আন্তর্জাতিক ডেস্ক : জেনারেল কাসেম সোলেইমানি ও মোহসেন ফখরিযাদেহ হত্যার মধ্যে দিয়ে মার্কিন-ইরান সম্পর্কের আরও তলানিতে। জেনারেল সোলেইমানি ছিলেন একজন শীর্ষ চৌকস জেনারেল , যিনি ইরানের রণনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
অন্যদিকে, ফখরিযাদেহকে বলা হয় দেশটির পারমাণবিক শক্তির রূপকার। এ দুজনকেই চলতি বছর হত্যা করা হয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে। একজনকে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে ৩ জানুয়ারি, আরেকজনকে খোদ ইরানের মাটিতেই ২৭ নভেম্বর গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
সোলেইমানি হত্যার সময় যুক্তরাষ্ট্র দাবি ছিল আসন্ন আক্রমণ ঠেকাতে তাকে হত্যা করা হয়েছে। যদিও হত্যকাণ্ডটি আন্তর্জাতিক আইনের সম্পূর্ণ লঙ্ঘন। ফখরিযাদেহের হত্যার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রশাসনকে এমন সাফাই গাইতে হয়নি। কেননা এ হত্যাকাণ্ডের দায় ইরান দিয়েছে ইসরায়েলকে।
এক্ষেত্রে ট্রাম্প ইসরায়েলের এক সাংবাদিকের টুইটার শেয়ার দিয়ে বলেছিলেন, বিজ্ঞানী হত্যাকান্ড ইরানের জন্য মানসিক ও পেশাদারি আঘাত। এ দুই হত্যাকাণ্ডে ইরানের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। সামরিক ও পারমাণবিক দুক্ষেত্রেই তেহরানকে বড় মাশুল গুনতে হয়েছে।
ফখরিযাদেহ হত্যাকাণ্ডের কয়েকদিন আগেই খবর বেরিয়েছিল যে, ট্রাম্প ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রীসহ পেন্টাগনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে ট্রাম্প বলেছিলেন, ইরানের নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনায় যেন হামলার উপায় বের করা হয়। এরপর কর্মকর্তারা ট্রাম্পকে বোঝান যে, এমন হামলা হলে বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা রয়েছে।
সোলেইমানি হত্যাকাণ্ডের পর ইরান তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে বাগদাদে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছিল। দাবি করেছিল কয়েকশ মার্কিন সেনা নিহত হয়েছে। জবাবে ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছিল তাদের কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কিন্তু এবার যখন ফখরিযাদেহকে হত্যা করা হলো, ইরান অনেকটাই শান্ত থেকেছে।
সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি থেকে শুরু করে প্রেসিডেন্ট হাসান রোহানি নিন্দা-ঘৃণা প্রকাশ করেছেন, তবে প্রতিশোধের প্রত্যয় ব্যক্ত করলেও তাৎক্ষণিক কোনও পদক্ষেপের কথা তারা বলেননি। বরং এবার তেহরানের ভাষ্য- সময় ও সুযোগমতো এই হত্যার বদলা নেওয়া হবে। ইরানি নেতৃবৃন্দ সুস্পষ্ট করে বলেছেন, হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত ও নির্দেশদাতাকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।
এদিকে পরমাণু বিজ্ঞানী হত্যার পর ইরানের পার্লামেন্টে নতুন আইন পাস করা হয়েছে। এ আইনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে, এক. পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল রসদ ইউরোনিয়ামের মজুদ বাড়ানো এবং জাতিসংঘের পরিদর্শন বন্ধ করা।
২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি থেকে এবার ইরানও বেরিয়ে যাচ্ছে। যদিও এজন্য ইরান চুক্তির সঙ্গে যুক্ত দেশগুলোকে দুই মাসের সময় দিয়েছে। এ দুই মাসের মধ্যে চুক্তিতে না ফিরলে তারা এ ব্যবস্থা নেবে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতা নেওয়ার সময় পর্যন্ত তেহরান অপেক্ষা করবে।
বাইডেনের আমলে ইরান-মার্কিন সম্পর্ক কিছুটা সহজ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু পরমাণু বিজ্ঞানী হত্যার পর সেই সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতার একজন উপদেষ্টা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পূর্ণ যুদ্ধের ঝুঁকি বাড়ছে।
হোসেইন দেহঘান নামক উপদেষ্টা মনে করেন, যিনি ২০২১ সালে ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন। সংবাদ মাধ্যম এসোসিয়েট প্রেসের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, আমরা সংকটকে স্বাগত জানাব না, যুদ্ধকেও না। আবার আমরা যুদ্ধ শুরুও করব না। কিন্তু আলোচনার জন্য আলোচনা করব না। দেহঘান নিজেকে জাতীয়তাবাদী নেতা দাবি করেন। তার চিন্তাভাবনা বেশ স্টেটকাট।
২০১৯ সাল থেকে তিনি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছেন। তার কথায় ইরান কোনও পরিস্থিতিতেই কারও সঙ্গে আপস করবে না। এ কারণে তিনি মনে করেন, সীমিত পরিসরের সংঘাত যে কোনও সময় পূর্ণমাত্রার যুদ্ধে রূপ নিতে পারে।
সান নিউজ/এসএ