আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সরকার এবং রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে তিন মাসের বেশি সময় ধরে চলে আসা প্রতিবাদ-বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে থাইল্যান্ডে গণমাধ্যমের ওপর সেন্সরশিপ আরোপের অভিযোগ উঠেছে। গণবিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে গত সপ্তাহে জারিকৃত জরুরি অবস্থার আওতায় দেশটির অন্তত চারটি গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে থাই পুলিশ। পাশাপাশি বার্তা আদান-প্রদানের অ্যাপ টেলিগ্রামের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
সরকারি এই ঘোষণার পর দেশটির মিডিয়া গোষ্ঠীগুলোর মাঝে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী প্রায়ূত চান-ওচা নেতৃত্বাধীন সরকার দেশটিতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সাবেক জান্তা নেতা প্রায়ূতের পদত্যাগের দাবিও তুলেছেন বিক্ষোভকারীরা।
গত ১৬ অক্টোবর পুলিশের স্বাক্ষরিত একটি নথিতে বিক্ষোভকারীদের একটি ফেসবুক পেইজের পাশাপাশি দেশটির প্রথম সারির চারটি গণমাধ্যমের কনটেন্টের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরুর নির্দেশনা দেয়া হয়।
থাই পুলিশের মুখপাত্র কিসসানা ফাথানাচারোয়েন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আমরা সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা শাখাগুলোর কাছে থেকে তথ্য পেয়েছি যে, কন্টেন্টের কিছু অংশ এবং তথ্য বিকৃত করে প্রচার করা হয়েছে। যা সমাজে বিভ্রান্তি এবং অস্থিরতা তৈরিতে প্ররোচনা দিতে পারে।
থাইল্যান্ডের সম্প্রচার নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং ডিজিটাল মন্ত্রণালয় এই অভিযোগ তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। তবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর কোনও ধরনের লাগাম টানার পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
দেশটির ডিজিটাল মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র পুচাপং নোথাইসং বলেছেন, চারটি গণমাধ্যম এবং বিক্ষোভকারী গোষ্ঠী ফ্রি ইয়ুথের ফেসবুক পেইজ থেকে বিকৃত কনটেন্ট সরিয়ে ফেলতে আদালতের নির্দেশনা রয়েছে।
গত কয়েক সপ্তাহে দেশটিতে বিক্ষোভের ৩ লাখের বেশি কনটেন্ট থাইল্যান্ডের আইন লঙ্ঘন করেছে বলে মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তবে সরকারের এমন পদক্ষেপকে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের চেষ্টা বলে মন্তব্য করেছে দেশটিতে অনলাইনে বাক- স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করে আসা সংস্থা দ্য মানুশিয়া ফাউন্ডেশন।
সংস্থাটির পরিচালক এমিলি পালামি প্রাদিচিৎ বলেন, বিক্ষোভের ওপর সরকারের নিষেধাজ্ঞায় কোনও কাজ না হওয়ায় সেনা-সমর্থিত সরকার সত্য প্রকাশে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টির পায়তারা করছে। আমরা মুক্ত গণমাধ্যম রক্ষার আহ্বান জানাই।
গেল বৃহস্পতিবার দেশটির সরকার জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কায় সংবাদ এবং অনলাইনে তথ্য প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। সরকার ও রাজতন্ত্রবিরোধী বিক্ষোভে ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জের মুখে দেশটিতে রাজনৈতিক সমাবেশে পাঁচজনের বেশি মানুষের জমায়েতেও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।
সোমবার (১৯ অক্টোবর) দেশটির পুলিশের প্রধান সুওয়াত জ্যাংইয়োদসুক সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, বিক্ষোভকারী ফ্রি ইয়ুথ গ্রুপের টেলিগ্রাম অ্যাপের অ্যাকাউন্টের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে ডিজিটাল মন্ত্রণালয়কে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। দেশটিতে বিক্ষোভরত তরুণ-তরুণীরা গত কিছুদিন ধরে টেলিগ্রাম অ্যাপের মাধ্যমে সমন্বয় করে বিক্ষোভ করে আসছেন।
তবে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা পুচাপং নোথাইসং স্বাক্ষরিত অন্য এক নথিতে দেখা যায়- তিনি দেশটির ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী বিভিন্ন সংস্থা ও মোবাইল অপারেটরগুলোকে টেলিগ্রাম অ্যাপ পুরোপুরি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
বৃহস্পতিবার জনসমাবেশের ওপর দেশটির সরকার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও প্রতিদিন বিক্ষোভকারীরা রাজধানী ব্যাঙ্ককে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে আসছেন। জরুরি অবস্থা উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষ ব্যাঙ্ককে বিক্ষোভ করছেন। রোববারও ব্যাঙ্ককে ২০ হাজারের বেশি মানুষ বিক্ষোভ করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সোমবার সন্ধ্যার দিকে ব্যাঙ্ককে তিনটি স্থানে বিক্ষোভকারীরা জমায়েত হওয়ার পরিকল্পনা করছেন বলে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। গত ১৩ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৭৪ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ব্যাঙ্কক পুলিশের উপ-প্রধান পিয়া তাউইচাই বলেন, আমরা প্রত্যেকের বিচার করবো।
সংবিধান সংশোধন করে রাজতন্ত্রের অবসান, গত বছরের নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রী প্রায়ূতের পদত্যাগের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে বিক্ষোভ করে আসছেন থাইল্যান্ডের হাজার হাজার মানুষ। ২০১৪ সালে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় আসা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী প্রায়ূত গত বছরের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে দাবি করেছেন।
রাজা মহা বাজিরালঙ্কর্নের ক্ষমতা হ্রাস এবং রাজতন্ত্রের অবসানের দাবি উঠলেও বিক্ষোভ অথবা বিক্ষোভকারীদের দাবির ব্যাপারে কোনও ধরনের মন্তব্য করেনি থাই রাজ প্রাসাদ।
তবে প্রধানমন্ত্রী প্রায়ূত বলেছেন, তিনি পদত্যাগ করবেন না। সোমবার দেশটির সরকারি বাসভবনে তিনি বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে সংসদের বিশেষ অধিবেশনে সমর্থন দিয়েছেন তিনি। সংসদে প্রায়ূতের দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে।
সান নিউজ/এম/এস