সান নিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তি শনাক্ত হওয়ার পর থেকে তিন মাস পেরিয়েছে। এই পুরো সময়ে মানুষজনকে নানা ধরনের অভ্যাস করতে হয়েছে।
তার একটি হল সুরক্ষা সামগ্রীর ব্যবহার। রাস্তায় বের হলেই দেখা যায় চারিদিকে প্রায় সবাই মাস্ক ও গ্লাভস পরছে। এসব সামগ্রী ব্যাবহারের পর কিভাবে ফেলা উচিৎ তার নিয়ম আছে যা মেনে চলার উপরেও করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা নির্ভর করে।
বাংলাদেশ হেলথ সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের এপিডমলজির শিক্ষক মোসাম্মাত নাদিরা পারভীন। তিনি বলছেন, "অনেক মাস্ক ও গ্লাভস রাস্তায় পরে থাকতে দেখছি। হয়ত অনেকে ভাবছেন বাড়িতে ঢোকার আগে এগুলো ফেলে দিয়ে যাই। পরিবারের লোকদের কথা ভাবেন। চারপাশে সাধারণ মানুষ যখন এসব সুরক্ষা সামগ্রী প্রতিদিন ব্যবহারের পর ফেলে দিচ্ছেন তারা সেগুলো জীবাণুমুক্ত করেন না। সাধারণ বর্জ্যের মতোই ফেলে দেন। কিন্তু এটা খুবই ভুল হচ্ছে।"
তিনি বলছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাতাসে ছড়াতে পারে তাই ব্যবহৃত সুরক্ষা সামগ্রী সঠিকভাবে ফেলা দরকার।
কাপড়, প্লাস্টিক ইত্যাদি নানা ধরনের সামগ্রীর উপর করোনাভাইরাস বিভিন্ন মেয়াদে বেঁচে থাকতে পারে।
বিশেষ করে প্লাস্টিকে এর স্থায়িত্বকাল ২৪ ঘণ্টা বা তারও বেশি। যদিও এই মেয়াদ নিয়ে গবেষকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এএসএম আলমগীর বলছেন, "গ্লাভস হাতে দিয়ে অনেকে ভাবে আমিতো গ্লাভস পরে আছি। কিন্তু সে হাত দিয়ে যেভাবে সবধরনের জিনিস ধরেন, মুখ স্পর্শ করেন তেমনি গ্লাভস পরা অবস্থাতেও সেটি করছেন। তারপর রাস্তাঘাটে মাস্ক বা গ্লাভস ফেলে দিচ্ছেন। অনেক ব্যক্তির করোনা সংক্রমণ থাকলেও কোন লক্ষণ থাকে না। সুরক্ষা বর্জ্য সঠিকভাবে না ফেলা মানে আমরা নিজেরাই একে অপরের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছি।"
অপর দিকে, সম্প্রতি এনভায়রনমেন্ট এন্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন নামের একটি সংস্থা এক গবেষণার পর বলছে, ঢাকা শহরে ব্যাপকভাবে প্লাস্টিক বর্জ্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
তাদের গবেষণায় দেখা গেছে ২৬শে মার্চ থেকে ২৫শে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ প্লাস্টিক বর্জ্য বৃদ্ধি পেয়েছে ১৪ হাজার ৫০০ টন। যার বেশিরভাগই করোনাভাইরাস সুরক্ষা সামগ্রী।
তাই বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, "গ্লাভস জীবাণুমুক্ত করার পর তা উল্টো করে খোলা উচিৎ। এরপর গ্লাভসগুলোকে যদি একটু কাঁচি দিয়ে কেটে দেয়া যায়, মাস্ক একটু আগুনে পুড়িয়ে ফেলা যায় তাহলে তা রিসাইকেল করে বিক্রি করা সম্ভব হবে না। কেউ যদি পিপিই বা সার্জিক্যাল ক্যাপ ব্যবহার করেন সেক্ষেত্রেও একই কাজ করা উচিৎ।"
এএসএম আলমগীর ব্যবহৃত সুরক্ষাসামগ্রী আলাদা ব্যাগে ভরার কথা বলছেন। এতে করে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা তা আলাদা করে চিহ্নিত করতে পারবে।
তিনি বলছেন, "বাড়িঘরে উৎপাদিত বর্জ্য ফেলতে প্রতিদিন নতুন ময়লার ব্যাগ ব্যবহার করা উচিৎ। বালতিতে রেখে সেটি ময়লার ভ্যানে তুলে না দিয়ে ব্যাগে ভরে, ব্যাগের মুখ গিট দিয়ে তবেই পাড়ার বর্জ্য সংগ্রহকারীকে দেয়া উচিৎ।"