নিজস্ব প্রতিবেদক:
কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটি যখন বেশি বেশি টেস্টের কথা বলছেন, তখন সারাদেশে কমেই চলেছে করোনা টেস্টের সংখ্যা। গত কয়েক সপ্তাহে করোনা টেস্টের সংখ্যা এতই কমেছে যে, স্বাস্থ্য অধিদফতর এখন মানুষকে টেস্ট করাতে আসার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে। কিন্তু তাতেও সাড়া মিলছে না। এমন পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে যদি টেস্টের সংখ্যা কমতে থাকে, তাহলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ হবে না। এই মহামারির প্রকৃত অবস্থাও বোঝা যাবে না। ফলে বেশি সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়বে দেশ। এজন্য সরকারিভাবে ফি নির্ধারণের বিষয়টিকে ছিল ভুল সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেছেন তারা।
প্রসঙ্গত, কোভিড টেস্ট বিনামূল্যে হওয়ার ফলে বেশিরভাগ মানুষ উপসর্গ ছাড়াই পরীক্ষা করানোর সুযোগ গ্রহণ করেছে, জানিয়ে গত ২৮ জুন কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য অপ্রয়োজনীয় টেস্ট পরিহার করার লক্ষ্যে ফি নির্ধারণ করে সরকার।
কোভিড-১৯ পরীক্ষা-নিরীক্ষার ইউজার ফি’র হার নির্ধারণ বিষয়ক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘বুথ থেকে সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষায় ফি ২০০ টাকা, বাসা থেকে সংগৃহীত নমুনায় জন্য ৫০০ টাকা ও হাসপাতালে ভর্তি রোগীর নমুনা পরীক্ষায় ২০০ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।’
কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি জানায়, তারা মনে করে যে, পরীক্ষার সংখ্যা ও মানোন্নয়নের জন্য কোভিড-১৯ পরীক্ষাগারের সংখ্যা বৃদ্ধির চেয়ে পরীক্ষাগারের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা বেশি প্রয়োজন। অটো-এক্সট্র্যাকশন মেশিনের সহযোগিতায় পরীক্ষাগারে কোভিড-১৯ পরীক্ষার সংখ্যা বৃদ্ধি করা সম্ভব।
আর জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ যদি করতে হয়, তাহলে রোগী শনাক্ত এবং তার সংস্পর্শে আসা মানুষদের শনাক্ত করার বিকল্প নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বরাত দিয়ে তারা বলছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেখানে বলছে— প্রতিদিন অন্তত ২৫ হাজার মানুষকে পরীক্ষা করা প্রয়োজন। অথচ দেশে এখনও পর্যন্ত মাত্র একদিন সর্বোচ্চ পরীক্ষা হয়েছিল ১৯ হাজারের কিছু বেশি।
জানা গেছে, সরকারিভাবে ফি নির্ধারণের ঘোষণার পর থেকে করোনা টেস্টের হার ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে দেশের নানা জেলায় অব্যাহত বন্যা, পরীক্ষা করানোর ভোগান্তি, রিপোর্ট পেতে দেরি হওয়া, চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার প্রতি আস্থাহীনতা, আক্রান্ত হওয়ার পর দ্বিতীয় টেস্ট না করার সিদ্ধান্ত, উপসর্গ নেই এমন মানুষের কম আগ্রহ। এছাড়া গুরুতর অসুস্থ না হলে টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে সেবা নেওয়ার কারণে মূলত টেস্টের সংখ্যা কমেছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক কর্মকর্তা।
২৫ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদফতরের বুলেটিনে জানানো হয়, ২৪ ঘণ্টায় করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ হয়েছে ৯ হাজার ৬১৫টি। প্রায় দুই মাস পর সেদিন নমুনা সংগ্রহ ৯ হাজারের ঘরে নেমে আসে। নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কমে যেতে থাকে শনাক্তের সংখ্যাও। গত ২৬ জুলাই করোনা শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ২৭৫ জন। জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের দেওয়া তথ্য মতে, ১ জুন শনাক্ত ছিল ২ হাজার ৩৮১ জন। এরপর সর্বনিম্ন শনাক্তের সংখ্যা পাওয়া যায় ১৯ জুলাই, এদিন শনাক্ত ছিল ২ হাজার ৪৫৯।
করোনা টেস্ট যে কম হচ্ছে এ বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরও। আর সেজন্যই তারা এখন লক্ষণ ও উপসর্গ থাকলেই টেস্ট করাতে আসার জন্য মানুষকে অনুরোধ জানাচ্ছেন।
অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা সোমবার (২৭ জুলাই) নতুন মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের সঙ্গে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, ‘টেস্ট কমতির দিকেই বলা যায়। কারণ, রিয়েল যারা তাদেরই টেস্ট হচ্ছে। একইসঙ্গে মানুষের পরীক্ষা করার আগ্রহ একটু কম। কেসও একটু কমেছে।’
সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যেকোনও উপসর্গ থাকলে বা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে পরীক্ষা করান।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অনুরোধ করছি, কারও উপসর্গ থাকলে যেন টেস্ট করাতে আসেন। এখন সরকার নির্ধারিত একটা ফি আছে, সে কারণে অনেকে টেস্ট করতে আসছেন না এটা হতেও পারে। ফি’র বিষয়টি যেহেতু মন্ত্রণালয় থেকে নির্ধারিত, সে বিষয়ে আমাদের কিছু করার নাই। ফি দিয়েই পরীক্ষা করাতে হবে।’