আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের বিতর্কিত নতুন তিন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আন্দোলনে রয়েছে কৃষকরা। এক কৃষক পরিবারের ১১ বছরের বালিকাও পিতা-মাতার সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন।
পাঞ্জাবের বাসিন্দা সেই বালিকা গুরসিমরাতের বাবাও একজন কৃষক। ভারতব্যাপী কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে যোগদিতে পাঞ্জাব থেকে মিছিল করে গুরসিমরাতের পরিবারও রাজধানী দিল্লির সীমান্তে হাজার হাজার কৃষকের সঙ্গে মিলে সেখানে আন্দোলন করে যাচ্ছেন।
আন্দোলনের পাশাপাশি গুরসিমরাত লেখা-পড়া চালিয়ে যাচ্ছেন। সামনে তার পরীক্ষার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। সড়কে বসেই চলছে তার লেখাপড়া। গুরসিমরাত পাঞ্জাবের একটি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী।
বিবিসিকে দেওয়া এক বক্তব্যে গুরসিমরাত জানায়, ‘‘আমরা এখানে আমাদের অধিকার আদায় করতে এসেছি। মোদী সরকার কৃষকদের জন্য যে কালো আইন তৈরি করেছে, তা প্রত্যাহার করে নেওয়ার পরই কেবল আমরা আমাদের বাড়িতে ফিরে যাব।”
আন্দোলনের কারনে লেখা-পড়ার ক্ষতি হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে গুরসিমরাত বলেন, ‘‘দেখুন, লেখাপড়াতো করতেই হবে, লেখাপড়া করা জরুরি। কিন্তু এ সময় আন্দোলন করাটাও জরুরি।” গুরসিমরাতের মা সুখবীর কর আন্দোলনের মধ্যেও মেয়ের লেখাপড়ার বিষয়ে তদারকি করছেন। তিনি জানান, স্বামী এবং মেয়ে ছাড়াও তার স্বামীর দুই ভাইও আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন।
সড়কেই চলছে তাদের রান্না-খাওয়াসহ দৈনন্দিন সব কাজ। তিনি বলেন, ‘‘আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে এই আন্দোলনে অংশ নিচ্ছি। যেখানেই অন্যায় হবে আমরা লড়াই করব। অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলবে।”গুরসিমরাতের আশা ঈশ্বরের আশীর্বাদে শিগগিরই কৃষকরা তাদের অধিকার ফিরে পাবেন।
ভারতে কৃষি আইন সংস্কারের নামে সম্প্রতি নতুন তিনটি আইন পাস হয়েছে। বিল হিসেবে পার্লামেন্টে উপস্থাপনের পরপরই তিনটি আইনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন ভারতীয় কৃষকরা। বিরোধীদল থেকেও তীব্র সমালোচনা করা হয়।
কিন্তু কৃষকদের দাবি বা বিরোধীদের সমালোচনা কোনও কিছুর তোয়াক্কা না করে এক তরফাভাবে কৃষি আইন পাস করিয়ে নেয় নরেন্দ্র মোদী সরকার। রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পেয়ে শেষ পর্যন্ত সেই বিল তিনটি আইনে পরিণত হয়। মোদী সরকার বারবার বলছে, নতুন তিন আইনে কৃষকরাই লাভবান হবে। কিন্তু কৃষকরা তা মানতে নারাজ।
কৃষকদের আশঙ্কা, নতুন কৃষি আইনের ফলে সরকার আর ন্যায্যমূল্যে কৃষকদের কাছ থেকে ফসল কিনতে বাধ্য থাকবে না। বাজারের উপর সরকারের নজরদারিও কমে যাবে। ফলে বাজারের নিয়ন্ত্রণ এবং কৃষি পণ্যের দাম নির্ধারণের ক্ষমতা বড় বড় ব্যক্তিমালিকানাধীন কোম্পানির হাতে চলে যাবে এবং কৃষকদের জীবন তাদের দয়ার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে।
সরকারের কাছে তাদের একটাই দাবি, নতুন তিন আইনের প্রত্যাহার। যতদিন পর্যন্ত সরকার সেই তিন আইন বাতিল না করবে ততদিন তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলেও হুমকি দিয়েছেন। তবে তারা আলোচনার পথ খোলা রেখেছেন।
সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কৃষক নেতাদের কয়েক দফা বৈঠকও হয়েছে। কিন্তু অচলাবস্থার অবসান হয়নি। আন্দোলনরত কৃষকরা রাজধানী দিল্লিতে প্রবেশ করতে চাইছেন। তারা দিল্লিমুখী বিভিন্ন রাস্তা অবরোধ করে রেখেছেন। ভারতের বিশেষ করে উত্তরের রাজ্যগুলোর কৃষকদের অন্তত ৩০টি সংগঠন এবারের আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে।
সান নিউজ/এসএ