ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:
রোধ করা যাচ্ছে না করোনার গতিকে। ভাইরাসটির সংক্রমণ আরো প্রকট হয়েছে ইউরোপে। কোয়ারেন্টিন ঘোষণা করেও থামানো যাচ্ছে না মৃত্যু, সংক্রমণ। ইতালির পর এবার স্পেন ও ফ্রান্স ঘোষণা করা হয়ছে জরুরি বিধিনিষেধ। অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্য, ওষুধ কেনার মতো কাজ ছাড়া ঘর থেকে লোকজনের বের হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে স্পেন ও ফ্রান্স।
ইতালিতে মারা গেছেন কমপক্ষে ১৪৪০ জন। ফলে সেখানে গত সোমবার থেকে শুরু হয়েছে লকডাউন। স্পেনে করোনায় ১৯১ জন এবং ফ্রান্সে ৯১ জন মারা যাওয়ার পর এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। বিবিসি বলছে, ইউরোপে ইতালির পর সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা স্পেনের।
এদিকে ফ্রান্সে সব ক্যাফে, রেস্তোরাঁ, সিনেমা হল, দোকানপাট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় ইউরোপ এখন করোনা ভাইরাসের এপিসেন্টারে পরিণত হয়েছে বলে জানাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
ওদিকে যুক্তরাজ্যে গত ২৪ ঘন্টায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১-এ। সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে চিঠি লিখেছেন কমপক্ষে ২০০ বিজ্ঞানী। আজ রোববার থেকে ইসরাইলে আংশিক অর্থনৈতিক ‘শাটডাউন’ কার্যকর হবে। সেখানে শপিং সেন্টার এবং রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকবে। নর্থ হ্যাম্পটনে থাকা বাংলাদেশি প্রবাসী অনিলা ইশতি সেখানকার ভৌতিক পরিবেশের কথা তুলে ধরেন সান নিউজের কাছে। তিনি বলেন, মানুষ এখানকার দোকানগুলোতে কোন খাবারই পাচ্ছে না। টয়লেট টিস্যু, সাবান, হ্যান্ডওয়াশ থেকে শুরু করে খাবার কিংবা কোন ধরণের সব্জিও পাওয়া যাচ্ছে না সহজে। শহরের পরিবেশকে তিনি রীতিমতো যুদ্ধাবস্থার সঙ্গে তুলনা করেন।
ওদিকে শনিবার স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ এবং তার স্ত্রী বেগোনা গোমেজের দেহে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পাওয়া গেছে। তারা দু’জনেই মাদ্রিদে লা মনকেøায়াতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে অবস্থান করছেন। দেশটিতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কমপক্ষে ৬৩০০ মানুষ। শুক্রবার সন্ধ্যা নাগাদ নতুন করে ১৮০০ মানুষের দেহে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়। ফলে সেখানে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী স্প্যানিশদেরকে ঘরের বাইরে বের হতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। শুধুমাত্র অত্যাবশ্যকীয় জিনিসপত্র আর ওষুধ কিনতে হলে কেউ বাইরে যেতে পারবেন। সব সাংস্কৃতিক কেন্দ্র আর স্পোর্টস ভেন্যু রয়েছে বন্ধ।
হোম ডেলিভারি দেয়ার অনুমতি রয়েছে রেস্তোরাঁ ও ক্যাফে কর্তৃপক্ষগুলোর। ব্যাংক ও পেট্রোল স্টেশনের মতো জরুরি সেবাখাতগুলো খোলা থাকবে। তবে স্কুল, কলেজ বন্ধ সারা দেশে। এই সঙ্কটের সময়ে আদর্শগত মতপার্থক্যকে ভুলে নাগরিকদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী সানচেজ। এখানে জরুরি অবস্থা অব্যাহত থাকবে দু’সপ্তাহ পর্যন্ত। ১৯৭৫ সালে গণতন্ত্র প্রবর্তনের পর এটাই স্পেনে দ্বিতীয় জরুরি অবস্থা। এর আগে প্রথম জরুরি অবস্থা ছিল ২০১০ সালে ট্র্যাফিক কন্ট্রোলারদের ধর্মঘটের জন্য।
ফ্রান্সের জনসংখ্যা ৬ কোটি ৩৫ লাখ। সেখানে কমপক্ষে ৪৪০০ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন করোনা ভাইরাসে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী এডোয়ার্ডো ফিলিপ্পে বলেছেন, ফ্রান্সে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট বা আইসিইউতে রোগির সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। ফ্রান্সেও রেস্তোরাঁ, ক্যাফে, সিনেমা, নাইটক্লাব বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে শনিবার থেকে।