নিজস্ব প্রতিবেদক:
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে সারাদেশের সরকারি হাসপাতালে অনতিবিলম্বে আইসোলেশন ইউনিট খোলা নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
এরই মধ্যে ২৭ জানুয়ারি সোমবার দুপুরে ভাইরাল উপসর্গ নিয়ে চীনের একজন নাগরিক রাজধানীর গুলশানে একটি অভিজাত হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে ওই ব্যক্তি করোনা ভাইরাস বহন করছেন কি না তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এদিকে রাজধানীর মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে স্বাস্থ্য মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বিভাগীয় পরিচালক ও সিভিল সার্জনদের সঙ্গে করোনা ভাইরাস নিয়ে এক ভিডিও কনফারেন্স করেন। সেখানে তিনি সারাদেশের সরকারি হাসপাতালে অনতিবিলম্বে আইসোলেশন ইউনিট খোলার নির্দেশনা দেন।
একইসঙ্গে দেশের সকল স্থল ও নৌবন্দরে বিভিন্ন দেশ থেকে আগত যাত্রীদের স্বাস্থ্যপরীক্ষাসহ সতর্ক দৃষ্টি ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
আপাতত দেশের আটটি বিভাগের সকল জেলাসদর ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ ইউনিট খোলা হবে।
স্বাস্থ্য মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, এখনও পর্যন্ত দেশে নোবেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া না গেলেও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সম্ভাব্য সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন বিমানবন্দরে স্ক্যানার মেশিন দিয়ে চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আগত যাত্রীদের শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।
এর আগে রোববার স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে জেলাসদর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৃথক আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলার সিদ্ধান্তের পাশাপাশি দেশের ২৪টি স্থল ও নৌবন্দরে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। এরপরই চিঠি দিয়ে বিভাগীয় পরিচালক ও সিভিল সার্জনদের জানিয়েও দেয়া হয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) পরিচালক ও রোগতত্ত্ববিদ অধ্যাপক মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, আজ সকাল পর্যন্ত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্ক্যানার মেশিন ও হ্যান্ড স্ক্যানিং মেশিনের মাধ্যমে দুই হাজার ৪৭০ জন যাত্রীর শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। তবে এখনও পর্যন্ত দেশে কোনো করোনা ভাইরাস রোগী পাওয়া যায়নি।
আই ডি সি আর এর পরিচালক অধ্যাপক ড. মীরজাদী সেবরিনা ফ্লোরা বলেন, আমরা শুনেছি ওই হাসপাতালের একজন চীনা নাগরিক ভর্তি হয়েছেন। আমরা তার স্যাম্পল কালেকশন করবো, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলা যাবে তিনি করোনা ভাইরাস বহন করছেন কি না। এর আগে কিছুই বলা সম্ভব না। তবে এটা নিয়ে কোনো ধরনের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।
তিনি জানান, হেলথ কার্ডের মাধ্যমে আগত যাত্রীদের তথ্য-উপাত্ত রাখা হচ্ছে। কোনো যাত্রী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও তাৎক্ষণিকভাবে তার এ রোগের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। আবার ২ থেকে ১৪ দিনের মধ্যেও অসুস্থতা দেখা দিতে পারে। এ কারণে যাত্রীদের বলা হচ্ছে এ সময়ের মধ্যে যদি কেউ আক্রান্ত হন তাহলে যেন আইডিসিআরে যোগাযোগ করেন।
উল্লেখ্য, গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের মধ্যাঞ্চলের উহান শহরে প্রথমবারের মতো প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর আসে। এরপর এই ভাইরাস চীনের বিভিন্ন শহরের পাশাপাশি ইতোমধ্যে বিশ্বের এক ডজনের বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে ৮০ জন প্রাণ হারিয়েছে। এছাড়া আরও দুই হাজার ৭৪৪ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
চীনের গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, এই ভাইরাসে আক্রান্ত তিন শতাধিক মানুষ মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েছে। চীনের হুবেই প্রদেশে ৫০ হাজারের বেশি মেডিকেল স্টাফ এই ভাইরাস প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ এবং চিকিৎসায় অংশ নিয়েছেন।
সান নিউজ/সালি