আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
এশিয়ার দুই দেশ আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান। প্রতিবেশী দেশ হলেও বহুদিন ধরেই দু'দেশের মধ্যে বৈরি সম্পর্ক বিরাজমান। সেই বৈরিতায় ফের আগুন জ্বলছে দুটি দেশের মাঝে। বিতর্কিত নাগরনো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজানের মধ্যে ব্যাপক যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। ভয়াবহ এ সংঘাতের জন্য একে অপরকে দায়ী করছে দু’পক্ষে। সংঘাতের কারণে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে দুই দেশেই। রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) সারাদিনব্যাপিই স্থানীয় সকল গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে।
আর্মেনিয়া অভিযোগ করেছে, প্রতিবেশী আজারবাইজান নাগরনো-কারাবাখ অঞ্চলে স্থানীয় বাসিন্দাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে অঞ্চলটি আজারবাইজানের বলে স্বীকৃত। প্রধান শহর স্টেপেনকোর্টসহ নাগরনো কারাবাখ নিয়ন্ত্রণ করছে আর্মেনিয়ার সেনাবাহিনী। আর্মেনিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, রোববার স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১০ মিনিটের দিকে হামলা চালায় আজারবাইজান। জবাবে আর্মেনিয়ার বাহিনী প্রতিপক্ষের দুটি হেলিকপ্টার এবং তিনটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে।
তবে আজারবাইজানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, আর্মেনিয়ার আক্রমণ প্রতিহত করে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে তারা পাল্টা আক্রমণ চালিয়েছে। এ সময় তারা ট্যাংক, আর্টিলারি মিসাইল, যুদ্ধবিমান এবং ড্রোন ব্যবহার করেছে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আজারবাইজানের হেলিকপ্টার ভূপাতিত করা হলেও ক্রুরা জীবিত আছেন।
আজারবাইজানের প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র হিকমেত হাজিয়েভ এক বিবৃতিতে বলেন, হতাহতদের মধ্যে সাধারণ মানুষ এবং সামরিক বাহিনীর সদস্যরাও রয়েছে।
স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, ওই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ হতাহত হয়েছে। সেখানে সামরিক আইন জারি ছিল। পরে পুরো এলাকা সামরিকীকরণ করা হয়েছে। আলাদা বিবৃতিতে আর্মেনিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান, নাগরনো-কারাবাখ অঞ্চলে আর্মিনিয়ার এক নারী এবং এক শিশু নিহত হয়েছে।
দীর্ঘকাল ধরে চলমান সংঘাত পর্যবেক্ষণ করছেন আল-জাজিরার রবিন ফরস্টিয়ার-ওয়াকার। রোববারের ঘটনাকে অত্যন্ত গুরুতর সংঘাত বলে বর্ণনা করেছেন তিনি।
নাগরনো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে আর্মেনিয়া-আজারবাইজানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে সংঘাত চলছে। চিরশত্রু দু’দেশের মধ্যকার নতুন সংঘাত আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর আর্মেনিয়ারা ওই অঞ্চলে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ওই যুদ্ধে কারবাখকে, বাকু থেকে দখল করে নেয় তারা। সে সময় ৩০ হাজার মানুষ নিহত হয়।
১৯৯৪ সালে যুদ্ধবিরতিতে একমত হয় আজারবাইজান-আর্মেনিয়া। তবে নাগরনো-কারাবাখ অঞ্চল এবং আর্মেনিয়া-আজারবাইজান সীমান্তে হামলার জন্য একে অপরকে দোষারোপ করে আসছিল দু’পক্ষ।
নাগরনো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে বিতর্ক নিরসনে আলোচনা, যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর মূলত থেমে যায়। ফ্রান্স, রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ গঠিত মিনসক গ্রুপ সংকট সমাধানে মধ্যস্থতার জন্য চেষ্টা করেছে। কিন্তু ২০১০ সালে শান্তি চুক্তির বড় একটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
অতিসত্বর যুদ্ধবিরতি এবং আলোচনা শুরুর আহ্বান জানিয়েছে রাশিয়া। পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার জন্য অতিদ্রুত যুদ্ধ বন্ধ এবং দ্রুত আলোচনার আহ্বান জানাচ্ছি আমরা, রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়।
তুর্কি প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ইবরাহিম কালিন এক টুইট বার্তায় বলেন, বেসামরিক মানুষের ঘরবাড়িতে হামলা চালিয়ে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে আর্মেনিয়া। ভয়াবহ এ উস্কানি বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অতিদ্রুত ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
জুলাইতে আজারবাইজান-আর্মেনিয়া সীমান্তে ব্যাপক সংঘাত হয়। এতে উভয়পক্ষের ১৭ সেনা নিহত হন।
সান নিউজ/ বিএম