আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে ব্যাপক সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে এ পর্যন্ত ২৪ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া ১৮৯ জনের গুরুতর হতাহতের খবর জানিয়ে সংবাদ সংস্থা এএনআই।
সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সফরের মধ্যেই ভারতের বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের সমর্থক এবং বিরোধীদের সংঘাত আরও ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।
আল জাজিরার খবরে বলা হয়, সব মিলিয়ে গত চারদিনে মৃতের সংখ্যা ২৪ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। তবে আনন্দবাজারের খবরে নিহতের সংখ্যা এখন পর্যন্ত ২৩ জন বলা হচ্ছে।
এদিকে মঙ্গলবার রাত থেকেই জাফরাবাদ, মৌজপুর, চাঁদবাগ, কারওয়াল নগরে ১৪৪ ধারা জারি করে কাউকে দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দিয়েছে দিল্লি পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা মোতায়েনের দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তবে প্রশাসন জানিয়েছে, যথেষ্ট সিআরপি নামানো হয়েছে। এখনই সেনা ডাকার দরকার নেই।
আনন্দবাজার জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত দিল্লিতে মৃতের সংখ্যা ছিল ১৩। বুধবার সকালে গুরুতর আহত অবস্থায় আরও চারজনকে গুরু তেগবাহাদুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে, তাদের মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
পরে হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় আরও একজনের মৃত্যু হয়। পরে আরো দুজনের মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের এমডি সুনীল কুমার গৌতম।
এদিকে দুপুরে চাঁদ বাগ থেকে এক গোয়েন্দা অফিসারের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তার পর লোকনায়ক হাসপাতালে আরও দু’জনের মৃত্যু হয়।
দিল্লিতে কারফিউ জারি করা হলেও থামানো যাচ্ছে না সংঘাত। পুলিশের গুলির ভয় উপেক্ষা করেই ভোর সাড়ে ৪টা থেকে নতুন করে পাথর ছোড়াছুড়ি শুরু হয় উত্তর-পূর্বের ব্রহ্মপুরী-মুস্তাফাবাদ এলাকায়। এসময় গোকুলপুরীতে একটি পুরনো দোকানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশের পাশাপাশি সিআরপিএফ, এসএসবি, সিআইএসএফ এবং পুলিশের যৌথ বাহিনীর সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন।
এদিকে এএনআইকে তাদের এক সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) অজিত ডোভালকে রাজধানীর রাজনীতিকে স্বাভাবিক করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সূত্র আরও জানায়, অজিত ডোভাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মন্ত্রীসভাকে এ বিষয়ে বিবৃতি দেবেন।
এদিকে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এই উন্মত্ততা বন্ধ করে হিন্দু-মুসলিম উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। উত্তেজনা না ছড়াতে বেসরকারি টেলিভিশনগুলোকে সংঘাতের খবর প্রচারের ক্ষেত্রে সাবধান করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
এ সংঘাতের পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গত ২৪ ঘণ্টায় তিনটি বৈঠক করেছেন। বৈঠকে ছিলেন আইপিএস অফিসার এসএন শ্রীবাস্তব। পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করার পর মঙ্গলবার তাকে বিশেষ পুলিশ কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তারপরও সেখান থেকে একের পর এক মৃত্যুর খবর আসতে থাকে।
এ সময় সহিংসতায় আহতদের জরুরি চিকিৎসা ও জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের প্রতি নির্দেশনা জারি করে আদেশ দেন দিল্লির হাইকোর্ট।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আর কোনও উসকানিমূলক বক্তব্য না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দিল্লির সঙ্গে উত্তর প্রদেশ ও হরিয়ানা রাজ্যের সীমান্ত পর্যবেক্ষণে রাখার কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
সান নিউজ/সালি