমতায় এসেছিল মমতার তৃণমূল কংগ্রেস। তারপর ২০১৬ সালের নির্বাচনের চেয়ে বেশি ভোট পেয়ে ক্ষমতায় আসেন। কিন্তু এরপরই পশ্চিম বাংলার রাজনীতিতে বিজেপির পাল্লা ভারি হতে শুরু করলে পরিবর্তন আসতে থাকে। তারপর থেকেই দফায় দফায় তৃণমূলে ভাঙন দেখা দেয়।
শনিবার (১৯ ডিসেম্বর) কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পশ্চিমবঙ্গ সফরের কথা। অমিতের হাত ধরেই বিজিপির ফুল নিতে পারেন শুভেন্দু। শুভেন্দু দল ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন গত বুধবার। আর তিওয়ারি দল ছেড়েছেন তার পরদিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার। এ দুজনই বিজেপিতে যোগ দেওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। যদিও তৃণমূল নেত্রী মমতা গত বুধবার বলেছেন, এখান থেকে দু-একজন চলে গেলে তেমন কোনও ক্ষতি হবে না।
পশ্চিম বাংলায় আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন ২০২১ সালের এপ্রিল মে মাসে। কিছুদিন থেকেই রাজ্যে চরছে নির্বাচনের হিসাব। রাজনীতির হাওয়া সরগরম। কিন্তু মমতার সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে বিজেপি। রাজ্যে বিজেপি প্রথম বীজ বপন করে ২০১৪ সালে। সেই বছর লোকসভা নির্বাচনে কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদি বিপুল জয় পেলেও মমতার পশ্চিমবঙ্গে মাত্র দুই আসন পেয়েছিল।
সেই দুই আসনই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মমতার জন্য অশনিসংকেত হিসেবে দেখেছিল। এরপর কেটে গেছে আরও সাত বছর। সেই সময়ের বিজেপির বীজ রীতিমতো বৃক্ষে পরিণত হয়েছে। গত বছর লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের ৪২ আসনের মধ্যে বিজেপি দখল করে নেয় ১৮টি। তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মুকুল রায়। যার হাত ধরে দলটি অনেক কঠিন সময় পার করেছে।
সেই মুকুল রায় মমতার সঙ্গে বিরোধের কারনে ২০১৭ সালে দল ছেড়ে দেন। তিনি এখন রাজ্যে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক। তৃণমূলের সেই ভাঙন মুকুলেই থেমে নেই। এরপর যারাই তৃণমূল ছেড়েছেন প্রায় সবাই নৌকা ভিড়িয়েছেন বিজেপির বন্দরে। সর্বশেষ তৃণমূল সরকারের সাবেক মন্ত্রী দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা শুভেন্দু অধিকারী ও জিতেন্দ্র তিওয়ারি দল ছেড়েছেন।
অত্যন্ত প্রভাবশালী শুভেন্দু তৃণমূলে মমতার পরই নেতা হিসেবে তাকে বিবেচনা করা হয়। বিধানসভা নির্বাচনে অন্তত ৫০টি আসনে সরাসরি প্রভাব রয়েছে শুভেন্দুর হাতে। জোর গুঞ্জন রয়েছে, সেই শুভেন্দুও যোগ দিচ্ছেন বিজেপিতে।
অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির শীর্ষনেতা কৈলাশ বিজয়বর্গিয়া বলেছেন, শুভেন্দুর নেতৃত্বগুণ বহুমুখী। তিনি বিজেপিতে যোগ দিতে চাইলে আমরা স্বাগত জানাব। একদিকে তৃণমূলের ঘর ভাঙছে, অন্যদিকে বিজেপি গড়ছে। গোটা ভারতের রাজনীতির দিকে তাকালে দেখা যায় বিজেপির ক্ষমতা দিন দিন বাড়ছে। ২০১৪ সালে মোদি ঢেউয়ের জোয়ার তুলে ক্ষমতায় আসে।
কিন্তু গত বছর তার চেয়েও বেশি আসন নিয়ে ক্ষমতায় বসেন মোদি। অর্থাৎ বিজেপি কোনও দিক থেকেই ম্লান হয়নি। কাশ্মীর, নাগরিকত্ব আইনসহ বেশকিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিলেও দলটির জনপ্রিয়তা ঊর্ধ্বমুখী। সম্প্রতি বিহারে বিধানসভা নির্বাচনেও এর প্রমাণ পাওয়া গেছে। সেই রাজ্যে বিজেপি রেকর্ডসংখ্যক ৭৩ আসনে জয়ী হয়েছে। এরপর বিজেপির টার্গেট হলো পশ্চিমবঙ্গে মমতা সরকারের পতন। সেই লক্ষ্য নিয়েই তারা অগ্রসর হচ্ছে।
সম্প্রতি বিজেপির সভাপতি জেপি নাড্ডা গিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গে। সেখানে তার গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটে। যার দায় পড়ে মমতা সরকারের ওপর। এর জের ধরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পশ্চিমবঙ্গের শীর্ষ তিন আইপিএস অফিসারকে বদলির আদেশ দেন। এতে চটেছেন মমতা। খবর বেরিয়েছে, এ ঘটনাকে অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়ে আদালতে মামলা ঠুকবেন মমতা।
পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে প্রধান ইস্যু হবে নাগরিকত্ব আইন ও জাতীয় নিবন্ধন নীতিমালা। এ দুই ইস্যুকে কাজে লাগাতে চান মমতা। তবে শুধু ইস্যুর ধোঁয়া তুলে নির্বাচনে জয়ী হওয়া মমতার জন্য কঠিন হবে। সবচেয়ে কঠিন হবে, নিজের ঘর সামলাবেন নাকি বিজেপিকে ঠেকাবেন।
সান নিউজ/এসএ