আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার সোমবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে দিল্লি এসে পৌঁছান। সেদিন সন্ধ্যায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করেন মাইক পম্পেও।
মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) হায়দরাবাদ হাউসে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পর দুই দেশের সাংবাদিকদের ব্রিফ করবেন। বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্রের দুই মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধাস্ত, সমঝোতা ও চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে । সই হবে ভূস্থানিক সহযোগিতামূলক বেসিক এক্সচেঞ্জ অ্যান্ড কো–অপারেশন বেকাচুক্তি, ভারত–চীন সীমান্ত উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে যা দুই দেশের প্রতিরক্ষা সম্পর্কের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া কূটনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে একাধিক চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঠিক এক সপ্তাহ আগে এই বৈঠক কূটনৈতিক স্তরে যথেষ্ট আগ্রহের সৃষ্টি করেছে। নির্বাচনের প্রাক্কালে এত বড় মাপের কূটনৈতিক পদক্ষেপের যৌক্তিকতা ও তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। সম্ভাব্য নির্বাচনী ফল যখন দুই পক্ষের কাছেই অজানা। তা সত্ত্বেও দুই দেশের কূটনৈতিক মহলের বিশ্বাস, রাজনৈতিক পালাবদল ঘটলেও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মৌলিকতায় কোনো পরিবর্তন ঘটবে না। ফলে পারস্পরিক স্বার্থে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে দুই দেশের কারও পক্ষেই অসুবিধা হবে না। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এই সফর নিয়ে এক বিবৃতিতে বলেছে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের আগামী বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের উপস্থিতি লক্ষণীয়।ভারত সফরের আগে সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে পম্পেও বলেন, ‘ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও ইন্দোনেশিয়া যেতে অনেক আগেই অপেক্ষায় আছি। এই সহযোগীদের সঙ্গে একযোগে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর স্বাধীন, নিরাপদ বিকাশে আমরা সচেষ্ট। গত মে মাসে ভারত–চীন নিয়ন্ত্রণরেখায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ এবং কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে চীনের সার্বিক আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার জোটবদ্ধতার (কোয়াড) নিরিখে এই বৈঠকের গুরুত্ব অপরিসীম। বেকা চুক্তির ফলে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ভূস্থানিক গোয়েন্দা তথ্যের সব ধরনের সাহায্য পাবে ভারত । এই সফর দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা বাণিজ্যেরও প্রসার ঘটাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
চীনের মোকাবিলায় ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছাকাছি আসা মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কোন দিকে নিয়ে যাবে, এখনো অজানা। ট্রাম্প প্রশাসন ক্রমেই ভারতকে কাছে টেনেছে এবং সেই পারস্পরিক স্বার্থের বেশিটাই চীন কেন্দ্রিক। সেই কারণে মালাবার নৌ–মহড়ায় অস্ট্রেলিয়াও যোগ দিচ্ছে। ভূরাজনীতির এই বিন্যাস পূর্ব লাদাখে ভারতের অনড় অবস্থানের অন্যতম কারণ।
সম্ভবত সেই আলোয় রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের প্রধান মোহন ভাগবত চীন সম্পর্কে ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের বিষয়টি স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। এবং সেটাও করেছেন গত রোববার উত্তর ভারতের দশেরা উৎসবের (বিজয়া দশমী) দিন। সংঘের অনুষ্ঠানে তিনি পরিবর্তিত সেই মনোভাবের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে চীনকে টপকে যেতে হবে। সেই সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করতে হবে প্রতিবেশীদের সঙ্গে। তিনি বলেন, চীন ভেবেছিল পূর্ব লাদাখের ঘটনাবলি ভারতকে কুঁকড়ে দেবে। কিন্তু ভারত যে পাল্টা রুখে দাঁড়াবে, সেটা তারা কল্পনা করতে পারেনি।
সান নিউজ/এসএ