ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:
করোনা সংক্রমণ ত্বরান্বিত হলে দক্ষিণ এশিয়া এক ভয়াবহ অবস্থার মুখোমুখি হবে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্ট।
পত্রিকাটির সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলছে, এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসের বিস্তার মোকাবিলায় সবচেয়ে কম প্রস্তুতি রয়েছে এ অঞ্চলের। এখানকার স্বাস্থ্যসেবা এমনিতেই দুর্বল, এই খাতে আর্থিক বরাদ্দও কম। সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রেও রোগীদের পোহাতে হয় নানা দুর্ভোগ। তবে এক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের বৈশ্বিক সূচক অনেক ভাল বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
পত্রিকাটি বলছে, চীন, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় এ অঞ্চলে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত অনেক কম। ভাইরাসটির বিরুদ্ধে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশগুলোতে স্কুল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ভ্রমণে বিধিনিষেধ আনা হয়েছে। সিনেমা হল, পর্যটন কেন্দ্র, বড় সমাবেশ বন্ধ।
তবে এতে বলা হয়েছে, ভাইরাসের বিস্তার বন্ধে যথাসাধ্য চেষ্টার দাবি ভারত সরকার করলেও বিশেষজ্ঞরা তাতে আশ্বস্ত হতে পারছেন না। তারা বলছেন, করোনাভাইরাস পরীক্ষার সংখ্যা খুবই কম। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, ভারত ও এর প্রতিবেশীরা বিশ্বের অন্য স্থানের মতো ভয়াবহতার মুখে পড়তে পারেন।
গত এক সপ্তাহে দক্ষিণ এশিয়ায় এ অঞ্চলে করোনার সংক্রমণ চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতের ভাইরাস বিষয়ক বিশেষজ্ঞ টি জ্যাকব জোনকে উদ্ধৃত করে ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, প্রকৃত সত্যটা দেখা দেবে সামনের কয়েক দিন বা সপ্তাহে। জ্যাকব জোন মনে করছেন, বহুগুণে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ভারতে বৃদ্ধি পেতে শুরু করবে।
অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের তথ্যে পত্রিকাটি জানিয়েছে, ভারতে প্রতি ২ হাজার মানুষের জন্য হাসপাতালে বেড আছে ১ টি। পক্ষান্তরে দক্ষিণ কোরিয়ায় ১২টি বেড, ইতালিতে আছে ৩টিরও বেশি বেড। “যদি এই ভাইরাসের বিস্তার ঘটে তাহলে পাকিস্তানের স্বাস্থ্য সুবিধা সব রকম সমস্যায় পড়বে। আমাদের সক্ষমতা নেই। আমাদের কোনো রিসোর্স বা উৎস নেই।” পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের এমন বক্তব্যও তুলে ধরা হয়।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ভারতে ১২ হাজার ৪০০ জনের নোভেল করোনা ভাইরাস পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে যে পরিমাণ মানুষের পরীক্ষা করা হয়েছে তাদের হার দেশটির প্রতি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে মাত্র ৯ জন। বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এই হার ১১৪, আর দক্ষিণ কোরিয়ায় ৬ হাজার। করোনাভাইরাস পরীক্ষার এমন চিত্র তুলে ধরে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ এই পত্রিকাটির প্রতিবেদন বলছে, ভারত ও প্রতিবেশী দেশগুলোতে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে থাকলে এ অঞ্চলের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়বে।
ইন্ডিয়ান জার্নাল অব ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন-এর সম্পাদক ডাক্তার অতুল কুলকার্নি ওয়াশিংটনকে বলেছেন, ভারতে কি পরিমাণ আইসিইউ বেড এবং ভেন্টিলেটর আছে তা নিয়ে সরকারি কোনো পরিসংখ্যান নেই। বড় বড় শহরে এরকম আইসিইউ ওয়ার্ড বাড়াতে হবে। তা আরো করতে হবে লাভজনক হাসপাতালগুলোতে, যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতীয়রা যাওয়ার সামর্থ্য রাখেন না।
তবে দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কিছু ইতিবাচক দিক তুলে ধরে পত্রিকাটি বলছে, এখানকার জনগোষ্ঠীর বেশির ভাগই যুব-সমাজ। তাছাড়া আছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ওষুধের কারখানা। যদি এই ভাইরাস ফ্লু’র পথ অনুসরণ করে, তাহলে করোনা সংক্রমণ কমে আসবে। কারণ, মে-জুনে শুরু হবে প্রচণ্ড গরম। তা অব্যাহত থাকবে কমপক্ষে জুলাই-আগস্ট পর্যন্ত।
পাশাপাশি বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটির ভাইরোলজি ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান সাইফ উল্লাহ মুন্সিকে উদ্ধৃত করে আন্তর্জাতিক এই সংবাদ মাধ্যমটি জানাচ্ছে, বাংলাদেশের প্রস্তুতি পর্যাপ্ত কিনা তা বলা কঠিন। যে কোনো সময় জনগণের মধ্যে এই ভাইরাসের বিস্তার ঘটতে পারে।