আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নিজের ছেলেকে ৩০ বছর ধরে একটি ফ্ল্যাটে বন্দী করে রেখেছিলেন এক সুইডিশ মা। রাজধানী স্টকহোমের উপকণ্ঠে হ্যানিঞ্জ এলাকার এ ঘটনায় ওই নারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। উদ্ধার ছেলের শরীরে ক্ষতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এ ছাড়া তার দাঁত ছিল না। যাকে উদ্ধার করা হয়েছে, তার বয়স বর্তমানে ৪০।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, রোববার (২৯ নভেম্বর) ওই ব্যক্তির এক আত্মীয়র কল্যাণে তিনি উদ্ধার হন। তার মা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তার সন্ধান পাওয়া যায়। খুবই নোংরা ও বদ্ধ পরিবেশে লোকটিকে আটকে রাখা হয়েছিল। তিনি আহত ছিলেন। তার পায়ে ঘা হয়ে গিয়েছিল। হাসপাতালে ভর্তির পর তার অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসকরা। তাকে এখনো চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
হ্যানিঞ্জের ওই ফ্ল্যাটটি তদন্তের স্বার্থে বন্ধ করে দিয়েছি পুলিশ। মূল ঘটনা উদঘাটনে তদন্ত চলছে, যে কারণে ভুক্তভোগী ও তার মায়ের নাম প্রকাশ করা হয়নি। সাক্ষ্য-প্রমাণ খুঁজছে পুলিশ।
যেভাবে উদ্ধার হন ওই ব্যক্তি-
বিবিসি জানিয়েছে, বন্দী ব্যক্তির মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ খবর পেয়ে রোববার সন্ধ্যায় তাদের এক আত্মীয় তাদের বাসায় আসেন। কিন্তু ওই নারীকে ততক্ষণে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। তাদের বাড়ি ফাঁকা ছিল। কিন্তু ওই আত্মীয় ভুক্তভোগীদের বাড়ি দিয়ে ফ্ল্যাটের দরজা খোলেন। ভেতরটি অন্ধকার ও ধুলায় ঢাকা ছিল। মল-মূত্রের প্রচণ্ড বাজে গন্ধ ছড়াচ্ছিল। খটকা লাগায় তিনি ‘হ্যালো’ বলে ডাক দেন।
ডাক দিলেও কোনো শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে তিনি স্তূপ হয়ে থাকা জিনিসপত্রের মাঝ দিয়ে ঘরের ভেতরে ঢোকেন। রান্নাঘরে শব্দ শুনতে পেয়ে তিনি দেখেন অন্ধকারে এক কোনায় একটা লোক বসা। বাইরে থেকে রাস্তার সড়ক বাতির আলোয় তাকে দেখা যাচ্ছিল। তার পা থেকে হাঁটু পর্যন্ত ঘা হয়ে গেছে।
সুইডেনের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের কাছে ওই নারী বলেন, ‘আমি সামনে যাওয়া মাত্র ছেলেটি উঠে দাঁড়ায়, আমার নাম ধরে বারবার ডাকতে থাকে। ওর প্রায় সব দাঁত পড়ে গেছে এবং তার কথা ছিল অস্পষ্ট। যে কোনোভাবেই হোক, এত বছর পরেও ও আমাকে চিনতে পেরেছে এবং ভয়ও পাচ্ছিল না। খবর দেওয়া হলে পুলিশ সদস্যরা এসে তাকে হাসপাতলে নেয়। পরে হাসপাতালেই ছেলেটির মাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।’
স্টকহোমের একজন সরকারি কৌসুলির বরাত দিয়ে বিবিসি আরও জানিয়েছে, উদ্ধার ব্যক্তির মা তাকে আগলে রাখতে চাইতেন। কারণ, তিনি আগে একটি সন্তান হারিয়েছিলেন। তিনি তার মৃত সন্তানকে ফিরে পেতে চাইছিলেন। আগের সন্তানের নামেই আটকে রাখা সন্তানের নাম রেখেছিলেন তিনি। ১১ বা ১২ বছর বয়সে স্কুল থেকে নাম কাটিয়ে তাকে বাড়ি নিয়ে আসেন। ছেলের ব্যাপারে সবাইকে সতর্কও করে দিয়েছিলেন তিনি।
সান নিউজ/এম/এস