নিজস্ব প্রতিবেদক:
নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেও করোনা সংক্রমন থেকে শেষ রক্ষা হল না দেশের কারাগারগুলোর। তবে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত অন্যান্য দফতর ও অধিদফতরের তুলনায় কারাগারগুলোতে করোনা পরিস্থিতি অনেকটাই ভালো বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) পর্যন্ত কারা অধিদফতর ও দেশের কারাগারগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা গেছে, একজন কারা কর্মকর্তা ও একজন বন্দি এপর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আর কারাগারগুলোতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১০১ জন।
কারা অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, করোনা থেকে কারাবন্দিদের সুরক্ষায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছেন তারা। এর বাইরেও কারা অধিদফতরের পক্ষ থেকে অনেকগুলো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। নতুন যেসব বন্দি কারাগারে আসছেন, তাদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে রেখে সুস্থতা নিশ্চিত করে অন্য বন্দিদের সঙ্গে রাখা হচ্ছে। আর করোনার কোনও আলামত বা উপসর্গ দেখা গেলে সেই বন্দিকে আলাদা করে রাখা হচ্ছে।
স্বাস্থ্যবিধির ক্ষেত্রে হ্যান্ড ওয়াশ এবং ক্লিনিংয়ের সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। আটটি করোনা সেন্টার করা হয়েছে, যেটাকে আইসোলেশন সেন্টার বলা হয়। কখনও রোগী বেড়ে গেলে এসব সেন্টারে স্থানান্তর করা যাবে।
কারা অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে কারা কর্মকর্তা, কর্মচারী, রক্ষী ও তাদের পরিবারের সদস্য মিলিয়ে আইসোলেশনে আছেন মোট ১০১ জন। এদের মধ্যে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে ২ জন কারারক্ষী, কারা অধিদফতরের একজন অফিস সহায়ক, ফরিদপুর জেলা কারাগারে ৬ জন কারারক্ষী, তাদের পরিবারের সদস্য ৩ জন (কারারক্ষীর স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ে) ও কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারের ২ জন কারারক্ষী করোনা আক্রান্ত।
কারা অধিদফতরের দেওয়া তথ্যমতে, গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে এক জন জেলার, এক জন ডেপুটি জেলার, এক জন ডিপ্লোমা নার্স, এক জন ফার্মাসিস্ট, ২ জন সহকারী প্রধান কারারাক্ষী, ৪ জন কারারক্ষী এবং তাদের স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েসহ আরও ৩ জন করোনা পজিটিভ। রাঙ্গামাটি জেলা কারাগারে ৬ জন কারারক্ষী, এক জন নার্স রয়েছেন। রাজশাহী কারাগারে ৩ জন কারারক্ষী, এক জন উচ্চমান সহকারী তথা লাইব্রেরিয়ান করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। বগুড়া জেলা কারাগারে ২ জন কারারক্ষী, দিনাজপুর জেলা কারাগারে ২ জন কারারক্ষী, খুলনা কারাগারে ১৬ জন কারারক্ষী, যশোর কারাগারে ২৪ জন কারারক্ষী, পটুয়াখালী কারাগারে এক জন কারারক্ষী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
সিলেট বিভাগীয় দফতরে ১ জন কারারক্ষী, সিলেট কারাগারে ১ জন সহকারী সার্জন ও ১৩ জন কারারক্ষী, হবিগঞ্জ কারাগারে ১ জন ডেপুটি জেলার, ১ জন কারারক্ষী এবং সুনামগঞ্জ কারাগারে ১ জন কারারক্ষী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
বর্তমানে সারাদেশে কোয়ারেন্টিনে আছেন ২৩৯ জন। এরমধ্যে ঢাকার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের ৯ জন স্টাফ, ২ জন স্টাফের পরিবারের সদস্য, ৩১ জন বন্দি কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। কাশিমপুর-২ কারাগারে ১১ জন কারারক্ষী, কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে ৬ জন কারারক্ষী ও ২২ জন বন্দি কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। টাঙ্গাইলে ২ জন প্রধান কারারক্ষী, ১৫ জন কারারক্ষী কোয়ারেন্টিনে আছেন। মানিকগঞ্জ কারাগারে ১ জন কারারক্ষী, মুন্সীগঞ্জ কারাগারে ১ জন কারারক্ষী, মাদারীপুর কারাগারে ২ জন কারারক্ষী ও ৩ জন বন্দি কোয়ারেন্টিনে আছেন।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ২৮ জন কারারক্ষী ও ৯ জন বন্দি, লক্ষ্মীপুর কারাগারে ১ জন বন্দি, যশোর কারাগারে ১১ জন কারারক্ষী, নড়াইল কারাগারে ২ জন কারারক্ষী কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন।
পঞ্চগড় কারাগারে ৭৫ জন বন্দি, সিলেট কারাগারে ৩ জন কারারক্ষী, হবিগঞ্জ কারাগারে ১ জন কর্মকর্তা, ময়মনসিংহ কারাগারে ১ জন মেট্রন, ১ জন প্রধান কারারক্ষী, ১ সর্বপ্রধান কারারক্ষী এবং পটুয়াখালী কারাগারে ১ জন কারারক্ষী কোয়ারেন্টিনে আছেন।
করোনায় এ পর্যন্ত একজন কারা কর্মকর্তা মারা গেছেন। ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. আবু জাহেদ রবিবার (২৬ জুলাই) দুপুর একটার দিকে রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। সিলেট কারাগারে করোনায় আক্রান্ত হয়ে একজন বন্দি মারা গেছেন।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশের কারাগারগুলোতে ৭৭ হাজার ২৫৭ বন্দি রয়েছেন।