সান ডেস্ক: চীনে অনলাইনে চলছে বিকল্প শিক্ষা কার্যক্রম। করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ায় দেশটিতে জনজীবন হয়ে ওঠে স্থবির। ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে এর প্রভাব এসে পড়ে শিক্ষাজীবনেও। বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই তাদের কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করতে বাধ্য হয়। তবে শিক্ষার্থীদের ক্ষতির কথা চিন্তা করে অনির্দিষ্ট সময়ের ছুটির ঘোষণার পরও গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে বিকল্প শিক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে অনলাইনভিত্তিক পড়াশুনা।
চীনে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাই তিন হাজারেরও বেশি। জানা গেছে, এসব বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রায় সব স্কুল-কলেজে চলছে অনলাইনে পড়াশুনা। দেশ ও বিদেশের শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই অংশ নিচ্ছে তাদের বিভিন্ন কোর্সের ক্লাসগুলোতে।
জানুয়ারির শেষদিকেই চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলি ব্যবহার করে চীনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পাঠদান অব্যাহত রাখবে। স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পুনরায় সেমিস্টার কার্যক্রম শুরু না হওয়া পর্যন্ত এমন শিক্ষাদান পদ্ধতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় তারা।
চীনের জিয়াংসী প্রদেশের জিউজিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব বিজনেসের সহযোগি অধ্যাপক, বাংলাদেশি নাগরিক ড. আতিকুর রহমান সান নিউজকে জানান, অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রমের বিষয়টি যেহেতু চীনের নাগরিকদের জন্য নতুন কিছু নয়, তাই এই পদ্ধতিতে পড়াশুনার বিষয়টিতে এখানকার কারোর জন্যই কোন সমস্যার সৃষ্টি করছে না।
তিনি বলেন, তার বিশ্ববিদ্যালয়েই প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। দেশটির সরকারের দেয়া একটি বিশেষ এ্যাপসের মাধ্যমে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে গেলো ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে। এবং এখানকার সব শিক্ষার্থীই এই এ্যাপসে রেজিস্টেশন করেছে।
চীনের বেইজিং নরমাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাসে তাদের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কোন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নোটিশ ছাড়া ক্যাম্পাসে আসতে নিষেধ করেছিল কর্তৃপক্ষ। তাই আমরা যারা শীতকালীন ছুটি কাটাতে নিজ নিজ দেশে চলে এসেছি তাদের মধ্যে উৎকন্ঠা ছিল কিভাবে সেমিস্টার শেষ করব। তবে আমাদের সব আশংকাকে দূর করে দিয়ে অনলাইনে ক্লাস নেয়ার ঘোষণায় সস্তি ফিরে এসেছে।
শিক্ষকরা পাঠদানে লাইভ স্ট্রিমিং ক্লাস চালানোর জন্য আলিবাবা’র ডিংটক বা ওয়েইশি ব্যবহার করছেন। চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি জাতীয় ইন্টারনেট ক্লাউড ক্লাসরুম চালু করার পরিকল্পনা করেছে, যেখানে এটির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠদানের কার্যক্রমকে আরো সহজভাবে উপস্থাপন করা হবে।
সাউথ চায়না মর্ণিং পোষ্ট পত্রিকায় জু ইউটিং নামে এক চীনা শিক্ষার্থী জানায়, “নববর্ষের ছুটি শেষ হলেও করোভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে স্কুল সেমেস্টার কার্যক্রম পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অনলাইনে শুধুমাত্র বাড়িতে বসেই আমরা আমাদের পাঠদানে অংশ নিতে পারছি। এটি একটি অসাধারণ ব্যাপার।
তবে প্রাণঘাতি করোনা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এই মুহুর্তে চীনের সবকিছুতে স্বাভাবিকতা ফির আসতে শুরু করেছে ধীরে ধীরে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও চলতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে খুলে যেতে পারে বলে জানান জিউজিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগি অধ্যাপক ড. আতিক।