আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কাতারের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য আরব দেশগুলোর খুব শিঘ্রই বিরোধের অবসান হতে চলেছে। সৌদি আরবসহ এ অঞ্চলের বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে আকাশপথ, জলপথ ও স্থলপথে অবরোধের মাধ্যমে ৩ বছর আগ থেকে কূটনৈতিক সম্পর্ক বন্ধ রয়েছে। দৃশ্যত, সেই অবস্থার অবসান হতে চলেছে।
সূত্র মতে, এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে আলোচনা হয়েছে। তারা সবাই সমস্যা সমাধানে রাজি হয়েছেন। এখন শুধু এ নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষরের অপেক্ষা। তবেই কাতার আবার আগের অবস্থায় ফিরে যাবে।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাই জারেড কুশনারের সৌদি আরব ও কাতার সফরের পর দৃশ্যপট দ্রুত পাল্টাতে শুরু করে। বলা হয়, কাতার সঙ্কটের সমাধান করার মিশন নিয়ে কুশনার এই সফরে এসেছিলেন। এরপর কাতারের সঙ্গে বিরোধ বন্ধে অগ্রগতির ঘোষণা দেয় কুয়েত।
শুক্রবার ( ৪ ডিসেম্বর) সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা দেন, কাতারের সঙ্গে বিরোধের অবসান দ্রুতই হতে চলেছে বলে মনে হচ্ছে। এখানে উল্লেখ্য, ইরানের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ উপসাগরীয় অঞ্চল গড়ে তোলার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছিল কাতারকে বিচ্ছিন্ন রাখার মাধ্যমে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এতে বলা হয়, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মিশর যখন কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে তাদের সঙ্গে সব রকম ব্যবসা, সফর বাতিল করে তখন থেকেই এই সঙ্কট সমাধানের জন্য কাজ করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও কুয়েত। তারই অংশ হিসেবে বুধবার দোহায় আলোচনায় বসেন জারেড কুশনার।
তিনি বৈঠক করেন সৌদি আরবেও। এরপর ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে রোমে এক কনফারেন্সে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল সাউদ বলেন, কুয়েতের অব্যাহত তৎপরতার অংশ হিসেবে গত কয়েকটি দিনে আমরা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করতে পেরেছি। এতে সমর্থন থাকার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ।
আমরা আশা করি, এর ফলে চূড়ান্ত একটি চুক্তি করতে পারবো আমরা এবং তা খুব তাড়াতাড়িই। আমি আরও বলতে পারি যে, আমি আশাবাদী এ ব্যাপারে যে, এই বিরোধে জড়িত সব দেশের মধ্যেই আমরা একটি চূড়ান্ত চুক্তির কাছাকাছি।
ওয়াশিংটনের একটি সূত্র বলেছেন, সব পক্ষের মধ্যে একটি চুক্তিতে পৌঁছা গেছে। তা আগামী দুএক সপ্তাহের মধ্যে স্বাক্ষরিত হতে পারে। একটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছেন, তারা আসলে একটি চুক্তি নিয়ে কাজ করছেন এবং সেটি স্বাক্ষরিত হওয়ার বিষয়ে কাজ করছেন।
রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কুনা বলেছে, এ অগ্রগতিকে শুক্রবার স্বাগত জানিয়েছেন কুয়েতের আমির শেখ নাওয়াফ আল আহমাদ আল সাবাহ। তিনি বলেছেন, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ এখন সংহতি, ঐক্য এবং স্থিতিশীলতার পক্ষে। এই চুক্তি সেটাই বলে দিচ্ছে।
অন্যদিকে শুক্রবার বাহরাইনে এক সামিটে বক্তব্য রেখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র খুবই আশাবাদী যে, এই বিরোধ সমাধান হতে চলেছে। এর সঙ্গে যুক্ত সব দেশই যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র। এর মধ্যে কাতারে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটি। বাহরাইনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর পঞ্চম নৌবহর। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী। চুক্তির অধীনে প্রথমেই কাতারের জন্য উপসাগরীয় আকাশসীমা খুলে দেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
সন্ত্রাসে সমর্থন ও অর্থায়নের অভিযোগে কাতারকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিল আরবের এইসব দেশ। কিন্তু এমন অভিযোগ বার বারই অস্বীকার করে এসেছে কাতার। তারা বলেছে, তাদের বিরুদ্ধে যে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে সেটা তাদের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন।
কুয়েতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আহমেদ নাসের আল সাবাহ শুক্রবার বলেছেন, ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে সব পক্ষের মধ্যে। আরব ও উপসাগরীয় অঞ্চলের একতা ও স্থিতিশীলতার পক্ষে জোরালো মত প্রকাশ করেছে সব পক্ষ। এদিকে এক টুইটে কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুর রাহমান আল থানি কুয়েতের বিবৃতিকে স্বাগত জানিয়েছেন।
তিনি কুয়েতের এ উদ্যোগকে একটি অপরিহার্য্য পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। কুয়েতের বিবৃতিতে উৎসাহিত হয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব এ্যান্তোনিও গুতেরেস। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট সব দেশ একত্রিত হয়ে সব সমস্যার সমাধান করে কাজ করবে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভাদ জারিফ টুইটে বলেছেন, তিনি আশা করেন উপসাগরীয় পুনরেকত্রীকরণ এই অঞ্চলের সব মানুষের স্থিতিশীলতা, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে অবদান রাখবে।
সান নিউজ/এসএ