আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কৃষি উৎপাদনের সঙ্গে কঠোর শারিরিক পরিশ্রমের সম্পর্ক জড়িত। ফলে ফসল উৎপাদন করতে মানুষের জীবনে কৃষক বলতে শুধুমাত্র পুরুষের অস্তিত্তকেই বুঝানো হয়। এক্ষেত্রে যদি নারীরা কৃষি কাজের দায়িত্ব নেয় তাহলে মানুষ ভাবে তারা কৃষক নয়, নারী শ্রমিক।
কিন্তু গোটা ভারতের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের বাস্তবতা কিন্তু ক্রমেই পরিবর্তন হচ্ছে। সেখানে পুরুষ কৃষকদের পাশাপাশি ঘরের নারীরাও মাঠে কাজ করছেন আগের চেয়ে বেশি।
মঙ্গলবার (০৮ ডিসেম্বর) ভারতের কৃষকরা দেশজুড়ে অবরোধ পালন করেন বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইনের বিরোধিতা করে। রাজধানী দিল্লির প্রবেশ মুখগুলোতে কৃষকরা অবস্থান নিয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকারকে চাপে রাখতে। কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রীরা কয়েক দফায় কৃষকদের সঙ্গে বৈঠকেও বসেছেন, কিন্তু তাতে কোনও ফলপ্রসূ আলোচনা হয়নি।
কারণ সরকার চাইছে কৃষকরা যাতে আন্দোলন থেকে সরে আসেন আর কৃষকরা চাইছেন সরকার যেন তিনটি আইন একেবারেই বাতিল করে দেয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েও কৃষকদের ঘরে ফেরাতে পারছেন না।
কৃষকরা দুই-তিন সপ্তাহের খাবারসহ প্রয়োজনীয় তপ্লিতল্পা নিয়ে দিল্লিতে অবস্থান নিয়েছেন। দাবি আদায় না করে তারা ফিরবেন না। পুরুষ কৃষকরা যখন রাজধানীতে আন্দোলনে ব্যস্ত, তখন নারী কৃষকরা ব্যস্ত ফসলের মাঠে। ভারতের কৃষি শুমারি মতে, প্রত্যন্ত অঞ্চলের ৭৩ দশমিক ২ শতাংশ নারী প্রত্যক্ষভাবে কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত।
এ নারীদের মধ্যে মাত্র ১২ দশমিক ৮ শতাংশের নিজস্ব জমি রয়েছে চাষের জন্য। বাকিরা সবাই অন্যের জমিতে কাজ করেন। কৃষকদের আন্দোলন ছাড়াও ভারতে কৃষিতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। কৃষিতে নারীদের ভূমিকা বাড়লেও মজুরির ক্ষেত্রে এখনও নারী-পুরুষ বৈষম্য রয়ে গেছে। ভারতে একজন পুরুষ কৃষক অন্যের জমিতে কাজ করলে দিনে অন্তত আড়াইশো রুপি মজুরি পান।
কিন্তু একই সমপরিমান পরিশ্রম করলে একজন নারী কৃষককে দেওয়া হয় দেড়শো রুপি। এই শ্রমের বৈষম্য দূর করতে রাজ্য সরকারতো দূরের কথা, কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকেও কোনও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবারের কৃষক আন্দোলনে কৃষকদের বিতর্কিত তিনটি আইন বাতিলের দাবির পাশাপাশি নারী-পুরুষ কৃষকদের মজুরির বৈষম্য দূরীকরণেও জোরালো দাবি তোলা উচিত। এবারের আন্দোলনে যাতে নারী কৃষকদের কণ্ঠস্বর বঞ্চিত না হয়, সেদিকে নজর রাখতে নীতি নির্ধারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষকরা।
সান নিউজ/এসএ