আর্ন্তজাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মন্ত্রিপরিষদে কাজ করার আগ্রহের কথা উড়িয়ে দিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তিনি কৌতুক করে বলেছেন, এই কাজ নিলে মিশেল ওবামা আমাকে ছেড়ে যেতে পারে।
তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তিনি কি তার সময়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রেসিডেন্সির অধীনে কাজ করার কথা বিবেচনা করছেন? বারাক ওবামা সব সময়ই প্রাঞ্জল। তিনি মজা করতে ভালবাসেন। সেই ভঙ্গিতেই বলে বসলেন, এমন কিছু আছে যা আমি করবো না। কারণ, তা করলে মিশেল আমাকে ছেড়ে যেতে পারে। সে হয়তো বলবে, কি? তুমি কি করছো? সাংবাদিক গেইল কিংয়ের সঙ্গে ওবামা সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ডেইলি মেইল।
ওবামার লেখা নতুন স্মৃতিকথা ‘এ প্রমিজড ল্যান্ড’ প্রকাশনা উপলক্ষে ওই সাক্ষাতকার নেয়া হয়। বইটি প্রকাশের আগেই কয়েক কোটি ডলারের আগাম অর্ডার হয়েছে। গেইল কিং ওবামার কাছে জানতে চান, তিনি কি তার পুরনো রানিংমেটের সঙ্গে হাত মেলাবেন? জবাবে বারাক ওবামা বলেন, ‘আমার পরামর্শ তার প্রয়োজন হবে না। আমি যেভাবে পারি তাকে সাহায্য করবো। আমি আকস্মিকভাবে হোয়াইট হাউজের স্টাফ বা অন্য কোনো কাজ করতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছি না। উল্লেখ্য, বারাক ওবামা সময়ে ভাল পদে ছিলেন সুসান রাইস এবং মিশেলে ফ্লাওয়ানয়। তারা বাইডেন শিবিরে যোগ দিতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে।
এর আগে ওবামা সাক্ষাতকারে বলেছেন, তিনি হোয়াইট হাউজে দু’দফায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ সময়ে তার স্ত্রী মিশেল ওবামা যে কি পরিমাণ আত্মত্যাগ করেছেন সে বিষয়ে তিনি অবহিত। তিনি তাকে আবারো সেই যাতনায় ফেলতে চান না।
ওবামার ভাষায়- তার সেই আত্মত্যাগ আমার মনে আছে। তবে ভাল খবর হলো, এতে সে যে কষ্ট পেয়েছে, তা পরক্ষণেই ভুলে গিয়েছে। আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছে। এখানেই শেষ। এখনও সে মাঝে মাঝে আমাকে সেইসব দিনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এসব নিয়েই ওবামা লিখেছেন তার ‘এ প্রমিজড ল্যান্ড’। তিনি লিখেছেন, হোয়াইট হাউজে একটানা কাজ করার কারণে ফার্স্টলেডি কত মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করতেন, কতটা একাকীত্ব বোধ করতেন তা আমি জানি।
বারাক ওবামা বর্ণনা করেছেন কিভাবে হোয়াইট হাউজে তার ও মিশেল ওবামার দিন কাটছিল। তিনি জানিয়েছেন, রাতের খাবার শেষ হওয়ার পর তারা দু’জনে দু’দিকে যেতেন। বারাক ওবামা যেতেন ট্রিটি রুমে। সেখানে তিনি অক্লান্ত কাজ করতেন। নানা রকম বিষয়ে পড়াশোনা করতে হতো।
অন্যদিকে মিশেল যেতেন বিছানায় ঘুমাতে। ওবামার ভাষায়- (কাজ শেষে ফিরে এসে) ‘আমি পোশাক পরিবর্তন করতাম। দাঁত ব্রাশ করতাম। তারপর কম্বলের ভিতরে ঢুকে যেতাম খুব সতর্কতার সঙ্গে, যাতে সে (মিশেল) জেগে না যায়। হোয়াইট হাউজের দিনগুলোতে আমার খুব গাঢ় ঘুম হতো। খুব কমই এতে বিঘœ ঘটেছে।
তবে এমনও রাত গেছে যখন অন্ধকারে মিশেলের পাশে শুয়ে আছি আর ভাবছি ওইসব দিনের কথা, যখন আমাদের মধ্যে সবকিছু থাকতো স্বাভাবিক। তখন তার (মিশেল) মুখে থাকতো একটানা হাসি। আমাদের ভালবাসায় কমতি ছিল না। সঙ্গে সঙ্গে আমার হৃদয় আমার সেই চিন্তায় ছেদ ঘটাতো। মনে হতো, সেইসব দিন আর ফিরে আসবে না।
বইটির কিছু অংশ প্রকাশিত হয়েছে লন্ডনের দ্য সানডে টাইমসে।
তাতে মিশেল ওবামার ফার্স্টলেডি পদবীকে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ওবামা। মিশেল হোয়াইট হাউজকে বানিয়েছিলেন ‘পিপলস হাউজ’ বা জনগণের হাউজ। সেখানে তিনি সঙ্গীতজ্ঞ, সেনাবাহিনীর পরিবারকে আমন্ত্রণ জানাতেন। শিশুদের ডাকতেন কনসার্টে। সিনেমা দেখা হতো রাতে। তাদের বাসভবনে থাকতো স্টিভ ওয়ান্ডার, জেনিফার লোপেজ, জাস্টিন চিম্বারলেক, বি বি কিং, বব ডিলন এবং পল ম্যাককার্টনির সুর।
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪তম প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, এসব কনসার্ট মিশেল ওবামা যেমন পছন্দ করতেন, তেমনি আমিও। এসব অনুষ্ঠানে যাদেরকে আপ্যায়ন করা হতো তাদের সঙ্গে মিশেল হোস্ট হিসেবে আচরণ করতেন না। তিনি তাদের সঙ্গে অতিথির মতো মিশে যেতেন।
সান নিউজ/পিডিকে/এস