সৈয়দ মেহেদী হাসান, বরিশাল থেকে:
দক্ষিণাঞ্চলের ছয় জেলা নিয়ে গঠিত নদী প্রধান বরিশাল বিভাগে কভিড-১৯ এর প্রভাব কমতে শুরু করেছে। দিন দিন বাড়ছে সুস্থতার সংখ্যা। বিপরীতে কমছে মৃত্যুর গড়। পাশাপাশি করোনা পরীক্ষার সংখ্যাও কমেছে বলে জানিয়েছে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর।
বিভাগীয় পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস মনে করেন, টেলিমেডিসিন সেবায় অধিকাংশ রোগীই সুস্থ হয়ে উঠছেন। প্রাথমিকভাবে আক্রান্ত ধারণা করে কেউ যোগাযােগ করলে তাকে বাড়িতেই চিকিৎসার আওতায় আনা হচ্ছে। প্রথম দশদিনের মধ্যে সেসব মানুষ যদি কোনো উপসর্গ অনুভব না করেন তাহলে তিনি করোনা আক্রান্ত নন বলেই প্রতীয়মান।
করোনা পরীক্ষার সংখ্যা কমে আসার বিষয়ে এই কর্মকর্তা মনে করেন, দুটি কারণে তা হয়েছে। প্রথমত ফি নির্ধারণে খেয়ালখুশি মতো নমুনা দিতে পারছেন না কেউ। অর্থাৎ আগে একই ব্যক্তি একাধিক স্বাস্থসেবা কেন্দ্রে বিনামূল্যে নমুনা দিতেন। তাতে এক ব্যক্তির খেয়ালখুশিতে রোগীর সংখ্যা কিন্তু বাড়তো। কারণ, ওই ব্যক্তির সংখ্যা একাধিক স্বাস্থসেবা কেন্দ্র থেকে গণনা করা হতো। এখন সে সুযোগ নেই।
দ্বিতীয়ত, প্রথমাবস্থায় রোগীদের কন্ট্রাক্ট ট্রেসিংয়ে রাখা হচ্ছে। অর্থাৎ উপসর্গ ছাড়া কাউকে পরীক্ষা করা হচ্ছে না। কন্ট্রাক্ট ট্রেসিংয়ে থাকাবস্থায় টেলিমেডিসিন সেবায় এবং আইসোলেশনে রাখা হয়। সেখানে উপসর্গ না থাকলে বা না কমে আসলে তার নমুনা সংগ্রহ করে প্রাতিষ্ঠানিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
মানুষের মাঝে দিনে দিনে সচেতনতা বেড়েছে বলে করোনা আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা কমছে বলেও মনে করেন ডা. বাসুদেব কুমার দাস।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘন্টায় ৩৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে বিভাগে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৪০২ জন। ওই একই সময়ে সুস্থ হয়েছেন ১১৬ জন। এ নিয়ে বিভাগে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন তিন হাজার ৯২ জন। যা মোট আক্রান্তের ৫৭.৪ শতাংশ। গত ২৪ ঘন্টায় মাত্র একজন করোনা রোগী মৃত্যুবরণ করেছেন। শনাক্তের ১৩৯তম দিনে এ নিয়ে মোট ১০৬ জন মারা গেলেন। যা মোট আক্রান্তের ০.২ শতাংশ।
আক্রান্ত শনাক্তের দিক থেকে বিভাগের মধ্যে বরিশাল জেলায় সবচেয়ে বেশি। এখন পর্যন্ত বরিশাল জেলায় আক্রান্ত দুই হাজার ৩১৩ জন, সুস্থ এক হাজার ৩৩২ জন এবং মারা গেছেন ৪০ জন।
পটুয়াখালী জেলায় সর্বমোট আক্রান্ত ৯৬৫ জন, সুস্থ ৫৫৩ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ২৭ জন। ভোলা জেলায় সর্বমোট আক্রান্ত ৪৮৭ জন, সুস্থ ৩৪৮ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন পাঁচজন। পিরোজপুর জেলায় সর্বমোট আক্রান্ত ৬১৫ জন, সুস্থ ৩১৩ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন নয়জন। বরগুনা জেলায় সর্বমোট আক্রান্ত ৫৮৭ জন, সুস্থ ৩২০ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১৩ জন। ঝালকাঠি জেলায় সর্বমোট আক্রান্ত ৪৩৫ জন, সুস্থ ২২৬ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১২ জন।
বিভাগে সর্বপ্রথম পটুয়াখালী জেলার দশমিনা উপজেলায় আক্রান্ত শনাক্ত হয় গত ৯ মার্চ। ১০ মার্চ থেকে সংক্রমণের তালিকা খোলে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর। সেদিন থেকে শনিবার (২৫ জুলাই) পর্যন্ত ১৩৯ দিনে বরিশাল সিটি করপোরেশনসহ বিভাগের ছয় জেলায় মোট ২৭ হাজার ৩৪৮ জনকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। এর মধ্যে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয় ২২ হাজার ৪৫৭ জনকে। ইতোমধ্যে ১৯ হাজার ৫২৮ জনকে হোম কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।
বিভাগের সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আইসোলেশনে চিকিৎসাপ্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা এক হাজার ৯১৬ জন। তাদের মধ্যে এক হাজার ৪৯৬ জনকে ছাড়পত্রও দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের আইসোলেশন ও করোনা ওয়ার্ডে মোট ১৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ৬০ জন কোভিড-১৯ পজিটিভ ছিলেন। বাকি ৯৭ জন উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হােসেন।
সান নিউজ/ এআর