ফারুক আহমাদ আরিফ: বাংলাদেশের রাজনীতিতে আগস্ট মাস যেমন গুরুত্বপূর্ণ। তেমনি যেনো করোনাতেও সেই প্রভাব দেখিয়ে বিদায় নিলো মাসটি। এ মাসে করোনায় একের পর এক রেকর্ড ভাঙা-গড়া দেখা যায়। ৫, ৭ ও ১০ আগস্ট দেশের সর্বোচ্চ মৃত্যু দাঁড়ায় ২৬৪ জনে। আবার ২৮ আগস্ট মৃত্যু নেমে আসে ৮০ জনে। শনাক্তের দিকেও কোনোভাবে কম যায়নি মাসটি। ২ আগস্ট এক দিনে শনাক্ত দাঁড়ায় ১৫ হাজার ৯৮৯ জনে। অপরদিকে সুস্থতার দিক দিয়েও আগস্ট এগিয়ে। ৮ আগস্ট সারাদেশে ১৬ হাজার ৬২৭ জন সুস্থ হয়। করোনায় বাংলাদেশে আগস্ট এক মনে রাখার মাসই বটে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চলতি আগস্ট মাসে প্রাণ যায় ৫ হাজার ৪ শত ২০ জন মানুষের। মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) ৮৬ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এ সংখ্যা দাঁড়ায়। ১৮ মার্চ ২০২০ সাল হতে ২০২১ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু হয় ২০ হাজার ৬৮৫ জনের। আর আগস্ট মাসেই মৃত্যু হয় ৫ হাজার ৪ শত ২০ জন মানুষের। এ নিয়ে দেশে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ায় ২৬ হাজার ১৯৫ জনে।
চলতি আগস্ট মাসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাছিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিগুলোর তথ্য পর্যালোচনা করে এ কথা জানা যায়।
মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৩ হাজার ৩৫৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এতে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৬১৮ জনে। ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৪ হাজার ১০২ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ১৪ লাখ ২৫ হাজার ৯৮৫ জন।
আগস্ট মাসে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ২ লাখ ৫৫ হাজার ৭৯১ জনের। ৮ মার্চ ২০২০ সাল হতে ২০২১ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হয় ১২ লাখ ৪৯ হাজার ৪৮৪ জনের দেহে। শুধু আগস্ট মাসে শনাক্ত হয় ২ লাখ ৫৫ হাজার ৭৯১ জনের দেহে। এখন পর্যন্ত ১৫ লাখ ৬১৮ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
আগস্ট মাসে সুস্থ হয়েছে ৩ লাখ ৬০ হাজার ৮৯৪। ২০২১ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত সুস্থ হয় ১০ লাখ ৭৮ হাজার ২১২ জন। এখন পর্যন্ত মোট সুস্থ ১৪ লাখ ২৫ হাজার ৯৮৫ জন।
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে মৃত্যু হয় ১৭২৬ জনের, দ্বিতীয় সপ্তাহে ১৫৭৭ জনের, তৃতীয় সপ্তাহে ১১৫৫ ও চতুর্থ সপ্তাহে ৯৬২ জনের। এ মাসে মোট মৃত্যু হয়েছে ৫ হাজার ৪২০ জনের।
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে নতুন রোগী শনাক্ত হয় ৯৩ হাজার ৯১১ জন, দ্বিতীয় সপ্তাহে ৬৮ হাজার ৮২২ জন, তৃতীয় সপ্তাহে ৪৪ হাজার ৯৭৬ জন ও চতুর্থ সপ্তাহে ৪৮ হাজার ৮২ জন। এ মাসে শনাক্ত হয়েছে ২ লাখ ৫৫ হাজার ৭৯১ জনের।
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে সুস্থ হয়েছে ১১ লাখ ৬০৮ জন, দ্বিতীয় সপ্তাহে ১ লাখ ৮১৪ জন, তৃতীয় সপ্তাহে ৭৯ হাজার ৬৩২ ও চতুর্থ সপ্তাহে ৬৯ হাজার ৮৪০ জন। এ মাসে মোট সুস্থ হয়েছেন ৩ লাখ ৬০ হাজার ৮৯৪ জন।
ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলজি, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোশতাক হোসেনকে আগস্ট মাসের করোনায় মৃত্যু, সংক্রমণ ও সুস্থতা বিষয়ে প্রশ্ন করতে তিনি সান নিউজকে বলেন, আগস্ট মাসের প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে গিয়েছিলো। সেখানে থেকে ফিরে আসা সম্ভব হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৮০ শতাংশ মানুষই হাসপাতালে ভর্তি হতে পারে না। তার মধ্যে ২০ শতাংশ হাসপাতালে ভর্তি হলেও মাত্র ১৫ শতাংশ রোগী বাঁচে এবং ৫ শতাংশ করোনা রোগীর মৃত্যু হয়।
তিনি বলেন, আমাদের খুব খেয়াল করে চলতে হবে কেননা গুচ্ছভিত্তিক সংক্রমণটি খুবই ভয়াবহ। এ থেকে রেহাই পাওয়া কঠিন। সেক্ষেত্রে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা এক সাথে খেলাধুলা করে অথবা একই রুমে থাকবে তাদের ভিন্ন রুপে না যাওয়ায় ভালো হবে। কেননা পুলিশরা ব্যারাকে এক সঙ্গে থাকে সেখানে তারা আক্রান্তও বেশি হয়েছে।
তিনি বলেন, একটি দিয়াশলাইয়ের আগুন হয়তো বেশি কিছু না তবে খড়ের গাদায় আগুন লাগলে যেমন ভয়াবহ হয়ে উঠে তেমনি গুচ্ছভিত্তিক সংক্রমণও ভয়াবহ। সবাইকে সচেতন হয়ে চলতে হবে। এখন হয়তো করোনায় মৃত্যু বা শনাক্তের সংখ্যা কমছে এটি যে আবার উল্টি মারবে না তার কোনো নিশ্চিয়তা নেই।
সান নিউজ/এফএআর