কামরুজ্জামান স্বাধীন, উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের উলিপুরে পৌষের শেষে শীতের তীব্রতার সঙ্গে বেড়েই চলছে শীতজনিত রোগ ডায়রিয়া ও শ্বাস কষ্ট।
আরও পড়ুন: শীতার্তদের পাশে দাড়াঁলেন জেলা প্রশাসক
ঘন কুয়াশা ও তীব্র ঠান্ডায় বেশির ভাগই আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত ১৩ দিনে প্রায় শতাধিক ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্ট রোগী ভর্তি হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা বর্হিবিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে আরও প্রায় ৩ শতাধিক।
এছাড়া অনেকে বিভিন্ন ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র, বেসরকারি হাসপাতাল ও পল্লী চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিচ্ছে। চিকিৎসকদের পরামর্শ ছাড়াও ওষুধের দোকানগুলোতে সারাদিন ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ের তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডায়রিয়া রোগীর চাপ সামলাতেও হিমশিম খাচ্ছেন। ডায়রিয়া ও শিশু ওয়ার্ড না থাকায় রোগীদের মেঝে ও বারান্দায় বিছানা পেতে থাকতে হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ১-১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে শতাধিক। এসব রোগীর মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি। অনেকেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। অনেকেই নতুন করে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতিদিন হাসপাতাল ছাড়ছে ১০-১৫ জন, নতুন ভর্তি হচ্ছে ৭-৮ জন।
ভিন্ন উপজেলা থেকেও রোগীরা এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে ভর্তি হচ্ছে। এদের মধ্যে তীব্র ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ছুয়া (১৩ মাস) এসেছে চিলমারীর বজরা তবকপুর ও মুয়াজ (৯ মাস) এসেছে চিলমারীর রানীগঞ্জ ফকিরের হাট গ্রাম থেকে।
আরও পড়ুন: হজ নিবন্ধনের সময় বাড়ছে
রুহান (৮ মাস), সিয়াম (১১ মাস), সায়মা (১ বছর), সাব্বির (১১ মাস) ও তাজমিন (১৮ মাস)। এদের মধ্যে বশির হাবিব নামের একজানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। রোগীর সাথে থাকা অভিভাবকরা জানান, দ্রুতই ডায়রিয়া ও শিশু ওয়ার্ড দরকার।
শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) বিকেলে উলিপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে রোগী ও স্বজনদের দুর্ভোগের চিত্র দেখা গেছে।
দায়িত্বরত কতৃপক্ষ জানায়, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ঠ ও সর্দিজ্বরে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন গড়ে শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে।
আরও পড়ুন: বায়ুদূষণে শীর্ষ চারে ঢাকা
শয্যা সংকটের কারণে অনেককে মেঝে ও বারান্দায় রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তারপরেও তারা চকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। পৌরসভাস্থ পশ্চিম শিববাড়ী গ্রামের আব্দুল হালিম (৯০) চারদিন আগে শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে তিনি সুস্থ আছেন।
চিলমারী উপজেলার রানীগঞ্জের রোজিনা এসেছেন শ্বাসকষ্ট নিয়ে। তিনিও এখন অনেকটা সুস্থ। রোগীর অভিভাবকরা জানান, আগের চেয়ে চিকিৎসার মান অনেকটা ভালো হয়েছে।
হাসপাতালের ওয়ার্ডে চিকিৎসা সেবার দায়িত্বে থাকা সিনিয়র স্টাফ নার্স দিলারা জাহান দিনি এবং মিড ওয়াইফ ফাহমিদা আক্তার জানান, আমাদের হাসপাতালে শয্যা বাড়ানোসহ দ্রুতই শিশু ওয়ার্ডের ব্যবস্থা করা জরুরি। রোগীরা যেভাবেই হাসপাতালে থাকুক না কেন, তাদের চিকিৎসার কোনো ত্রুটি হচ্ছে না।
আরও পড়ুন: ট্রাক-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে নিহত ২
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মেশকাতুল আবেদ মুঠোফোনে জানান, ১৯৮২ সালের পুরাতন বিল্ডিংটিতে ৩১ শয্যার ব্যবস্থা ছিল, ধীরে ধীরে ৫০ শয্যায় রুপান্তরিত হয়েছে। ভারী শীতের কারণে ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে।
শিশু ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার জানিয়েই যাচ্ছি। তারাও আশা দিচ্ছেন, দ্রুতই সব ব্যবস্থা হবে। সীমিত জনবল দিয়ে হলেও আমরা রোগীদের যথাসাধ্য চিকিৎসা সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।
সান নিউজ/এনজে