ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:
বহু বিতর্কের পর অবশেষে কাফালা বা স্পন্সরশিপ বন্ধ হতে যাচ্ছে সৌদি আরবে। সৌদি আরবের অনলাইন ভিত্তিক ইংরেজি পত্রিকা সৌদি গেজেটের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।
কাফালা হলো কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির অধীনে বিদেশি শ্রমিকদের নিয়োগ দেয়া। এই ব্যবস্থায় সৌদি নিয়োগকর্তাদের হাতে শ্রমিকদের পুরো দায়িত্ব ন্যস্ত থাকে। এটি বাতিল হলে শ্রমিকের অধিকার রক্ষা এবং শ্রম আইনে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। তারা নিজেদের মতো স্বাধীন এবং সহজভাবে কাজ করতে পারবেন।
সৌদি গেজেট জানায়, এ পদ্ধতি বাতিল হলে প্রবাসী শ্রমিকরা নিজের ইচ্ছানুযায়ী দেশে আসা-যাওয়া করতে পারবেন। কর্মসংস্থান চুক্তিতে যা নির্ধারিত রয়েছে, সে অনুযায়ী প্রবাসীদের চলাচলের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে। আবাসিক ভিসা ও স্বজনদের ভিজিট ভিসার অধিকার এবং এভাবে আরও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাবেন প্রবাসীরা।
প্রায় সাত দশক পুরনো এই কাফালা ব্যবস্থায় এখনও বিদেশি শ্রমিকদের নিয়োগ দেয় সৌদি সরকার। এসব শ্রমিকদের বেশীরভাগই দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের নাগরিক। এরা প্রতিনিয়ত এই নিয়োগকর্তাদের দ্বারা নির্যাতিত হয়ে আসছে বলে প্রমান মিলেছে বহুবার।
১৯৫০-এর দশকে প্রবর্তিত এই ব্যবস্থায় প্রবাসী শ্রমিকদের তাদের নিয়োগকর্তা ও স্পন্সরের নির্দেশে চলতে হয়। এমনকি তাদের অনুমতি ছাড়া সৌদি আরবে আসা-যাওয়া করা যায় না। এক কথায়, নিয়োগকর্তারা শ্রমিকদের ভিসা ও আইনি অবস্থান নিয়ন্ত্রণ করেন। এই ব্যবস্থা শুধু সৌদি আরব নয়, পুরো উপসাগরীয় দেশগুলোতে প্রচলিত রয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট মনিটর’র খবরে বলা হয়েছে, শ্রমিকদের মূলত নির্মাণ ও গৃহকর্মে নিযুক্ত করা হয়। কাজের সময় তাদের বড় ধরনের নির্যাতনের সম্মুখীন হতে হয়। মজুরি না পাওয়া, কম মজুরি প্রদানসহ শারীরিক মারধরের মতো অভিযোগ নিয়মিত করছেন শ্রমিকরা। দুই বছর আগে কুয়েতে একটি ফ্রিজে ফিলিপাইনের এক শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল।
মিডল ইস্ট মনিটর’র খবরে আরও বলা হয়েছে, যদি এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয় তাহলে সৌদি আরবের প্রভাবশালী যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে এটি হবে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সংস্কার। যুবরাজের ভিশন ২০৩০ উদ্যোগে তেল সৌদি অর্থনীতিতে তেল নির্ভরতা কমিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর আগে ২০১৭ সালেও সৌদি আরব এই ব্যবস্থা বাতিলের উদ্যোগ নিচ্ছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করেছিল।