আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
চীনে যে গতিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়েছে, সারা বিশ্বে তা ১৭ গুণ বেশি হারে ছড়াবে। এমন ভয়ঙ্কর তথ্য দিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)।সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে সংস্থাটি এ তথ্য তুলে ধরে।
দিন দিন ভয়াবহ থেকে ক্রমশ অতি ভয়াবহ হয়ে উঠছে করোনাভাইরাস। চীনে ইতিমধ্যে তিন হাজার ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় এক লাখ।
পরিস্থিতির ভয়াবহতা প্রসঙ্গে হুর ডিরেক্টর জেনারেল টেড্রস অ্যাডানম গেব্রেয়েসুস বলেন, এটি আত্মসমর্পণের সময় নয়। কোনো অজুহাতের সময় নয়। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই কঠিন পরিস্থিতির বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে। মরণব্যধি এই ভাইরাসকে যেভাবেই হোক ঠেকাতে হবে।
মৃত্যুর সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। চীনে নতুন করে ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আমেরিকাতেও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। সেখানে এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের। দক্ষিণ কোরিয়ায় মৃতের সংখ্যা ৪২।
মাত্র চারদিনের ব্যবধানে ভারতে পাঁচগুণ বেড়েছে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। গত মঙ্গলবারও দেশটিতে মাত্র ছয়জনের শরীরে নভেল করোনাভাইরাস ছিল। শুক্রবার নাগাদ সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০ জনে। হঠাৎ করেই ভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ভারতজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। পরিস্থিতি মোকাবিলায় অতিজরুরি না হলে ভারতীয়দের বিদেশ ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
অন্যদিকে ইরানে মৃতের সংখ্যা পৌঁছে গেছে ১০৭ এ। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে। ইতিমধ্যে সেখানে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় সাড়ে তিন হাজার।
ইউরোপের মধ্যে প্রথম করোনা হানা দেয় ইতালিতে। সেখানে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪৮ জনে। চীনের পর ইতালিতেই করোনা ভাইরাসে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ইতালি সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইতালির ২২টি প্রদেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়েছে। করোনা ভাইরাসের কারণে দেশটির সকল স্কুল, কলেজ ইতিমধ্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ।
এদিকে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস পরীক্ষার উপকরণ(কিট) সংকটে ভুগছে যুক্তরাষ্ট্র। বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে এমনটি বলা হয়েছে।
এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেন, এই সপ্তাহের মধ্যে এক লাখ করোনা ভাইরাস পরীক্ষার উপকরণ সরবরাহ করার লক্ষ্য ট্রাম্প প্রশাসন পূরণ করতে পারবেনা। যুক্তরাষ্ট্রের ২০টি রাজ্যে এখন পর্যন্ত ২০০ করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে।
সম্প্রতি আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের এক জার্নাল প্রকাশ করেছে ভয়াবহ তথ্য। তারা বলছে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের কাছ থেকে খুব সহজেই অন্যের শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে। আর এ কারণেই ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল সেন্টার ফর ইনফেকসিয়াস ডিজিস (এনসিআইডি) এবং ডিএসও ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিজ গবেষণা করে একই তথ্য পেয়েছে। প্রতিষ্ঠান দুটির প্রতিবেদনে বলা হয় করোনা ভাইরাসে আক্রান্তরা চারপাশকে দ্রুতই ব্যাপকভাবে দূষিত করছেন।
প্রতিষ্ঠান দুটি গবেষণার জন্য করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত তিনজন রোগীর ঘর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে। যারা ২৪ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কোয়ারেনটাইনে ছিলেন। ১৪ দিন কোয়ারেনটাইনে থাকা অবস্থায় পাঁচদিন তাদের বসবাসের ঘরের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরমধ্যে পরিষ্কার করার পর দু'জনের ঘর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। আর তৃতীয়জনের ঘর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয় নিয়মিত পরিষ্কারের আগে।
গবেষণায় দেখা গেছে, পরিষ্কার না করা ঘরটিতে দূষণের মাত্রা বেশি। পরিষ্কার করার আগে তৃতীয় রোগীর ঘরের ১৫ স্থানের মধ্যে ১৩ জায়গায় করোনা ভাইরাসের নমুনা পাওয়া গেছে। যা রিতিমতো ভয়ঙ্কর হিসেবে বলছেন গবেষকরা।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৯৫ হাজার ছাড়িয়েছে। এছাড়া পুরো বিশ্বে মৃতের সংখ্যা তিন হাজারেরও বেশি। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি, কাশির মত সমস্যা দেখা দেয় ।
সান নিউজ/সালি