আন্তর্জাতিক:
করোনাভাইরাস সম্পর্কে প্রথম সতর্ক করা চীনের চিকিৎসক লি ওয়েলিয়াং এর মৃত্যুর শোক কাটতে না কাটতে হুবেই প্রদেশের উচ্যাং হাসপাতালের প্রধান লিউ ঝিমিং এর মৃত্যু হয় মঙ্গলবার। আর এই দুই চিকিৎসকেরও মৃত্যূ হল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে। সব মিলিয়ে দেশটির পাঁচ চিকিৎসককে মৃত্যূবরণ করতে হয়েছে এই রোগে।
তবে দেশটিতে করোনাভাইরাসের চিকিৎসা দিতে গিয়ে তাতে মোট কতো চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে তুমুল বিতর্ক। অভিযোগ উঠেছে এর প্রকৃত তথ্য গোপন করে করোনাতে চিকিৎসকদের আক্রান্তের সংখ্যা নিয়েও মিথ্যাচার করছে চীন সরকার। সরকার বলছে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত চিকিৎসাকর্মীর সংখ্যা ১৭ শ' এর বেশি। কিন্তু চাইনিজ সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এক প্রতিবেদনে বলছে, আক্রান্ত চিকিৎসাকর্মীর সংখ্যা ৩ হাজার ১৯ জন। এদের মধ্যে ১ হাজার ৬ শ ৮৮ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত ৭২ হাজার ৩১৪ জনের উপর সম্প্রতি গবেষণা করে সিডিসি। ১৭ ফেব্রুয়ারি সোমবার এক প্রতিবেদন এর সার্বিক দিক তুলে ধরে তারা। এর মধ্যে নিশ্চিত ৪৪ হাজার ৬৭২টি কেইস নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে ১২ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়েছেন।
এর মধ্যে বলা হয় জানুয়ারির শুরুর দিকে উহানের চিকিৎসক ও নার্সরা সংক্রমণের সর্বোচ্চ ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছেন। জানুয়ারির প্রথম ১০ দিন আক্রান্ত চিকিৎসাকর্মীদের প্রায় ৪০ শতাংশের অবস্থা ভয়াবহ। আশঙ্কাজনক ১ হাজার ৬ শ' ৮৮ চিকিৎসাকর্মীদের মধ্যে ৬৪ শতাংশই উহানের এবং ২৩ দশমিক ৩ শতাংশ হুবেইসহ অন্যান্য অঞ্চলের।
সিডিসি তথ্য অনুযায়ী সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছেন দেশটির অসুস্থ ও বয়স্ক ব্যক্তিরা। মৃত্যুহার নিয়ে প্রতিবেদনটি বলছে, দেশটিতে এ পর্যন্ত কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার ২ দশমিক ৩ শতাংশ। হুবেই প্রদেশে মৃত্যুর হার ২ দশমিক ৯ শতাংশ। পৃথিবীর অন্য অংশে এই হার ০ দশমিক ৪ শতাংশ। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন দেশটির স্বাস্থ্যকর্মীরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কেইসগুলোর মধ্যে ৮০ দশমিক ৯ শতাংশই ছিল মৃদু, ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ গুরুতর এবং ৪ দশমিক ৭ শতাংশ মারাত্মক গুরুতর। ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার ৮০ বছর বা তার বেশি বয়সীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি, যা মোট মৃত্যুর ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। নয় বছর বয়স পর্যন্ত কোনো শিশুর এবং তারপর থেকে ৩৯ বছর বয়সী কারো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। যাদের বয়স ৪০ এর কোঠায়, তাদের মৃত্যুর হার ০ দশমিক ৪ শতাংশ, ৫০ এর কোঠায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩ শতাংশ, ৬০ এর কোঠায় ৩ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ৭০ এর কোঠায় ৮ শতাংশ।
যেখানে পুরুষদের মৃত্যুর হার নারীদের চেয়ে বেশি, যা যথাক্রমে ২ দশমিক ৮ শতাংশ এবং ১ দশমিক ৭ শতাংশ। এছাড়া, যাদের হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্ট বা উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তারাও বেশি ঝুঁকিতে থাকেন।
তবে প্রতিবেদনটিতে হুঁশিয়ারি জানিয়ে বলা হয়, অবরুদ্ধ অবস্থার অবসান হলে এবং ছুটি কাটিয়ে আরও মানুষ শহরে এলে নতুন করে যেন ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা না দেয়, তার প্রস্তুতি নিতে হবে।
চীনে নতুন করে আরও ৯৮ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮৭৩ জনে। আর মোট আক্রান্তের সংখ্যা গিয়ে পৌঁছেছে ৭২ হাজার ৪৩৬ জনে। তবে জানুয়ারির পর থেকে সোমবার পর্যন্ত চীনের মূল ভূখণ্ডে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা নেমে এসেছে দুই হাজারের নিচে।
সান নিউজ/সালি