আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চলতি বছরের জুন থেকে লাদাখ সীমান্তে সংঘাতের পরই তিক্ত সম্পর্কে এশিয়ার দুই জায়ান্ট চীন-ভারত। বিশেষ করে গত তিন থেকে চার দশকে এশিয়ার এই দুই পারমাণবিক ক্ষমতাধর দেশের সম্পর্ক এতটাই খারাপের দিকে পৌঁছেছে যে সম্প্রতি যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে চলে যায়। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, লাদাখ সীমান্তের সংঘাতের পর থেকেই গেল কয়েক মাস ধরে দুই দেশের সম্পর্কে অবনতি।
লাদাখে গালওয়ান উপত্যকায় ভারত ও চীনের ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ নিয়ে সংঘর্ষ হয়। গত ১৫ জুন রাতের সংঘর্ষে ভারতের শতাধিক জওয়ান অংশগ্রহণ করলেও চীনের পক্ষে ৩৫০ সেনা সদস্য অংশগ্রহণ করে বলে খবর প্রকাশ হয়। সংঘাতে জড়িয়ে ২০ ভারতীয় সেনা প্রাণ হারান। তখন চীনের বহু সেনা হতাহত হয়েছে বলে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম দাবি করে। ওই সংঘাতে চীনা সেনাদের হতাহতের বিষয়টি এখনও নিশ্চিত করেনি বেইজিং।
ভারতীয়দের পেরেক খঞ্জিত লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাতের কারণে মৃত্যু হয় বলেও জানায় গণমাধ্যমগুলো। উভয় দেশ ‘লাইন অব অ্যাকচুয়াল- এল.এ.সি’ সীমান্তে অনুপ্রবেশের অভিযোগ তোলে। এরপরও কয়েক দফা সংঘাতের খবর পাওয়া যায়। এমনকি চীনের পক্ষ থেকে ভারতীয় সেনাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ার দাবি করে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
বুধবার (৯ ডিসেম্বর) চলমান পরিস্থিতি নিয়ে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর বলেন, চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক সবচেয়ে কঠিন পর্যায়ে চলে আসে। যা গত ৩০-৪০ বছরে দেখা যায়নি। অস্ট্রেলিয়ার থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক লোই ইনস্টিটিউটের ভার্চুয়াল অধিবেশন চলাকালে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
জয়শঙ্কর আরও বলেন, সীমান্তে দুই দেশ সবশেষ মুখোমুখি সংঘাতে জড়িয়েছিল ১৯৭৫-এ। ১৯৮৮ সালেও ভারত-চীনের মধ্যে সমস্যা দেখা দেয়। সঙ্কট উত্তরণে আমরা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেই।
‘সীমান্তে সমস্যার অবসানে দুই দেশ আরও সময় নিচ্ছে। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে ‘শান্তি এবং স্থিতিশীলতা’ ফিরিয়ে আনতে নয়াদিল্লি-বেইজিং চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিরোধপূর্ণ সীমান্তে যেন বড় সশস্ত্র বাহিনী না পাঠায় এ বিষয়ে দু’দেশের মধ্যে একাধিক চুক্তি রয়েছে।’
এ বিষয়ে মন্ত্রী অভিযোগ করে আরও জানান, ‘কিছু বিষয়ে চীন প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। বারবার সীমান্ত চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে কয়েক হাজার সশস্ত্র সেনা পাঠিয়েছিল বেইজিং। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে স্বভাবতই চুক্তি লঙ্ঘন এবং আঞ্চলিক অস্থিরতা বাড়বে। সংকট প্রশমনে দুই দেশের কূটনৈতিক পর্যায়ে মস্কোসহ ভিন্ন জায়গায় কয়েক দফা আলোচনা হলেও কার্যত কোনো ফলাফল আসেনি।’
অন্যদিকে, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনিং মঙ্গলবার জানান, নয়াদিল্লির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে শি জিনপিং সরকার বেশ কিছু সমঝোতায় পৌঁছেছে। সুর্নিদিষ্ট বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমেই এগিয়ে যাবে দুই দেশ।
জয়শঙ্করের মন্তব্য টেনে ভারতের সাবেক কূটনৈতিক বৈদেশিক নীতি বিশ্লেষক পুঞ্চক গণমাধ্যম আল-জাজিরাকে জানান, ‘চীন যদি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে ফিরে যেতে চায়, তবে প্রথমেই সীমান্তের সমস্যা নিরসন করতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর বোঝাতে চাইছেন এখন কোনো কিছুই স্বাভাবিক নয়। যতক্ষণ না পর্যন্ত সীমান্ত ইস্যুর সমাধান না হচ্ছে।’
সীমান্ত সঙ্কট নিয়েই দু’দেশ একটা জায়গায় আটকে আছে তা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্য স্পষ্ট ফুটে উঠেছে বলে মত দেন নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব এশীয় স্টাডিজের চীনা গবেষণার অধ্যাপক আলকা আচার্য। এ অধ্যাপক আরও যোগ করেন, ‘ভুল বোঝাবুঝির কারণেই চীন-ভারতের সম্পর্ক চরম পর্যায়ে নিয়ে গেছে, এমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছেন জয়শঙ্কর।’ ফাটল সম্পর্ক মেরামতের প্রচেষ্টা চলছে কিন্তু সেটা এই মুহূর্তে কিছুটা জটিল বলছেন জওহরলালের এই অধ্যাপক।
অপরদিকে বেইজিং-ভিত্তিক চীন ও বিশ্বায়নের কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী অ্যান্ডি মোক আল জাজিরাকে জানান, চীন-ভারত সম্পর্ক এখন প্রকৃতপক্ষে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এ জন্য নয়াদিল্লিকেই দুষছেন তিনি। চীনের সঙ্গে কাজ করে ভারতকে আরও অনেক কিছু অর্জন করতে হবে মন্তব্য করেন তিনি।
সান নিউজ/এসএম