আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস বিশ্বজুড়ে মহামারির চেহারা নিতে চলেছে। বিভিন্ন দেশে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় শঙ্কিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বৃহস্পতিবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তা ডক্টর টেড্রোস ঘেব্রেইয়েসুস এমনটি জানিয়েছেন।
এখন পর্যন্ত বিশ্বের ৫০ টি দেশের প্রায় ৮০ হাজারের উপরে মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এই ভাইরাসে মারা গেছেন ২ হাজার ৮শ জনের বেশি মানুষ।
এই বিষয়ে ডক্টর টেড্রোস ঘেব্রেইয়েসুস বলেন, করোনা ভাইরাস বিশ্বব্যাপী মহামারী আকারে ছড়াতে পারে। এটা নিয়ে পুরো বিশ্বে যা ঘটছে তা এখন আমাদের জন্য শঙ্কার বিষয়।
গত কয়েকদিনে যে কয়টি দেশে করোনাভাইরাস খুব দ্রুত ছড়িয়েছে এর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া এক নম্বরে। চীনের পর এই দেশে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ এতে আক্রান্ত হয়েছেন। কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে শুক্রবার সকালে সিএনএন জানিয়েছে, এই ভাইরাসে দেশটিতে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২৫৬ জন। সবমিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দু্ই হাজার ২২ আর মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ জনে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনার সংক্রমণ ছড়িয়েছে মূলত দেইগুতে। নতুন করে আক্রান্ত ২৫৬ জনের মধ্যে শুধুমাত্র এই শহরটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৮২ জন। এ নিয়ে দেইগুতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩১৪ জনে।
এদিকে ইউরোপের সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা ইতালির। দেশটিতে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এখন পর্যন্ত ইতালিতে ৬৫০ জনের আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার সকালেও এ সংখ্যা ছিল ৪০০। এদিকে দেশটিতে এ ভাইরাসে মারা গেছেন ১২ জন।
ইতালির নাগরিক সুরক্ষা বিভাগের প্রধান অ্যাঞ্জেলো বোরেলি জানিয়েছেন, ইতালিতে ৬৫০ জনের দেহে করোনাভাইরাসের লক্ষণ পাওয়া গেছে।
বিবিসির খবরে বলা হয়, ইউরোপের মধ্যে ইতালি ছাড়াও অস্ট্রিয়া, ক্রোয়েশিয়া ও সুইজারল্যান্ডেও ছড়াচ্ছে এ ভাইরাস। ফ্রান্স ও জার্মানিতেও করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এর প্রভাবে ইংল্যান্ডে চার লাখ মানুষ বিপদের মধ্যে রয়েছেন। ব্রিটিশ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অশঙ্কা করোনাভাইরাস ইউরোপে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
এদিকে করোনার প্রভাবে চীনের শেয়ারবাজারের পর বিরুপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বিশ্ববাজারেও। এশিয়া ও ইউরোপের শেয়ারবাজারের সূচকও বর্তমানে নিম্নমুখী। ২৮ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো এ তথ্য জানায়।
এশিয়ার অন্য অংশের মতো ভারতের বাজারও নিম্নমুখী। শুক্রবার জাপানের নিকেই সূচক কমেছে তিন শতাংশ। শুক্রবার নিফতি ও সেনসেক্স শেয়ার বাজারের সূচক কমেছে প্রায় ২ দশমিক ৫ শতাংশ। ধস নেমেছে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে। যুক্তরাষ্ট্রের ডো জোনস সূচক কমেছে ১২০০ পয়েন্ট। শেয়ারবাজারটির ইতিহাসে এটিই সর্বনিম্ন দরপতন। শুক্রবার অস্ট্রেলিয়ার এএসএক্স২০০’র সূচক কমেছে ৩ দশমিক ৫ শতাংশে।
নিউইয়র্ক ভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যাংকরেট ডট কমের প্রধান অর্থনৈতিক বিশ্লেষক গ্রেগ ম্যাকব্রাইড বলেন, শঙ্কা ও অনিশ্চয়তার কারণে বাজারে দ্রুত পতন ঘটে। এ মুহূর্তে দুটোই একসঙ্গে প্রভাব ফেলছে।
গত ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রথম করোনার অস্তিত্ব ধরা পড়ে। এরপর তা ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের অন্যান্য দেশে। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই প্রাণঘাতী ভাইরাসে ৮৩ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। এতে মৃত্যু হয়েছে ২৮৫০ জনের বেশি মানুষের। এর মধ্যে শুধুমাত্র চীনে আক্রান্তের সংখ্যা ৭৮ হাজার ৮২৪ ও মৃত্যু হয়েছে ২৭৮৮ জনের।
সান নিউজ/সালি