আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
বিবাদপূর্ণ নাগোরনা-কারাবাখ অঞ্চল ঘিরে প্রতিবেশি দুই দেশ আজারবাইজান এবং আর্মেনিয়ার সামরিকবাহিনীর মধ্যে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো পাল্টাপাল্টি গোলাবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ওই অঞ্চলে দুই দেশের সামরিক বাহিনী ভারী অস্ত্র ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ করেছে উভয় পক্ষই।
ব্যাপক বিবাদপূর্ণ নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলে দুই দেশের লড়াইয়ে অন্তত ২১ জনের প্রাণহানি ও আরও শতাধিক আহত হয়েছে। ২০১৬ সালের পর এবারই প্রথম এই অঞ্চলে বড় ধরনের সংঘাতের জড়িয়ে পড়েছে আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজান।
এর ফলে দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলের স্থিতিশীলতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিশ্ব বাজারে তেল এবং গ্যাসের সরবরাহের পাইপলাইনের অন্যতম করিডর হিসেবে পরিচিত এই ককেশাস অঞ্চল।
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভূক্ত দেশ দুটির মাঝে নাগোরনো-কারাবাখ ঘিরে কয়েক দশকের পুরনো সংঘাত রয়েছে। আজারবাইজানের ভেতরে অবস্থিত জাতিগত আর্মেনীয়দের শাসনাধীন নাগোরনা-কারাবাখকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া অঞ্চল হিসেবে মনে করে আজারবাইজান।
অঞ্চলটির দখল ফিরে পেতে প্রয়োজনে সব ধরনের সামরিক উপায় অবলম্বনের হুমকি দীর্ঘদিন ধরে দিয়ে আসছিল দেশটি। আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট আংশিক মার্শাল ল জারি করে সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ ঘটানোর নির্দেশ দিয়েছেন। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, লড়াই শুরু হওয়ার পর ছয় বেসামরিক আজারি নিহত ও আরও ১৯ জন আহত হয়েছেন।
আর্মেনিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বরাত দিয়ে রুশ সংবাদসংস্থা ইন্টারফ্যাক্স বলছে, সংঘাতে ২০০ আর্মেনীয় আহত হয়েছেন। এদিকে, নাগোরনো-কারাবাখ বলছে, তাদের আরও ১৫ জনের বেশি সৈন্য নিহত হয়েছেন। এর আগে, রোববার আজারবাইজানের বিমান এবং কামানের গোলা নিক্ষেপে ১৬ জন সৈন্য নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন বলে জানায় নাগোরনো-কারাবাখ কর্তৃপক্ষ।
রোববারের (২৭ সেপ্টেম্বর) লড়াইয়ে হারানো কিছু অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে নাগোরনো-কারাবাখ। বেশ কিছু এলাকায় আজারবাইজান ভারী অস্ত্র ও গোলা বর্ষণ করেছে বলে অভিযোগে তুলেছে অঞ্চলটি।
এদিকে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও ফ্রান্স। সংর্ঘষের ফলে খ্রিষ্টান অধ্যুষিত আর্মেনিয়া এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ আজারবাইজানের সঙ্গে বিশ্ব মোড়লদের কূটনীতিতে নতুন উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। রাশিয়া তাৎক্ষণিকভাবে অস্ত্রবিরতির আহ্বান জানিয়েছে। আঞ্চলিক অপর পরাশক্তি তুরস্ক বলেছে, ঐতিহ্যবাহী মিত্র আজারবাইজানের প্রতি তাদের সমর্থন রয়েছে।
সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাশিয়ায় নিযুক্ত আর্মেনিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেছেন, উত্তর সিরিয়া থেকে প্রায় চার হাজার সৈন্য আজারবাইনে মোতায়েন করেছে তুরস্ক। যদিও বাকু এই অভিযোগ পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছে বলে খবর দিয়েছে ইন্টারফ্যাক্স।
আন্তর্জাতিক আইনে নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চল আজারবাইনের ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু সেখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতিগত আর্মেনীয়রা আজারি শাসন প্রত্যাখ্যান করে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর আর্মেনিয়ার সমর্থনে নিজস্ব শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলেছে নাগোরনো-কারাবাখ।
এই অঞ্চলে দুই পক্ষের সংঘাতে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু এবং লাখো মানুষ বাস্ত্যুচুত হওয়ার পর ১৯৯৪ সালে দ্বিপাক্ষিক অস্ত্রবিরতিতে রাজি হয় আর্মেনিয়া-আজারবাইজান। ২০১৬ সালের এপ্রিলে দুই দেশের মাঝে ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী সংঘাত হয়। এতে উভয় পক্ষে ২ শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। চলতি বছরের জুলাইয়ে উভয় দেশের সংঘাতে ১৬ জন নিহত হন।