সান নিউজ ডেস্ক:
বর্তমান বিশ্বে এক আতংকের নাম করোনা ভাইরাস। এটি দেশ থেকে দেশে এখন ছড়িয়ে পড়ছে। তেমনি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে উদ্বেগজনকহারে।
চীনের করোনা ভাইরাসে ইতিমধ্যে অস্ট্রেলিয়া, নেপাল, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ফ্রান্স এবং যুক্তরাষ্ট্রে বেশ কয়েকজন আক্রান্ত হয়েছে বলে দেশগুলো নিশ্চিত করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র গতকাল তাদের দেশে করোনা ভাইরাসে দুই জনের আক্রান্ত হওয়ার কথা নিশ্চিত করেছে। অস্ট্রেলিয়ায় ৩ জন, নেপাল একজন আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে।
এছাড়া এই ভাইরাসে মালয়েশিয়ায় ৪ জন, সিঙ্গাপুরে ৪ জন, জাপানে ৩ জন, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৩ জন, তাইওয়ানে ৩ জন, ভিয়েতনামে ২ জন, থাইল্যান্ডে ৬ জন, কানাডায় ১ জন, ফ্রান্সে ১জন আক্রান্ত হয়েছে।
এদিকে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ বলে সতর্কতা জারি করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি জিন পিং। গতকাল শনিবার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ছিল ৪১। আজ রবিবার সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৬।
কেবল এখানেই থেমে নেই। পুরো এশিয়া ও বাকি বিশ্বেও ছড়িয়ে পড়ছে এই ভাইরাস। চীনের মূল ভূখন্ডে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২০০০ বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশে এখনও কেউ আক্রান্ত না হলেও শঙ্কা রয়েছে এ নিয়ে। এজন্য শুরু থেকেই নিতে হবে এর প্রতিরোধ মূলক প্রস্তুতি, থাকতে হবে সচেতন।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ জ্বর, শ্বাসকষ্ট, কাশি। অসুখ বাড়লে কিডনি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। করোনা ভাইরাস মরণব্যাধি। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের কোনো ওষুধ বা ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি। এজন্য এর আক্রমণ থেকে বাঁচতে হলে নিজেকে সাবধান রাখাই শ্রেষ্ঠ উপায়।
করোনা ভাইরাস কী?
করোনা ভাইরাস এমন এক ভাইরাল যা সাধারণ ফ্লু বা ঠাণ্ডা লাগার মতোই প্রথমে আক্রমণ করে ফুসফুসে। মধ্য প্রাচ্য থেকে আসা এই ভাইরাস আক্রান্ত হলে শুরু থেকে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা দেখা দেয়। ধীরে ধীরে তা মারাত্মক আকার ধারণ করে। এক পর্যায়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
করোনা ভাইরাসের লক্ষ্মণ
এর প্রাথমিক লক্ষণ অতি সাধারণ। এই ভাইরাস সংক্রমণে ঠাণ্ডা লাগার মতোই সর্দি-কাশি, মাথাব্যথা, নাক দিয়ে জল পড়া, গলা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, জ্বর হয়।
কীভাবে ছড়ায়?
খুব সহজেই এ ভাইরাস একজন থেকে আরেক জনের মধ্যে ছড়াতে পারে। এর মধ্যে:
# শারীরিক ঘনিষ্ঠতা, এমনকি করমর্দন থেকেও এই রোগ ছড়াতে পারে।
# রোগী বা তার জিনিসপত্র ধরার পর ভালো করে হাত না ধুয়ে চোখ, মুখ, নাকে হাত দিলে এই রোগ ছড়াতে পারে।
# হাঁচি-কাশি থেকেও এই রোগ ছড়াতে পারে।
করোনাভাইরাস থেকে বাঁচার উপায়:
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ডব্লিউএইচও বলছে, কিছু সাধারণ নিয়ম মানলেই এড়ানো যাবে এই সংক্রমণ।
# যতটা সম্ভব ঘরেই থাকার চেষ্টা করুন। সময় কাটানোর জন্য ভালো কোনো সিনেমা দেখুন বা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিন। তবে বাইরে প্রয়োজন ছাড়া বের না হওয়াই ভালো।
# বাইরে বের হওয়ার আগে সঙ্গে মাস্ক নিতে ভুলবেন না।
# বাস, ট্রেন বা এজাতীয় গণপরিবহনগুলো এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
# বাইরে থেকে ফিরে হ্যান্ডওয়াশ বা লিকুইড সোপ দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে নিন।
# বাইরে যাওয়ার আগে ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে যান। সকালে ঘণ্টাখানেকের জন্য জানালা খোলা রাখুন। তাতে পর্যাপ্ত সতেজ বাতাস এবং সূর্যের আলো ঘরে প্রবেশ করবে।
# সুস্থ এবং শক্তিশালী থাকতে স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। প্রচুর ফলমূল এবং পর্যাপ্ত পানি খাবেন। কোনো কিছু খাওয়া কিংবা রান্না করার আগে ভালো করে ধুয়ে নেবেন।
# ডিম কিংবা মাংস রান্নার সময় চেষ্টা করুন পর্যাপ্ত সময় ধরে রান্না করতে। খেয়াল রাখবেন, এগুলো যেন অবশ্যই সেদ্ধ হয়।
# ময়লা কাপড় দ্রুত ধুয়ে রাখার চেষ্টা করুন, দিন বা সপ্তাহ ধরে ফেলে রাখবেন না।
# ঘর পরিষ্কার রাখুন। নিয়মিত আপনার থাকার ঘর এবং কাজের জায়গা পরিষ্কার করুন। এক্ষেত্রে ইথাইল অ্যালকোহল ব্যবহার করুন। এটি আপনি যেকোনো ওষুধের দোকানেই পাবেন।
# সুরক্ষিত থাকতে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করবেন। অসুস্থ বোধ করলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আপনার পরিচিত কেউ আক্রান্ত মনে হলেও দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন।
এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে যতটুকু পারা যায় রোগীর সহচার্য এড়িয়ে চলাই ভাল। না হলে:
# রোগীর কাছ থেকে আসার পর ভালো করে হাত ধুতে হবে। হাঁচি ও কাশি দেওয়ার সময় নাক-মুখ ঢেকে রাখুন। প্রয়োজনে রোগীর কাছ থেকে দূরে থাকুন।
ওপরে বলা এক বা একাধিক লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা করা যাবে না। সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সূত্র: বিবিসি ও সিএনএন।
সান নিউজ/সালি