নিজস্ব প্রতিবেদক:
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে প্রায় এক বছর আগে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া ডিভাইস দিয়ে চলছে গর্ভধারণ পরীক্ষা। এই সময়ে ওই ডিভাইস দিয়ে পাঁচ সহস্রাধিক নারীর পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে ভুল রিপোর্ট আসায় মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে নারী রোগীদের। পাশাপাশি পজিটিভের স্থলে নেগেটিভ এবং নেগেটিভের স্থলে পজেটিভ ফলাফল আসায় তারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তারা এই হাসপাতালে একরকম রিপোর্ট পাচ্ছেন, আবার বাইরে থেকে টেস্ট করালে আরেকরকম রিপোর্ট পাচ্ছেন। একাধিক চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পরীক্ষা করিয়ে আর্থিক গচ্চাও দিতে হচ্ছে।
রোগীদের স্বজনরা এ নিয়ে প্যাথলজি বিভাগে চ্যালেঞ্জ করলে ডিভাইস মেয়াদাত্তীর্ণের বিষয়টি প্রকাশ পায়। অভিযোগ উঠেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে লাভবান হয়েই সংশ্লিষ্টরা মেয়াদাত্তীর্ণ ডিভাইস ব্যবহার করেছেন।
ভুক্তভোগী পিরোজপুরের স্বরূপকাঠী এলাকার আনিসুর রহমানের স্ত্রী কাজল বেগম জানান, এ বছর জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গর্ভধারণ টেস্ট করতে আসেন। টেস্ট রিপোর্টে তার গর্ভধারণ নিশ্চিত করা হলেও তার সন্দেহ হয়। পরে ফার্মেসি থেকে গর্ভধারণ কুইক টেস্ট দিয়ে নিজেই পরীক্ষা করে দেখেন তিনি গর্ভবতী নন। এতে তিনি চিন্তিত হয়ে পুনরায় হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে টেস্ট করাতে যান। সেই রিপোর্টেও তাকে গর্ভবতী দেখানো হয়। এভাবে একের পর এক পজেটিভ-নেগেটিভ রিপোর্টে কাজল চিন্তিত হয়ে পড়েন।
নিরুপায় হয়ে নগরীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে গিয়ে তার আগের পরীক্ষার রিপোর্ট দেখান। চিকিৎসক পুরোপুরি নিশ্চিত হতে কাজলকে আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে বলেন। আল্ট্রাসনোগ্রামে তিনি গর্ভবতী নন বলে চিকিৎসক নিশ্চিত করেন। এতে করে শের-ই বাংলা হাসপাতালের গর্ভধারণ টেস্ট ডিভাইসের পরীক্ষা ভুল প্রমাণিত হয়। এভাবে অনেক নারী শের-ই বাংলা হাসপাতালে গর্ভধারণ টেস্ট করাতে এসে হয়রানির শিকার হয়েছেন।
প্যাথলজিক্যাল বিভাগ সূত্র থেকে জানা গেছে, গর্ভধারণ টেস্টের জন্য প্রতি রোগীর কাছ থেকে ৮০ টাকা করে নেওয়া হয়। এক হিসাবে দেখা গেছে, ওই সময়ের ব্যবধানে পাঁচ হাজার রোগীর কাছ থেকে চার লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে। অথচ সেবা পাওয়ার বদলে রোগীদের আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি পারিবারিকভাবে হেয় হতে হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, প্যাথলজি বিভাগের সিনিয়র টেকনোলজিস্ট ইনচার্জ আশিষ কুমার সোমসহ সংশ্লিষ্টরা ডিভাইস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আঁতাত করে মেয়াদোত্তীর্ণ ডিভাইস দিয়ে কাজ চালিয়ে আসছেন। ওই মেয়াদোত্তীর্ণ ডিভাইস দিয়ে গর্ভধারণ পরীক্ষা নিরাপদ নয় বলে মনে করছেন সিনিয়র ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্ট ডা. আশিক দত্ত ও ডা. মলয় কৃষ্ণ বড়াল। তারা বলেছেন, ‘গর্ভধারণ টেস্ট ডিভাইসটির মেয়াদোত্তীর্ণের বিষয়টি আমাদের আগে জানা ছিল না। জানার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট টেকনোলজিস্টদের ওই ডিভাইস দিয়ে পরীক্ষা না করার নির্দেশ দিয়েছি। এছাড়া প্রায় এক বছর ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ ডিভাইস দিয়ে কীভাবে পরীক্ষা করা হচ্ছে সেটিও খতিয়ে দেখা হবে।’
তবে ইনচার্জ আশিষ কুমার সোম অসুস্থ অবস্থায় বাসায় চিকিৎসাধীন থাকায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে ওই পদে ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা মজিবর রহমান বলেন, ‘গর্ভধারণ টেস্ট ডিভাইসটির মেয়াদোত্তীর্ণের খবরটি আমিও জানতাম না। এখানকার দায়িত্ব নিয়ে আমি ডিভাইসটির বিষয়টি আশিষ কুমারকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বিষয়টি স্বীকার করেছেন। আশিষ বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানালেও তারা কর্ণপাত করেনি বলে অভিযোগ করেছেন।’
এ ব্যাপারে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মনিরুজ্জামান শাহীন বলেন, ‘গর্ভধারণ টেস্ট ডিভাইসটির মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার খবরটি আমাদের জানা ছিল না। আমি জানতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে ওই ডিভাইস দিয়ে টেস্ট বন্ধের নির্দেশ দিয়েছি। একই সঙ্গে কাদের যোগসাজশে ওই ডিভাইস এতদিন সচল রাখা হয়েছিল সেটিও তদন্ত করে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’