আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মিয়ানমার সরকার রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বসবাসের উপযোগী পরিবেশ তৈরী না করার কারনে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশে দীর্ঘসময় বাস্তুচ্যুত ১১ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করার কারণে দেশের সামাজিক সমস্যা ও সার্বভৌমত্বসহ অন্যান্য নিরাপত্তা মারাত্বক হুমকির মুখে পড়বে।
বাংলাদেশে আশ্রিত বাস্তুচ্যুত এই বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিরাপদ প্রত্যাবাসন ও নিজ ভূমি রাখাইন রাজ্যে ফেরৎ নেওয়ার জন্য পরিবেশ তৈরি করতে মিয়ানমারকে চাপ দেওয়ার বিষয়টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আবারও আলোচিত হচ্ছে। একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের নৃশংসতার জন্য অভিযুক্ত মিয়ানমার সেনা বাহিনীর কর্মকর্তাদের বিচারের বিষয়টিও বারবার নতুন করে আলোচনায় চলে আসছে। রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর ) আন্তর্জাতিক দাতা সম্মেলনে বিভিন্ন দেশ ও জোটের প্রতিনিধিদের ভার্চ্যুয়াল অধিবেশনে এসব বিষয় উঠে এসেছে।
আন্তর্জাতিক দাতা ও জোট নেতারা মনে করেন রোহিঙ্গা সমস্যার একমাত্র সমাধান তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে নিরাপদ প্রত্যাবাসন। সে দিকেই সকলকে বেশি নজর দিতে হবে। তবে রাখাইনে চলমান সংঘাত প্রত্যাবাসন নিয়ে নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। গত তিন বছরে রাখাইন রাজ্যে প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমার নিরাপদ পরিবেশ তৈরি না করায় একজন রোহিঙ্গাও সেখানে যেতে পারেনি।
রোহিঙ্গাদের মানবিক সাহায্যে তহবিল সংগ্রহে আয়োজিত দাতা সম্মেলনের আয়োজক যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর)। রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা, যা যৌথ সহায়তা কর্মসূচিতে (জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান) তহবিল সংকটের কারণে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ বছর জেআরপির জন্য ১০০ কোটি ৬ লাখ ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি থাকলেও এখন পর্যন্ত এসেছে মাত্র ৫১ লাখ ডলার, যা প্রতিশ্রুত অর্থের প্রায় ৪৮ শতাংশ।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন বিগান বলেন,রোহিঙ্গা সমস্যার একটি মর্যাদাপূর্ণ সমাধানে আমাদের চেষ্টা দ্বিগুণ করতে হবে। রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের দায়িত্ব নিতে হবে মিয়ানমারকে। রাখাইনে সংঘাতের মূল কারণ বের করতে হবে। যারা রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতার জন্য দায়ী, তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। এ নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে।
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব শুধু কয়েকটা দেশের নয় বলে সম্মেলনে উল্লেখ করেন যুক্তরাজ্যের দক্ষিণ এশিয়া ও কমনওয়েলথ বিষয়ক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লর্ড তারেক আহমেদ। তিনি বলেন, এ সমস্যার একটি আঞ্চলিক সমাধান প্রয়োজন। টেকসই সমাধানে বাংলাদেশসহ যারা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে, আমাদের তাদের পাশে থাকতে হবে।
ইউএনএইচসিআর হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রাথমিক দায়িত্বটা মিয়ানমারের। রাখাইনে আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানামার সেনাবাহিনীর সংঘাত প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে নতুন সংকট তৈরি করছে। রাখাইনের পরিবেশ নিয়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে আস্থা না এলে তারা ফিরতে উৎসাহী হবে না। সেই সঙ্গে তাদের নাগরিকত্বসহ মৌলিক অধিকার ফিরে পাওয়ার পথও থাকতে হবে। এ জন্য কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে জোর দিতে হবে।
দাতাদের গতকালের সম্মেলনে রোহিঙ্গাদের জন্য এ বছর প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলারের নতুন সহায়তার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ২০০ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেছে। ইইউ প্রায় ১১৩ মিলিয়ন ডলার, যুক্তরাজ্য ৬৩ মিলিয়ন ডলার। ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বলেন, সব মিলিয়ে ৫৯৭ মিলিয়ন ডলার সাহায্যের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। এর মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক সহায়তায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জোরালো সমর্থনের প্রতিফলন ঘটেছে।
সম্মেলনে দ্বিতীয় অধিবেশনে বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য দেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। পরে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিজের দপ্তরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তিন বছর রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার পর যে বার্তাটি দেওয়ার দরকার ছিল, সেটি বাংলাদেশ দিতে পেরেছে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার কারনে দেশের কী ক্ষতি হচ্ছে, ভবিষ্যতে কী ঝুঁকি তৈরি হতে পারে সম্মেলনে সেটি তুলে ধরা হয়েছে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে নিরাপত্তার স্বার্থে বেড়া দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করা হবে। তিনি বলেন, জাতিসংঘ মিয়ানমারকে যথেষ্ট চাপ দিচ্ছে না এবং চাপ প্রয়োগের জন্য যথেষ্ট কার্যক্রম নিচ্ছে না বলে বাংলাদেশ মনে করে। জাতিসংঘকে আরও শক্ত ও দৃঢ় ভূমিকা রাখতে হবে।
সান নিউজ/ এসএ