আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে উত্তাল ভারত। এরইমধ্যে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচন যেন সমুচিত জবাব দিলো প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভারতীয় জনতা পার্টিকে (বিজেপি)।
দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে ভরাডুবির মধ্যে চুবিয়ে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে তৃতীয়বারের মতো আবারও মসনদের দায়িত্ব পেলেন আম আদমি পার্টির (এএপি) অরবিন্দ কেজরিওয়াল। দিল্লিতেও ২৭০ জন সাংসদ, ৭০ জন মন্ত্রীর প্রচার প্রচারণাও কোনো কাজে এল না। শতাংশের নিরিখে ভোট ও আসন বাড়লে সন্তোষজনক ফল করতে পারেনি বিজেপি।
জয়ের পর সন্তানের উপর তৃতীয়বার ভরসা রাখায় দিল্লিবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে এক সমাবেশে কেজরিওয়াল বলেন, এই বিজয় আপনাদের জন্য। দিল্লি, আমি তোমাকে ভালোবাসি। দিল্লিবাসী ভোটের মাধ্যমে আমাদের অনেক আসনে বিজয়ী করেছেন, এখন থেকে আমরা একসঙ্গে কাজ করবো। আমি একা কিছুই করবো না।
নির্বাচনে ৭০টি আসনের মধ্যে ৬৩টি আসনে বিজয়ী হয়েছে ক্ষমতাসীন আম আদমি পার্টি। প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) পেয়েছে ৭টি আসন।
তবে কংগ্রেসে এবার কোনো আসনই পায়নি। যদিও গতবারের তুলনায় এবার চারটি আসন কম পেয়েছে এএপি। দিল্লি বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় যেতে হলে যেকোনো দলকে কমপক্ষে ৩৬টি আসনে জয়ী হতে হয়।
নির্বাচনে ভরাডুবির পর জনগণের রায় মেনে নিয়ে অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে শুভেচ্ছা জানিয়ে টুইট করেছেন দিল্লিতে বিজেপির প্রধান মনোজ তিওয়ারি। কেজরিওয়ালকে আরো অভিনন্দন জানিয়েছেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ভব থাকচেরি।
বিজেপির ভরাডুবির পর রাজ্যসভার সাংসদ সুব্রক্ষ্মণ্যম স্বামী বলেন, ২০১৪ সাল থেকে এখনো পর্যন্ত দলের কাঠামো খতিয়ে দেখা উচিত। তার অভিযোগ, বহু রাজ্যে নিজেদের প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেনি বিজেপি, তার ফল হাতেনাতে পেয়েছে নেতৃত্ব।
একই কথা বলছেন দিল্লির বিজেপি প্রার্থী কপিল মিশ্র, তার কথায়, কিছু একটা গড়বড় হচ্ছে। খতিয়ে দেখা দরকার।
দিল্লির সাংসদ গৌতম গম্ভীর তো স্বীকার করেই নিলেন। তিনি বলেন, দিল্লির মানুষকে আমরা বোঝাতেই পারিনি।
১১ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ১৬টি কারণে তৃতীয়বারের মতো কেজরিওয়ালের এএপি’র ওপর ভরসা রেখেছেন দিল্লির জনগণ। এগুলোর মধ্যে...
০১. কেজরিওয়ালের বিজয়ের অন্যতম কারণ বিজেপিবিরোধী ভোটগুলো চলে গেছে এএপি’র ঝুলিতে।
০২. এবার মুসলমানরা ভোট দিয়েছেন এএপিকে।
০৩. ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় যেসব কাজ কেজরিওয়াল করেছেন, সেসবও জনগণের ভোট বাগিয়ে নিতে সাহায্য করেছে।
০৪. দুইশ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ, প্রতিদিন সাতশ লিটার পর্যন্ত পানি, সরকারের তৈরি স্থানীয় ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসা এবং ওষুধ বিনামূল্যে দিয়েছেন তিনি।
০৫. সরকারি (ডিটিসি) বাসে নারীদের বিনামূল্যে সফরের সুযোগ ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাসে মার্শাল নিয়োগ করেছেন তিনি।
০৬. নিরাপত্তার স্বার্থে দিল্লির নানা জায়গায় লাগিয়েছেন সিসিটিভি ক্যামেরা।
০৭. দিল্লির সরকারি স্কুলগুলোর অবকাঠামো ও শ্রেণিকক্ষে এনেছেন আমূল পরিবর্তন।
এর মধ্যে কেজরিওয়ালের বিজয়ের কৌশল হিসেবে আরও কাজ করেছ...
০৮. কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা দিল্লির পুলিশ কেন শাহিনবাগে রাস্তা খালি করছে না, সে প্রশ্ন তোলা।
০৯. শাহিনবাগের বিক্ষোভস্থলে না যাওয়া, বিজেপি একে মূল ইস্যু করতে চাইলে এ তর্ক থেকে দূরে থাকা, নিজ সরকারের ছাড়া অন্য ইস্যুতে এমনকি সিএএ-এনআরসি নিয়েও কথা না বলা ও মোদীকে আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকা।
১০. বিজেপি ও কংগ্রেসের সমর্থকদের কাছেও অভিনব উপায়ে বারবার ভোট চেয়েছেন কাজরিওয়াল।
নিজের কাজের প্রচার করে তিনি বারবার বলেছেন, এতো কাজের পরেও তারা আমাকে আতঙ্কবাদী বলছেন তারা। আর এতেই বাজিমাত করেন কেজরিওয়াল। কাজ ও কৌশল দু’ভাবেই তিনি পরাজিত করেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপিকে।
এ নিয়ে গত দেড় বছরে ভারতের পাঁচটি রাজ্য 'বিজেপিমুক্ত' হয়েছে। সেই তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত হলো দিল্লি । বিজেপির হাতছাড়া রাজ্যের তালিকায় মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড, তেলেঙ্গানা উল্লেখযোগ্য।
সান নিউজ/সালি