আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
বিশ্বজুড়ে ঘরে বাইরে মূর্তিমান এক আতঙ্কের নাম করোনা বা কোভিড ১৯ ভাইরাস। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের সংক্রমণে এ পর্যন্ত চীনে মারা গেছেন ২৩৬০ জন। আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে সাড়ে ৭৭ হাজার। ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে রিতিমতো হিমশীম খাচ্ছে চীন।
এরইমধ্যে বিশ্বের ২৯টি দেশে ছড়িয়ে পড়লেও তা ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করেনি ওইসব দেশে। চীনের বাইরে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১৫ জন।
তবে এই মুহুর্তে চীনের পরই আতঙ্কজনক অবস্থায় রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটিতে দ্রুতভাবে ছড়িয়ে পড়ছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস। দেশটিতে একদিনেই নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি হওয়ায় পরিস্থিতি ‘ভয়াবহ’ হচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী চুং সায়ে-কিউন।
জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া এক ভাষণে প্রধানমন্ত্রী চুং সাই-কিয়ুন এমন পরিস্থিতিকে ‘কবরের’ মত বলে আখ্যা দেন। চীনের পর করোনা ভাইরাসে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়াতেই।
কর্তৃপক্ষ জানায়, বেশিরভাগ আক্রান্তই দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত দায়েগু শহরের। সেখানে একটি হাসপাতাল এবং একটি ধর্মীয় গ্রুপ থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বলেও জানানো হয়। এদিকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় এ পর্যন্ত দুই জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় নতুন করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা এক দিনেই বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। এক কর্মীর দেহে সংক্রমণ ধরা পড়ার পর স্যামসাং ইলেক্ট্রনিক্স তাদের মোবাইল ফোন তৈরির একটি কারখানাও বন্ধ রেখেছে।
দায়েগু শহরের কাছে গুমিতে স্যামসাংয়ের একটি মোবাইল সেট তৈরির কারাখানায় এক কর্মীর দেহে শনিবার করোনা ভাইরাস ধরা পড়ে। এরপরই ওই কারখানা সোমবার সকাল পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করে স্যামসাং কর্তৃপক্ষ।
দেশটির সেন্টার্স ফর ডিজিজেস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের বরাত দিয়ে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার ২২০ জনের দেহে সংক্রমণ ধরা পড়ার পর এ পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৩৩ জনে।
এদিকে করোনা ভাইরাস নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া একে আপরের বিপক্ষে কথা বলতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন একাউন্ট থেকে দাবি করা হচ্ছে যে, করোনা ভাইরাস মহামারি ছড়িয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের দাবি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটার, ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রাম সহ বিভিন্ন মাধ্যমে হাজার হাজার প্রোফাইল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।
তবে এমন ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে রাশিয়া। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে শনিবার জবাব দিয়েছে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা এমন অভিযোগকে ভুয়া বলে আখ্যায়িত করেছেন।
রাশিয়ার বার্তা সংস্থা তাস-এর কাছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভ বলেন, এটা হলো ইচ্ছাকৃত একটি মিথ্যা কাহিনী।
বার্তা সংস্থা এএফপির মতে, মধ্য জানুয়ারিতে তৃতীয় মৃত্যুর পর যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা রাশিয়ার এই ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেয়ার বিষয়টি সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গ্লোবাল এনগেজমেন্ট সেন্টারের প্রধান লিয়া গ্যাবিয়েলে বলেন, এক্ষেত্রে আমরা দেখতে পেয়েছি, তারা সফলতার সঙ্গে রাষ্ট্রীয় টিভি, প্রক্সি ওয়েবসাইট, হাজার হাজার সামাজিক যোগাযোগ মিডিয়ায় একই ভুল ধারণা ছড়িয়ে দিচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাসের আবির্ভাব ঘটে। প্রতিনিয়ত এই ভাইরাসে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা।
সান নিউজ/সালি