সান নিউজ ডেস্ক: দেশব্যাপী মারাত্মকভাবে হানা দিয়েছে করোনা। এর মধ্যেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঈদুল আযহা। লকডাউন ও বিধিনিষেধের ভিতর দিয়েই সারা দেশে বসছে কোরবানির পশুর হাট। তবে হাটে বিক্রির জন্য আসা এতো গরুর মধ্যে অনেকগুলোই থাকতে পারে রোগাক্রান্ত অথবা ক্ষতিকর রাসায়নিক ও ওষুধযুক্ত। কোরবানীর যোগ্য সুস্থ গরু চেনার জন্য লক্ষ্য রাখতে হবে কয়েকটি বিষয়।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল হাশেমের মতে, স্টেরয়েড দিয়ে মোটাতাজা করা গরু দেখতে আকর্ষণীয়, চকচকে ও হৃষ্টপুষ্ট দেখালেও আসলে সেগুলো মোটাতাজা হয় না। বরং এসব ক্ষতিকর উপাদান রান্নার পরেও মাংসে থেকে যাওয়ার সেটা খেলে রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
গরুর রোগবালাই:
কোরবানীর ঈদ সামনে রেখে প্রতি বছর একদল অসাধু ব্যবসায়ী কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই গরু মোটা করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ও রাসায়নিক মাত্রাতিরিক্ত প্রয়োগ করে। এতে গরুর শরীরে অতিরিক্ত পানি জমতে শুরু করে। এতে গরুটির কিডনি, ফুসফুস, পাকস্থলী ও যকৃত নষ্ট হতে থাকে এবং গরুটি মারাত্মক অসুস্থ হয়ে যায়।
এছাড়া অনেক গরু খুড়া রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এ রোগে আক্রান্ত গরুর শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চাইতে বেশি থাকে উল্লেখ করে অধ্যাপক আবুল হাশেম বলেন, সুস্থ গরুর দেহের তাপমাত্রা ১০২ থেকে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট হয়।
এছাড়া খুড়া রোগাক্রান্ত গরুর ক্ষুর ও মুখে ঘা থাকতে পারে, আক্রান্ত গরু খুড়িয়ে হাঁটবে এবং খাবার খেতে চাইবেনা বলেও জানান তিনি।
সুস্থ ও অসুস্থ গরু শনাক্তের উপায়:
সুস্থ ও অসুস্থ গরু শনাক্তের জন্য যেসব বিষয় মাথায় রাখতে হবে
১. রাসায়নিক বা ওষুধ দেয়া গরুর মাংসপেশি থেকে শুরু শরীরের অন্য অঙ্গগুলো অস্বাভাবিকভাবে ফুলে থাকে। শরীরে পানি জমায় বিভিন্ন অংশে চাপ দিলে সেখানে গর্ত হয়ে দেবে যাবে, এবং স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে সময় নেবে।
৩. অতিরিক্ত ওজনের কারণে এ সব গরু চলাফেরা বা স্বাভাবিক নাড়াচাড়া করতে পারেনা। শান্ত থাকে।
৪. রাসায়নিকযুক্ত গরু ভীষণ ক্লান্ত থাকবে এবং ঝিমাবে। সুস্থ গরুর গতিবিধি চটপটে থাকে। পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বুঝে প্রতিক্রিয়া দেখায়। কান ও লেজ দিয়ে মশা মাছি তাড়ায়।
৫. রাসায়নিক বা ওষুধ খাওয়ানো গরুর শরীরের অঙ্গগুলো নষ্ট হতে শুরু করায় এগুলো শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুত হয়। মনে হবে যেন হাঁপাচ্ছে।
৬. অতিরিক্ত স্টেরয়েড দেয়া গরুর মুখ থেকে প্রতিনিয়ত লালা ঝরবে। কিছু খেতে চাইবে না। সুস্থ গরুর মুখের সামনে খাবার ধরলে সেটা টেনে খাবে। না হলে জাবর কাটবে।
৭. সুস্থ গরুর নাকের উপরের অংশটা ভেজা বা বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা থাকবে। অন্যদিকে অসুস্থ গরুর নাক থাকবে শুকনা।
৮. সুস্থ গরুর শরীরের রঙ উজ্জ্বল থাকবে। গরুর পিঠের কুজ মোটা, টানটান ও দাগমুক্ত হবে।
৯. সুস্থ গরুর রানের মাংস শক্ত থাকবে। যেখানে রাসায়নিক দেয়া গরুর পা হবে নরম থলথলে।
১০. গরুর শরীরে হাত দিয়ে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মনে হলে বুঝতে হবে গরুটি অসুস্থ।
১১. সুস্থ গরুর চামড়ার ওপর দিয়ে কয়েকটা পাঁজরের হাড় বোঝা যাবে।
কোরবানীর উপযুক্ত পশু:
কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করার গরুগুলো অনেক সময় কেনার পর কোরবানীর অযোগ্য হয়ে পড়তে পারে। এক্ষেত্রে দেশি গরু কেনার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। কেননা চাইলেও দেশ গরু বেশি মোটাতাজা করা সম্ভব না।
কোরবানীর জন্য কোন পশুটি উপযুক্ত তা জেনে নেয়া খুবই জরুরি।
১. গরুর বয়স ন্যূনতম দুই বছর হলেই এটা কোরবানির জন্য উপযুক্ত হবে। এক্ষেত্রে গরুর দাঁত দেখে বয়স যাচাই করে নিতে হবে। গরুর নীচের পাটিতে যদি দুধ দাঁতের পাশাপাশি সামনে অন্তত দুটি কোদালের মতো স্থায়ী দাঁত থাকে তাহলে বুঝতে হবে গরুটি কোরবানির উপযুক্ত হয়েছে।
২. গরুটিকে সম্পূর্ণ সুস্থ হতে হবে। এজন্য শিং ভাঙ্গা লেজ কাটা কিংবা মুখ, জিহ্বা, শরীর, পা, ক্ষুর, গোড়ালিতে কোন ক্ষত আছে কিনা দেখে নিতে হবে।
৩. গাভী কোরবানী দেয়া গেলেও তার আগে অবশ্যই নিশ্চিত হবে যে গাভীটি গর্ভবতী কিনা। গর্ভবতী গাভী কোন অবস্থাতেই কোরবানি দেয়া যাবেনা। সাধারণত গর্ভবতী গাভীর পেট ও ওলান স্ফীত থাকে।
দিনের আলো থাকতে থাকতেই গরু কিনে ফেলা উচিৎ, রাতের বেলা গরুর এতোগুলো বিষয় ঠিকঠাক যাচাই করা সম্ভব নাও হতে পারে।
সান নিউজ/এমএম