নিজস্ব প্রতিবেদক:
অপ্রতিরোধ্য প্রানঘাতি করোনাভাইরাস বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে দেশ থেকে দেশে। ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থল চীনে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা আগের তুলনায় কমলেও করোনা দ্রুত গতিতে আক্রমন চালাচ্ছে অন্য দেশগুলোতে। এরই মধ্যে ইরান, ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়ায় ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
সারাবিশ্বেই এ ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কায় সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। কেবল শুক্রবারই ইউরোপ, আমেরিকা ও আফ্রিকার ছয়টি দেশে প্রথমবারের মতো এ ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হওয়ার পর এ ঘোষণা দিয়েছে হু।
শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান ড. টেড্রস অ্যাডহানম গেব্রেইয়েসুস বলেছেন, আমরা এ ভাইরাসটিকে খাটো করে দেখছি না। এজন্যই আমরা বলছি, এ ভাইরাসটি বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি খুবই বেশি। আমরা সতর্কতার মাত্রা ‘উচ্চ’ থেকে ‘সর্বোচ্চ’ ধাপে নিয়ে গেছি।
এদিকে চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন জানায়, শুক্রবার দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৪৭ জনের। এর মধ্যে দুজন বাদে সবাই হুবেই প্রদেশের। এখন পর্যন্ত দেশটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৮৩৫ জনের। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৪২৭ জন, এর মধ্যে প্রায় সবই হুবেই প্রদেশের। দেশটিতে এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৯ হাজার ২৫১ জন।
এরইমধ্যে বিশ্বের অন্তত ৫৪টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এ প্রাণঘাতি ভাইরাস। চীনের মূল ভূখণ্ডের বাইরেও কোভিড-১৯ নিয়ে মারা গেছেন অন্তত ৮৭ জন।
সতর্কতার বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হেলথ ইমার্জেন্সি বিভাগের পরিচালক ডা. মাইক রায়ান বলেন, কোনো রোগের ঝুঁকি দেখলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যত ধরনের সতর্কতা জারি করতে পারে, এবারের মাত্রা তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ।
জানা যায়, লাতিন আমেরিকার দেশ মেক্সিকো, আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়া, ইউরোপের ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস ও লিথুয়ানিয়ায় প্রথমবারের মত করোনাভাইরাস আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর সবগুলো ঘটনার সঙ্গেই পাওয়া গেছে ইতালির যোগাযোগ।
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ইতালির অবস্থাই সবচেয়ে খারাপ। সেখানে ৬৫০ জনের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। সেখানে ২ হাজার ৩৩৭ জনের মধ্যে সংক্রমণ ঘটেছে, মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের।
তবে চীনের বাইরে মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ইরানে। সেখানে আক্রান্ত হয়েছে ৩৮৮ জন, প্রাণ গেছে ৩৪ জনের। আক্রান্তদের মধ্যে ইরানের নারী ও পরিবার বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাসুমে এবতেকারও আছেন বলে দেশটির গণমাধ্যমগুলো নিশ্চিত করেছে।
বিবিসি শুক্রবার রাতে হাসপাতাল সূত্রের বরাত দিয়ে ইরানে অন্তত ২১০ জনের মৃত্যুর খবর দিলেও দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তা অস্বীকার করেছেন।
এর বাইরে জাপানে ১১ জন, হংকং ও ফ্রান্সে দুজন করে এবং ফিলিপিন্স ও তাইওয়ানে একজন করে মানুষের মৃত্যু হয়েছে। চীনের বাইরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে এখন মোট আক্রান্তের এক তৃতীয়াংশে দাঁড়িয়েছে।