নিউজ ডেস্ক:
রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে গিয়ে ধর্মীয় বিভাজনে দেশকে দু-ভাগ করে ফেলছে ভারতের হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকার। নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের মধ্য দিয়ে হিন্দু জনগোষ্ঠির একাংশকে করে তুলেছে উন্মত্ত। ঝাপিয়ে পড়ছে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর। সিএএ আইনকে ঘিরে গত রবিবার থেকে দিল্লিতে শুরু হওয়া সংঘর্ষ রূপ নেয় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায়। এরই মধ্যে খবর পাওয়া গেছে ৪০ জন নিহত হওয়ার। শতশত ব্যক্তি হাসপাতালের বিছানায়। এই সংঘর্ষের আবহে ভারতে হিন্দুত্ববাদ যখন কাঠগড়ায় উঠেছে, তখন নিজে একজন হিন্দু হয়েও মনুষ্যধর্ম পালন করতে গিয়ে এখন মৃত্যূর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন প্রেমকান্ত। শুধু প্রেমকান্তই নন, ধর্মীয় উন্মাদনার শেকল ভেঙে কেবল মানবতার হাতকে এগিয়ে দিচ্ছেন আরও অনেকে।
একের পর এক যখন আসছে মৃত্যুর খবর, ধর্মীয় উন্মাদনায় টালমাটাল পুরো দিল্লি, তখনই মানবতার দূত হয়ে উঠলেন উত্তর-পূর্ব দিল্লির শিববিহার এলাকা প্রেমকান্ত বাঘেল। দীর্ঘদিন ধরে হিন্দু এবং মুসলমানরা অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছিলেন। জানা গত বুধবার রাতে নাগরিকত্ব সংশোধন আইনপন্থী হিন্দু মানুষেরা দল বেঁধে আক্রমন শুরু করে ওই এলাকার মুসলিম মহল্লাগুলোয়। আগুন দেয়া হতে থাকে একের পর এক বাড়িতে। প্রাণভয়ে পালাচ্ছিলেন মুসলিমরা। সেখানেই বাড়ি প্রেমকান্ত বাঘেলের। তাঁর প্রতিবেশী মুসলিম বাড়িগুলোতে পেট্রোল বোমা ছুড়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু কেবল অন্য ধর্মের হওয়ার কারণে চোখের সামনে কারও প্রাণ যাবে, তা মানতে পারেননি প্রেম।
তাই নিজের জীবনকে তুচ্ছজ্ঞান করে হামলাকারীদের চোখের সামনে প্রতিবেশীদের প্রাণ বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। জ্বলন্ত ঘরের ভিতরে আটকা পড়ে থাকা একে একে ৬ জন অগ্নিদগ্ধ মানুষকে উদ্ধার করে আনেন ঘরের বাইরে। উগ্রপন্থী আক্রমণকারীদের রক্তচক্ষুকে ভয় না পেয়ে দগ্ধদের হাসপাতালেও পাঠানোর ব্যবস্থার উদ্যোগ নেন প্রেমকান্ত। কিন্তু এই কাজ করতে গিয়ে তাঁর নিজের শরীরের ৭০ শতাংশই পুড়ে যায় আগুনে।
ট্রাজেডির শেষ এখানেই নয়। প্রেমকে হাসপাতালে নিতে প্রতিবেশীরা একটি অ্যাম্বুলেন্স ডাকেন। কিন্তু ভয়েই হোক বা যে কোনও কারণেই হোক, সেই অ্যাম্বুল্যান্স তাঁকে হাসপাতালে পৌঁছে দিতে রাজি হয়নি সে রাতে। সারা রাত পোড়া শরীরে কষ্ট পেতে থাকেন প্রেম। পরিবারের সদস্যরা আশা ছেড়ে দেন তাঁর বেঁচে থাকার। সকালে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় জিটিবি হাসপাতালে। এখনও বেঁচে আছেন তিনি, কিন্তু অবস্থা সঙ্কটাপন্ন।
গুরুতর আহত অবস্থাতেই সংবাদমাধ্যমকে প্রেমকান্ত বাঘেল বলেন, “সময়টা খুব খারাপ। তবে সকলেই যে এখানে আক্রমণাত্মক, তা নয়। এই হিংসার মধ্যেও আমার মতো আরও অনেকেই ছিলেন যারা সহমর্মিতা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। সিএএ নিয়ে আন্দোলনের সময় আমিও সেখানে সক্রিয় ছিলাম। কিন্তু যখন সেটিতে সাম্প্রদায়িক রং লাগতে শুরু করে, তখন আমি সরে আসি।”
অন্য দিকে দিল্লির শিখ সম্প্রদায়ও পাশে দাঁড়িয়েছে আক্রমনের শিকার মানুষদের পাশে।তাদেরকে আশ্রয় দিতে গুরুদোয়ারার দরজা খুলে দেয়া হয়েছে ২৪ ঘন্টার জন্য। অশোকনগরের একাধিক এলাকায়ও ক্ষতিগ্রস্ত বেশ কয়েকটি মুসলিম পরিবারকে নিজেদের বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন হিন্দুরা। আবার বুধবার হাতে হাত রেখে মানবশৃঙ্খল করে চাঁদবাগের একটি মন্দির ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেছেন সেখানকার মুসলিমরাও।