আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রে মডার্নার তৈরি করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন অনুমোদন পাওয়া এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র। বৃহস্পতিবার দেশটির বিশেষজ্ঞ প্যানেল ভ্যাকসিনটিকে নিরাপদ উল্লেখ করে অনুমোদন দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছে।
বিবিসির খবর অনুসারে, বিশেষজ্ঞ প্যানেলের উপস্থিত ২০ সদস্যই মডার্নার ভ্যাকসিন জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারে অনুমোদনের পক্ষে ভোট দেন। এদিন প্যানেলের বাকি এক সদস্য অনুপস্থিত ছিলেন।
বিশেষজ্ঞদের সুপারিশের পর মডার্নার ভ্যাকসিন অনুমোদনে আর কোনও বাধা থাকল না ধরা যায়। এখন দেশটির খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) যেকোনও সময় আনুষ্ঠানিকভাবে এটি অনুমোদনের ঘোষণা দিতে পারে। এরপর আগামী সপ্তাহেই যুক্তরাষ্ট্রে মডার্নার ভ্যাকসিন বিতরণ শুরু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এর আগে, চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে এফডিএ’র বিশেষজ্ঞরা মডার্নার ভ্যাকসিন ৯৪ শতাংশ কার্যকর বলে ঘোষণা দেন।
মার্কিন বিশেষজ্ঞ প্যানেলের মতে, মডার্নার তৈরি করোনা ভ্যাকসিন ১৮ বছর বয়োসোর্ধ্বরা ব্যবহার করলে ঝুঁকির চেয়ে উপকারই বেশি। এই একই প্যানেল গত সপ্তাহে মার্কিন ফামাসিউটিক্যাল জায়ান্ট ফাইজারের তৈরি করোনা ভ্যাকসিন ব্যবহারে অনুমোদনের সুপারিশ করেছিল।
যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই মডার্নার ভ্যাকসিনের ২০ কোটি ডোজ কিনতে রাজি হয়েছে। এফডিএ’র অনুমোদন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি ৬০ লাখ ডোজ পাঠিয়ে দিতে প্রস্তুত।
ফাইজার ও মডার্নার ভ্যাকসিনের পার্থক্য কী?
মডার্নার ভ্যাকসিন মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখতে হয়।, অর্থাৎ এটি সাধারণ ফ্রিজারেই পরিবহন সম্ভব। কিন্তু ফাইজারের ভ্যাকসিন রাখতে হবে মাইনাস ৭৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়, যার ব্যবস্থা করা কঠিনই হবে।
ফাইজারের মতো মডার্নার ভ্যাকসিনেরও দু’টি ডোজ নিতে হবে। তবে ফাইজারের দ্বিতীয় ডোজ ২১ দিন পর আর মডার্নারটি নিতে হবে প্রথমটি নেয়ার ২৮ দিন পর।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ফাইজারের ভ্যাকসিন ৯০ শতাংশ কার্যকর আর মর্ডানার ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা প্রায় ৯৫ শতাংশ।
মডার্না জানিয়েছে, অনুমোদনের পর তাদের ভ্যাকসিনের প্রায় সবই উৎপাদিত হবে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসে। তবে ফাইজারের ভ্যাকসিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, বেলজিয়ামসহ বেশ কয়েকটি দেশে উৎপাদিত হচ্ছে।
আর কোন দেশ মডার্নার ভ্যাকসিন চেয়েছে?
কানাডা সরকার মডার্নার কাছ থেকে আগামী মার্চের মধ্যেই ২০ লাখ ডোজ নিতে চায়। তবে তাদের চাহিদা ৫ কোটি ৬০ লাখ ডোজের।
যুক্তরাজ্য ইতোমধ্যে মডার্না ভ্যাকসিনের ৭০ লাখ ডোজের জন্য আগাম অর্ডার করে রেখেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন গত মাসে আট কোটি ডোজ কেনার ঘোষণা দিয়েছে। তবে চুক্তি অনুসারে, আরও আট কোটি ডোজ নেয়ার সুযোগ রয়েছে তাদের।
এছাড়াও জাপান পাঁচ কোটি, দক্ষিণ কোরিয়া দুই কোটি ও সুইজারল্যান্ড ৭৫ লাখ ডোজের জন্য মডার্নার সঙ্গে চুক্তি সই করেছে।
টাকার পাহাড়ে ফাইজার-মডার্না
ওয়াল স্ট্রিটের বিশ্লেষকদের ধারণা, আগামী বছর শুধু করোনা ভ্যাকসিন বেচেই ৩ হাজার ২০০ কোটি (৩২ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার আয় করবে ফাইজার ও মডার্না।
মরগান স্ট্যানলির মতে, ২০২১ সালে ফার্মা জয়ান্ট ফাইজার একাই আয় করবে অন্তত ১ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। তবে ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমোদন পেয়ে যাওয়ায় ২০২০ সালের বাকি দিনগুলোতেও তাদের পকেটে ঢুকবে প্রায় ৯৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার।
অবশ্য ফাইজার তাদের লাভের অংক ভাগাভাগি করবে জার্মান বায়োটেকনোলজি কোম্পানি বায়োএনটেকের সঙ্গে। তারা যৌথভাবে তৈরি করেছে করোনারোধী ভ্যাকসিন।
শুধু ২০২১ সাল জুড়েই নয়, পরের দুই বছরেও বিপুল অংকের লাভের আশা করছে ফাইজার কর্তৃপক্ষ। তাদের বিশ্বাস, সারাবিশ্ব করোনার টিকাদান কার্যক্রম চালিয়ে গেলে ২০২২ ও ২০২৩ সালে আরও ৯৩০ কোটি ডলার আয় হবে তাদের।
আর গোল্ডম্যান স্যাশের অনুমান, ২০২১ সালে করোনা ভ্যাকসিন বেচে ১ হাজার ৩২০ কোটি ডলার লাভ করতে পারে মডার্না।
মরগ্যান স্ট্যানলির হিসাব আরও আশাব্যঞ্জক। তাদের ধারণা, ২০২১ ও ২০২২ এ দুই বছরই বার্ষিক এক হাজার থেকে দেড় হাজার কোটি ডলার আয় হতে পারে মর্ডানার। ভ্যাকসিন বিক্রি বেশি হলে আয় আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাদের। সূত্র: বিবিসি, সিএনএন।