জে এম শাহজাহান মোল্লা, মনোহরদী (নরসিংদী) প্রতিনিধি: ৮ মাসের বেশি সময় ধরে নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন ৭০ বছরের এক বৃদ্ধ। কথা বলেন ইশারা-ইঙ্গিতে। কোনোভাবেই মনের ভাব প্রকাশ করতে না পারার কারণে কেউ জানতে পারেনি তার পরিচয়।
আরও পড়ুন: প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা, ফুল ছিঁড়লে ৫০০ টাকা জরিমানা!
ফলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিছানায় শুয়ে থেকে কাটছে তার সময়। অবলীলায় নাম-পরিচয়হীন অসুস্থ্য এ বৃদ্ধের সেবা করে যাচ্ছেন তারেক নামের এক পরিশ্রমী যুবক। তার সেবার বিনিময়ে প্রতি মাসে ৮ হাজার টাকা দিচ্ছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাশেদুল হাসন মাহমুদ।
জানা যায়, গত বছর ৭ জুলাই মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গেইটের সামনে আহত অবস্থায় পড়ে ছিল নাম-পরিচয় বলতে না পারা ওই বৃদ্ধ। দীর্ঘ সময় পড়ে থাকার পর গভীর রাতে মনোহরদী পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের কমিশনার তাজুল ইসলাম তাকে প্রথম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করেন।
হাসপাতালে ভর্তি করার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে সামাজিক মাধ্যম ফেইসবুক এবং বিভিন্ন মাধ্যমে ছবিসহ পোস্ট দিয়ে ওই বৃদ্ধের পরিচয় জানার চেষ্টা করা হয়।
আরও পড়ুন: নবীগঞ্জে ট্রাকচাপায় নারীসহ নিহত ২
অনেক চেষ্টার পরও তার কোনো আত্মীয়-স্বজন বা ওই বৃদ্ধের পরিচয় না পাওয়ায় তার ঠিকানা হয়ে যায় মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরুষ ওয়ার্ডের ৯ নং বেড। সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বিছানায় শুয়ে থাকা ওই বৃদ্ধ কথা বলতে পারেন না। শরীরের ডান দিকটা অবশ হয়ে আছে।
ধারণা করা হচ্ছে, তার ডান সাইড প্যারালাইজড হয়ে আছে। এমন অসুস্থ্যতার কারণে ডান হাত দিয়ে খেতে না পারায় বাম হাত দিয়ে কষ্ট করে খাবার খাচ্ছেন তিনি।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে জানা যায়, একেবারেই চলাফেরা করতে পারেন না তিনি। তিনি বিছানায় শুয়ে যেমন খাবার গ্রহণ করেন, তেমনই প্রস্রাব-পায়খানাও বিছানাতেই।
আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে শিক্ষক আত্মহত্যার নেপথ্যে
এ অবস্থায় তার সার্বিক দেখভাল করার জন্য পার্শ্ববর্তী গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার তারেক নামে এক যুবককে নিজ অর্থায়নে ৮ হাজার টাকা বেতনে নিয়োগ দেন উপজেলা স্বাস্থ ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাশেদুল হাসান মাহমুদ।
এরপর থেকে আন্তরিকতার সাথেই দায়িত্ব পালন করে আসছেন তারেক। সকাল ৮ টায় নিয়মিত হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে রাত পর্যন্ত ওই বৃদ্ধের সাথে থাকেন তিনি।
এ সময় তাকে খাবার খাওয়ানো, প্রস্রাব-পায়খানা পরিষ্কার করা ছাড়াও আন্তরিকতার সাথে সকল দায়িত্ব পালন করে থাকেন তারেক। রাতে বাড়িতে যাবার আগে তারেক সকল খাবার ও ঔষধ খাইয়ে দিয়ে যান। প্রস্রাব-পায়খানার জন্য আবার পরিয়ে দিয়ে যান ডায়পার।
পরদিন সকালবেলা এসে আবার সকল কিছু পরিষ্কার করেন তিনি। হাসপাতালে ভর্তি রোগী হিসেবে ৩ বারের খাবার ও ঔষধ সরবরাহ করা হয় হাসপাতাল থেকে।
আরও পড়ুন: কবরস্থান থেকে কঙ্কাল চুরির অভিযোগ
তবে সকল ঔষধ-পথ্য হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা না গেলে অনেক সময় বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়। বাইরে থেকে কিনতে হয় ডায়পারসহ আনুসাঙ্গিক কাপড়। এ সকল কিছুর জন্য উপজেলা সমাজ সেবা অফিস থেকে কিছু সহযোগিতা করা হয়।
সমাজ সেবার এ সহযোগিতার বিষয়টি ব্যবস্থা করা হয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে।
এ বিষয়ে মনোহরদী পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ড কমিশনার তাজুল ইসলাম বলেন, লোক মারফত খবর পেয়ে মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে থেকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করি। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত তিনি হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মনির হোসেন বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সহযোগিতা করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। ভবিষ্যতে এ সহযোগিতার ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাশেদুল হাসান মাহমুদ বলেন, একজন ডাক্তার হিসেবে মানুষের সেবা করা আমার দায়িত্ব। সরকারি হাসপাতালে তিনি সরকারি সেবা পাচ্ছেন। কোনো আত্মীয়-স্বজন না থাকায় বিছানায় পড়ে থাকা একজন মানুষের সার্বিক দায়িত্ব পালনের জন্য আমি নিজের অর্থায়নে লোক রেখেছি।
সান নিউজ/এনজে