চট্টগ্রাম ব্যুরো :
চট্টগ্রাম মহানগরের পাহাড়তলি সরাইপাড়ার বাসিন্দা শারমিন। তিনি মা হয়েছেন ৭ মাস হলো। এরমধ্যে গত জুন মাসের শেষের দিকে জ্বরে আক্রান্ত হন তিনি। চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ গ্রহণের পর সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। কিন্তু কয়েকদিন আগে জ্বরে কাবু হয়ে যায় তার ছোট্ট শিশু ইমতিয়াজ।
চিকিৎসকের পরামর্শানুযায়ী ১২ জুলাই রোববার শিশুটির নমুনা পরীক্ষা করানো হয়। বুধবার (১৪ জুলাই) দুপুরে তার মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তা আসে শিশু ইমতিয়াজ করোনা পজেটিভ! এতে বিস্মিত হয়ে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে ছুটে যান শারমিন। বলেন, সে তো বাসার বাইরে যায় নি। তবুও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলো কিভাবে।
চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. নুরুল হক শনিবার (১৭ জুলাই) সকালে এভাবে কথাগুলো উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, শুধু শিশু ইমতিয়াজ নয়, স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে চলতি জুলাই মাসে এ পর্যন্ত ২৯৬ জন শিশু করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। তবে স্বস্তির বিষয়, এ যাবত কোন শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জনের তথ্যমতে, চট্টগ্রামে শূন্য থেকে ১০ বছর পর্যন্ত ১ হাজার ৮৪৭ জন শিশু এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এরমধ্যে ৯০৮ জন মেয়ে শিশু আর ৯৩৯ জন ছেলে শিশু। গত বুধবার ১০০৩ জন আক্রান্তের মধ্যেও ৩৮ জন শিশু রয়েছে।
চিকিৎসকদের ভাষ্য, পরিবারের বয়স্করা অসতর্ক অবস্থায় শিশুদের কাছে টানছে। এ থেকে শিশুরা করোনা সংক্রমিত হচ্ছে। যা বুঝে উঠাও মুশকিল। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. কাউছার আলম বলেন, আক্রান্ত শিশুর অন্যতম উপসর্গ হচ্ছে শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ। কাশি দেয়া, ঘড়-ঘড় করে শব্দ করা, গলাব্যথা অথবা কানে ব্যথা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তেমন উপসর্গও থাকে না। আর ছোট বাচ্চারা এসব তো বলতেও পারে না। সে কারণে করোনা আক্রান্ত কিনা তা বুঝে উঠা কঠিন।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, চট্টগ্রামে আগে শিশুদের করোনা আক্রান্ত খুবই কম ছিল। তরুণ ও বয়স্কদের করোনা আক্রান্ত বাড়ার সাথে শিশু আক্রান্তও বাড়ছে। স্বাস্থ্যবিধি না মানা ও পরিবারের বয়স্কদের অসচেনতায় এ জন্য দায়ী। এক্ষেত্রে বাইরে থেকে এসে শিশুদের কাছে না টেনে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া ও গোসল করে পরিবারের বয়স্কদের আগে নিরাপদ হতে হবে।
শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, এ সময়ে শিশুদের বাড়তি যত্নের পাশাপাশি ডায়েটে ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স, ভিটামিন-সি, ডি, ক্যালসিয়াম এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে। বেশি করে পানি পান ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের অভ্যাস গড়ে তোলতে হবে।
সান নিউজ/আইকে