সান নিউজ ডেস্ক: সকালের নাস্তায় যে খাবারগুলো ঝটপট তৈরি করে চটপট খেয়ে ফেলা যায়, সেগুলোর বেশিরভাগই ক্ষতিকর হয়। বিশেষত বাড়ন্ত কোমর কমানোর ক্ষেত্রে। তাই কোমরের বেড় কমাতে চাইলে এমন খাবার খেতে হবে যা পেট ফোলাভাব কমায় কিংবা ওজন কমাতে সহায়ক।
সরল কার্বোহাইড্রেট: ‘মাফিন’, কেক কিংবা ‘গ্রানোলা বার’ দিয়ে সকালের নাস্তা সেরে ফেলা খুবই সহজ। তবে তা থেকে ক্রমেই কোমর বাড়তে থাকাও তেমনই সহজ।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ব্যালান্স ওয়ান সাপ্লিমেন্ট’র সনদ স্বীকৃত পুষ্টিবিদ ট্রিস্টা বেস্ট বলেন, “সকালের নাস্তায় প্রক্রিয়াজাত কার্বোহাইড্রেট খাওয়ার অভ্যাস অনেকেরিই দেখা যায়। এই খাবারগুলো যে শষ্য থেকে তৈরি তা প্রক্রিয়াজাত করা। আর তাতে কোনো পুষ্টি উপাদান অবশিষ্ট থাকে না বললেই চলে। বিশেষ করে ‘আয়রন’ আর বিভিন্ন ধরনের ‘বি ভিটামিন’ এগুলোতে থাকে না। ফলে এই খাবারগুলো ক্যালরি’তে ভরপুর থাকে, অনেক সময় তা হয় ‘এম্পটি ক্যালরি’।”
ইটদিস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “আর এগুলো প্রকিয়াজাত হওয়ার কারণে শরীর দ্রুত সেগুলো খরচ করে ফেলে কর্মশক্তির উৎস হিসেবে। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায় এবং খাওয়ার পরপরই ‘ইন্সুলিন’ বেড়ে যায় দ্রুত।”
আরেক পুষ্টিবিদ জেইমি ফেইট বলেন, “এমন খাবারের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হল দুধের সঙ্গে ‘সিরিয়াল’ যোগ করে খাওয়া। এই খাবার প্রায় আধা ঘণ্টাতেই শরীর খরচ করে ফেলে। ফলে কিছুক্ষণ পরই আবার ক্ষুধা লাগে। এতে কোমর বেড়ে যাওয়া আশঙ্কাও বাড়ে।”
উপায় কী?
ফেইট বলেন, “সকালের নাস্তায় এমন খাবার বেছে নিতে হবে যা বানানো ও খাওয়া সহজ হওয়ার পাশাপাশি তাতে থাকবে প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি ও ভোজ্য আঁশ। এতে পেট ভরা থাকবে লম্বা সময়। আর প্রক্রিয়াজাত ‘কার্বোহাইড্রেইট’ যে প্রভাব ফেলে ঠিক তার উল্টোটা করে এই খাবারগুলো।
যুক্তরাষ্ট্রের পুষ্টিবিদ ড. জিনান বান্না বলেন, “জেলি মাখিয়ে পাউরুটি না খেয়ে সম্পূর্ণ শষ্য থেকে তৈরি রুটির সঙ্গে বাদামের মাখন বেছে নিতে হবে। সকালের নাস্তায় মিষ্টি কিছু খেতে চাইলে ‘ফ্রুট স্প্রেড’ বেছে নিতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে, তাতে থাকা চাই প্রোটিন, আঁশ ও স্বাস্থ্যকর চর্বি।”
চিনি কম: ‘এ টেস্ট অফ হেল্থ’য়ের পুষ্টিবিদ এবং ‘টেস্টিং ডটকম’য়ের বিশেষজ্ঞ রিচি-লি হটজ বলছেন, “সকালের নাস্তার পদগুলোতে যদি চিনি বেশি থাকে তবে তা কোমরের পরিধি বাড়াতে সহায়তা করবে। আর এই খাবারগুলো রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াবে, যা পরে আরও ক্ষুধা বাড়াবে এবং একসময় প্রয়োজনের চাইতে বেশি খাওয়া হয়ে যাবে অন্য বেলায়। তাই খাদ্যাভ্যাসের ভারসাম্য বজায় রাখার হিসাবটা সকালের নাস্তা থেকেই শুরু করতে হবে।”
একেবারে না খেলেও বিপদ: ওজন কমাতে গিয়ে সকালে নাস্তাকে একেবারেই বাদ দিতে চাইলে তাতে হিতে বিপরীতটা ঘটবে।
হটজ বলেন, “বিতর্ক থাকলেও অনেক বিশেষজ্ঞ দাবি করেন সকালের নাস্তা বাদ দিয়ে কোমর কমে না, উল্টো বাড়ে। কারণ সারারাত না খেয়ে থাকার পর সকালের নাস্তাও বাদ দিয়ে শরীরের বিপাকক্রিয়া দিনের শুরুতে সঠিকভাবে সক্রিয় হয় না। ফলে দিনের শুরুতেই শরীরের কর্মশক্তি কমে যায় এবং সারাদিন শুয়ে বসে দিন কাটাতে মন চায়। শারীরিক পরিশ্রমের অভাব থেকে ক্রমেই তখন পেট ও কোমর বাড়তে শুরু করে।”
‘দ্য স্পোর্টস নিউট্রিশন প্লেবুক’য়ের রচয়িতা অ্যামি গিবসন বলেন, “দিনের শুরুতে সবচাইতে বড় যে ভুলটা করা সম্ভব তা হল সকালের নাস্তা বাদ দেওয়া। বেলা হয়ে আসার পর আপনার প্রচণ্ড ক্ষুধা পাবে। অনেকেই মনে করবেন একবেলা না খেয়ে ক্যালরি গ্রহণের মাত্রা কমানো গেল। তবে ওই বাড়তি ক্ষুধা মেটাতে গিয়ে অনেকেই অস্বাভাবিক মাত্রায় ক্যালরি গ্রহন করে ফেলেন।”
এই পুষ্টিবিদের মতে ডিম, দুধ, পরিপূর্ণ শষ্যের রুটি, ওটমিল, বাদামের মাখন, টক দই, ফল ইত্যাদি হল আদর্শ সকালের নাস্তার উপকরণ।
প্রোটিনের অভাব: সকালের নাস্তায় শুধু কার্বোহাইড্রেইট খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা যেভাবে তড়িৎ গতিতে বাড়ে, কয়েক ঘণ্টা পর সেই গতিতেই আবার কমতে থাকে। রুটি আর কলা স্বাস্থ্যকর খাবার হলেও তা যদি সকালের নাস্তায় খান তবে দুপুরের খাবার খাওয়া হবে অতি মাত্রায়। কারণ আপনি তখন থাকবেন প্রচণ্ড ক্ষুধার্ত।
এজন্যই ডিম, টক দই, বাদামের মাখন ইত্যাদি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া পরামর্শ দেওয়া হয় এসময়। তাড়াহুড়ো করে খাওয়া: কাজে যাওয়া তাড়াহুড়োতে কোনো মতে মুখে দুটো গুঁজে দিয়েই দৌঁড়, সকালে এমনটা অনেকেরই প্রতিদিনের ঘটনা।
‘ইজেড-কেয়ার ক্লিনিক’য়ের সনদ স্বীকৃত পুষ্টিবিদ শ্যানন হেনরি বলছেন, “খাওয়া শুরু করার ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর্যন্ত মস্তিষ্ক টের পায় না যে পেট ভরেছে কি-না। তাই সকালের নাস্তা ১০ মিনিটে সেরে ফেললে মস্তিষ্ক পেটের অবস্থা বোঝার সুযোগই পায় না এবং ক্ষুধাভাবটা রয়েই যায়।”
যে কারণে পরের বেলায় প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাওয়া হয়ে যায়। আর এভাবেই কোমরের বেড় বাড়তে থাকে।
সান নিউজ/এমএম