চট্টগ্রাম ব্যূরো :
জন্মের পর থেকেই পেট ফোলা ছিল ২ বছর ৮ মাস বয়সী শিশু মোরসালিনের। এক্স-রে করানো হলে দেখা যায়, টিউমারের মতো মাংসপিন্ড। তবে অপারেশনের পর দেখা যায়, টিউমার নয়, শিশুটির পেটে আরেকটি ভ্রূণের অবয়ব।
আজ বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) এমন তথ্য জানিয়েছেন চমেকের শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল্লাহ আল ফারুক। তিনি বলেন, গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (চমেক) শিশু সার্জারি বিভাগে শিশুটির সফল অপারেশন হয়।
অপারেশন শেষে শিশুটির পেট থেকে প্রায় দুই কেজি ওজনের একটি টিউমার আকৃতির মাংসপিন্ড বের করা হয়। দেখতে অনেকটা শিশুর মতো। কিছু অঙ্গ স্পষ্ট বোঝা যায়, কিছু অস্পষ্ট। অসম মাথায় কিছু কালো চুল, আঙুল এবং কিছু নাড়িভুঁড়ি দেখা যায়।
ডা. মো. আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, শিশুটির মায়ের পেটে দুটি ভ্রূণ একসঙ্গে ছিল। পেটে থাকা অবস্থায়ই একটি ভ্রূণ আরেকটির পেটে ঢুকে যায়। ফলে একটি শিশু স্বাভাবিকভাবে ভূমিষ্ঠ হয়, আর তার পেটে আরেকটি ভ্রূণ রয়ে যায়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এটিকে বলা হয়, ফেটাস ইন ফেটু। বাংলায় বলা যায় ভ্রূণের ভেতর ভ্রূণ।
তিনি বলেন, করোনার মহামারির সময়ে এ রকম একটি জটিল অপারেশনের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন চমেকের পরিচালক। তাঁর প্রচেষ্টায় আমরা সফল অপারেশনটি করতে সক্ষম হয়েছি। শিশুটি বর্তমানে শঙ্কামুক্ত। আশা করছি, এক সপ্তাহের মধ্যে শিশুটি বাড়ি ফিরতে পারবে।
চমেক হাসপাতালের সূত্রমতে, পেটের ব্যথা নিয়ে গত ২৯ মে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় শিশু মোরসালিনকে। সেখানে পরীক্ষা করার পর চিকিৎসকরা জানান, শিশু মোরসালিনের পেটে বড় টিউমার রয়েছে। তার অপারেশন করতে হবে দ্রুত সময়ের মধ্যে।
সেজন্য গত ৩ জুলাই চমেক হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়। সেখানে দশদিন চিকিৎসা চলার পর তাকে গত ৭ জুলাই নেওয়া হয় শিশু সার্জারি ওয়ার্ডে। ওই দিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত সফল অপারেশন করার পর জানা গেল টিউমার নয়, শিশু মোরসালিনের পেটে আরেকটি শিশুর ভ্রূণ!
প্রায় সাড়ে ৬ ঘণ্টাব্যাপী টানা এ অপারেশনে নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি ওয়ার্ডের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল্লাহ আল ফারুক। এই টিমে ছিলেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. রাজীব খাস্তগীর, সহকারী অধ্যাপক ডা. এম এ মুশফিকুর রহমানসহ একজন জুনিয়র কনসালটেন্ট ও নার্স।
চিকিৎসকেরা জানান, এ ধরনের রোগী বাংলাদেশে বিরল। চমেকের যে শিশু সার্জারি ওয়ার্ডে অস্ত্রোপচার করা হয়, সেখানে চার বছরের মধ্যে এটিসহ মাত্র দুটি শিশু পেয়েছেন তাঁরা। মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায়ই অন্য একটি ভ্রূণ তার পেটে ঢুকে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান চিকিৎসকেরা।
হাসপাতাল সূত্র আরও জানায়, মোরসালিনের বাবা জুনায়েদের বাড়ি হবিগঞ্জে। গৃহিনী স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে তিনি গত ১৮ বছর ধরে চট্টগ্রাম নগরীর সিআরবি এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। তিনি একজন রিকশা চালক। তার সাত বছর বয়সী আরেক সন্তান রয়েছে।
জুনায়েদ বলেন, মোরসালিনের অপারেশনের জন্য আমি ৬৫ হাজার টাকা ধার দেনা করে খরচ করেছি এই লকডাউনের মধ্যেও। এরপরও ছেলের অপারেশন সফল হয়েছে, এতে আমি খুশি। এ জন্য তিনি চমেক হাসপাতালের চিকিৎসকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
সান নিউজ/আইকে