আন্তর্জাতিক ডেস্ক : অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় গত মঙ্গলবার ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে বাংলাদেশি দ্বৈত নাগরিকও রয়েছে বলে জানা গেছে। গ্রেফতারদের বয়স ১৮ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে। ১৮টি বাড়ি তল্লাশি করে তাদের গ্রেফতার করা হয়। রয়টার্সসহ অস্ট্রিয়ার গণমাধ্যমগুলো এসব তথ্য জানিয়েছে।
গত সোমবার এক বন্দুকধারী ভিয়েনায় গুলি চালিয়ে চারজনকে হত্যা করে। এ হামলার দায় স্বীকার করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) তাদের পক্ষ থেকে দায় স্বীকার করে টেলিগ্রামে ছবিসহ একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। হামলার ঘটনায় গ্রেফতারদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্তগুলো বিশ্লেষণ করা হচ্ছে বলে সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়েছে।
দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কার্ল নেহামার জানান, গ্রেফতার প্রায় সবারই অভিবাসনের ইতিহাস আছে। মোবাইল ফোনের ফুটেজ দেখে নিশ্চিত হওয়া যায়, সোমবার ভিয়েনায় বন্দুকধারী একাই ওই চারজনকে হত্যা করে। তবে এ নিয়ে অস্ট্রিয়ার গোয়েন্দা বাহিনী নানা বিভ্রান্তির মধ্যে ছিলেন বলেও জানান তিনি।
ভিয়েনার পুলিশ প্রধান গেরহার্ড পুয়ার্স্টেল জানান, গ্রেফতারদের মধ্যে কয়েকজনের বাংলাদেশ, উত্তর ম্যাসেডোনিয়া, তুরস্ক বা রাশিয়ার দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে। বন্দুকধারী একাই হামলা চালিয়েছে বলে জানা যায়। তবে হামলার এই ঘটনা নিয়ে অস্ট্রিয়া ও স্লোভাকিয়ার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য নিয়ে বড় ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। তাদের সঙ্গে কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের যোগসূত্র আছে কি-না, সে বিষয়ে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
গত জুলাইয়ে স্লোভাকিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা এক চিঠির মাধ্যমে অস্ট্রিয়া কর্তৃপক্ষকে জানায়, ২১ জুলাই দুজন ব্যক্তি, সম্ভবত আরব, তুর্কি বা চেচেন নাগরিক, তারা ব্রাতিস্লাভার অস্ত্রের দোকানে যায়। সেখান থেকে তারা একে-ফর্টি সেভেনের সরঞ্জাম কেনে। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ওই দুই ব্যক্তি অস্ট্রিয়ার নম্বর প্লেটযুক্ত বিএমডব্লিউ গাড়িতে করে আসে। এসব তথ্য ২৩ জুলাই ইউরোপোলের মাধ্যমে অস্ট্রিয়াকে জানানো হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কার্ল নেহামার বলেন, পরবর্তী পর্যায়ে তাদের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে কিছু বড় ধরনের ভুল হয়ে যায়। সেই ত্রুটিগুলোর বিষয়ে জানতে একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের আহ্বান জানানো হয়েছে।
ওই চিঠি অনুযায়ী, গত ১০ সেপ্টেম্বর ইউরোপীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ইউরোপোলের মাধ্যমে অস্ট্রিয়ান কর্তৃপক্ষ স্লোভাকিয়াকে জানায়, অস্ট্রিয়ান পুলিশ দুজনের মধ্যে একজনের পরিচয় শনাক্ত করেছে। ওই দুই ব্যক্তি অস্ট্রিয়ান পুলিশের কাছে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত হিসেবে আগে থেকেই পরিচিত। এর মধ্যে একজনকে ২২ মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছিল।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, গোলাবারুদ কেনার চেষ্টায় ব্যবহৃত গাড়িটি অন্য ২১ বছর বয়সী আরেক ব্যক্তির মায়ের নামে নিবন্ধিত ছিল। উগ্রপন্থী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে আগেই মামলা হয়েছিল। ভিয়েনায় হামলার পরে তাকে গ্রেফতারের জন্য আদালতে আবেদনও জানানো হয়।
অস্ট্রিয়ার জননিরাপত্তা বিভাগের মহাপরিচালক ফ্রানজ রুফ বলেন, স্লোভাকিয়া থেকে এই তথ্য পাওয়ার পর অস্ট্রিয়ার কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক পর্যায়ের গোয়েন্দা সংস্থা তথ্যগুলো প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই করে ব্রাতিস্লাভাতে আবারও প্রশ্ন পাঠায়।
ওই বন্দুকধারী একইসঙ্গে অস্ট্রিয়া ও উত্তর ম্যাসেডোনিয়ার নাগরিক বলে জানা গেছে। তিনি গুলি চালানোর কয়েক মিনিটের মধ্যেই পুলিশ তাকে গুলি করে হত্যা করে। ওই তরুণের জন্ম ভিয়েনায়। তিনি সেখানেই বেড়ে ওঠেন। ইতোমধ্যে সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটে যোগদানের চেষ্টা করার জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন এবং কারাগারে ছিলেন তিনি।
২০১৮ সালের শেষের দিকে কর্তৃপক্ষ জানতো, অস্ট্রিয়ার ৩২০ জন ব্যক্তি সিরিয়া ও ইরাকের সন্ত্রাসী কাজে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিল বা অংশ নিতে চেয়েছিল। এর মধ্যে প্রায় ৫৮ জন এই অঞ্চলে মারা গেছেন এবং ৯৩ জন অস্ট্রিয়ায় ফিরেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আরও ৬২ জনকে দেশ ছাড়তে বাধা দেয়া হয়েছিল।
২০ হাজারেরও বেশি মানুষ তাদের মোবাইল ফোনের ভিডিও কর্তৃপক্ষকে দিয়েছে। ওইসব ভিডিও বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ঘটনাস্থলে কেবল একজন বন্দুকধারী ছিল। সুইজারল্যান্ডও এই হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে দুজনকে গ্রেফতার করেছে।
দেশটির আইনমন্ত্রী বলেন, গ্রেফতার দুজনের সঙ্গে ওই বন্দুকধারীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। অস্ট্রিয়ার সাথে সুইজারল্যান্ড এবং অন্য একটি দেশের সাথে যোগাযোগ ছিল। পুরো তদন্তকালে তিনি তাদের শনাক্ত করার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
গত মঙ্গলবার উত্তর ম্যাসেডোনিয়া জানিয়ে, তিনজন কোনো না কোনোভাবে এই হামলায় জড়িত ছিল এবং তাদের সবার অস্ট্রিয়ান ও উত্তর ম্যাসেডোনিয়ার দ্বৈত নাগরিকত্ব আছে। সূত্র : বিবিসি।
সান নিউজ/এসএম