ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:
বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) ঘিরে শুরু হওয়া তাণ্ডবে এ পর্যন্ত দিল্লিতে ৩৪ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন অন্তত দুই শত। গুলি-বোমা-আগুনের সঙ্গে এসিড হামলাও চালিয়েছে দুবৃত্তরা।
এলাকাজুড়ে মনে হচ্ছে যেন বিস্তীর্ণ এক শ্মশান ভূমি। দিল্লির জাফরাবাদ-মৌজপুর এলাকায় এই মুহুর্তে সুনসান নিরবতা রইলেও ফাঁকা রাস্তা জুড়ে যেখানে সেখানে পাথর, ইট, ভাঙা কাঁচ, লোহার রডসহ আরও অনেক কিছু। গেল রবিবার থেকে শুরু সংঘর্ষে দিল্লি ছাড়া শুরু করেছে মুসলমানরা। ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা এ খবর জানিয়েছে। মৃত্যূর সংখ্যা বুধবার রাত পর্যন্ত ২৭ জন নিহত হওয়ার কথা জানা গেলেও তার সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে।
ভয়াবহ এই দাঙ্গায় এসিড হামলার প্রমানও পাওয়া গেছে। মুস্তাফাবাদ থেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা আহতদের দেখা গেছে বিভৎস অবস্থায়। অনেকের চোখে অ্যাসিড ঢালা হয়েছে বলে জানান আহতরা। দৃষ্টি হারিয়েছেন চার জন। খুরশিদ নামে এক জনের দু’চোখই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। দুই চোখ-সহ পুরো মুখ ঝলসে গিয়েছে ওয়কিল নামে একজনের। আনন্দবাজার বলছে, সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা আজ দিল্লি হাইকোর্টকে জানিয়েছেন, পুলিশকে অ্যাসিড হামলার মুখে পড়তে হচ্ছে।
দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, দাঙ্গার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১৮টি এফআইআর হয়েছে, গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১০৬ জনকে। নিহতের প্রত্যেকের পরিবারকে দুই লাখ টাকা ও আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে জানানো হয়েছে। যদিও গত কালই উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ জানিয়েছিলেন, দাঙ্গায় মৃত্যু হলে ক্ষতিপূরণের কোনও প্রশ্নই নেই।
সহিংসতা ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কয়েক দফা পর্যালোচনামূলক বৈঠক করেও সহিংসতা ঠেকাতে ব্যর্থতার অভিয়োগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এদিকে হিন্দুত্ববাদী তাণ্ডব নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার ও পুলিশের সমালোচনা করায় দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি এস মুরালিধরকে বদলি করা হয়েছে। গতরাতে তাকে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টে বদলির নোটিশ জারি করে ভারত সরকার।
এদিকে বুধবার রাতে দিল্লির হাইকোর্টের বিচারপতি মুরলীধরকে বদলির নির্দেশ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। দাঙ্গার ভিডিও ফুটেজ‘‘ পর্যালোচনা করে বৃহস্পতিবারের মধ্যে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পুলিশ কমিশনার আমুলিয়া পাটনায়েককে নির্দেশ দিয়েছিলেন ওই বিচারপতি। বিজেপির তিন নেতা অনুরাগ ঠাকুর, কপিল মিশ্র ও পারভেশ ভার্মার ঘৃণাবাদী বক্তব্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয়ার পাশাপাশি নাগরিকদের নিরাপত্তা, ২৪ ঘণ্টা হেল্পলাইন, পর্যাপ্ত অ্যাম্বুলেন্স ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করারও নির্দেশ দেন বিচারপতি এস মুরালিধর।
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় উত্তর-পূর্ব দিল্লির মুস্তাফাবাদের আহত অনেককে বহু চেষ্টা সত্ত্বেও এলাকার বাইরে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা যাচ্ছিল না। এমনকি কোন সাহায্য পাওয়া যাচ্ছিল না পুলিশের পক্ষ থেকেও। এ অবস্থায় মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার সময় বিচারপতি মুরলীধরের বাড়িতে যান চিকিৎসক, মানবাধিকার কর্মীরা। তাঁদের আর্জি শুনে রাত ২ টার দিকে দিল্লি পুলিশকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এটা মানুষের কাছে পৌঁছে ভরসা তৈরির সময়।’ বুধবার দিল্লির পরিস্থিতি নিয়ে মামলার শুনানির সময় হিংসার জেরে ঘরছাড়া মানুষের জন্য উপযুক্ত আশ্রয়ের বন্দোবস্ত করারও নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি মুরলিধর।
এসব কারণেই এই বিচারপতিকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে ধারণা অনেকের। যদিও দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি এস মুরলীধরকে গত সপ্তাহেই পঞ্জাব-হরিয়ানা হাইকোর্টে বদলির সুপারিশ করেছিল সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম। সেই বদলির প্রতিবাদে কর্মবিরতি পালন করে দিল্লি হাইকোর্টের আইনজীবীরা। ঘটনাচক্রে কলেজিয়ামের সুপারিশ মেনে বুধবার রাতেই বিচারপতি মুরলীধরকে বদলি করে দিলেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। বুধবার মাঝ রাতে এই সংক্রান্ত সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। বুধবার রাতে বদলি করা হয়েছে দিল্লির পাঁচ আইপিএস অফিসারকেও।
এদিকে, নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের প্রতিবাদ করে বিক্ষোভে অংশ নেয়া অভিযোগে বিশ্বভারতীতে অধ্যায়নরত বাংলাদেশের নাগরিক এক শিক্ষার্থীকে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ঐ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ভারতবিরোধী কার্যকলাপে যুক্ত থাকার অভিযোগ এনেছে ভারত সরকার। তাকে দেশে ফেরত পাঠাতে ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রশন অফিস (এফআরআরও) থেকে এ নির্দেশ পাঠানো হয়। তবে এ ধরণের কোন ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে ওই ছাত্রী।