চট্টগ্রাম ব্যূরো :
করোনা আক্রান্ত হয়ে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন ঝুমা আক্তার (২৩)। পেটে তার ১০ মাসের অনাগত সন্তান। হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলার মাধ্যমে ঘণ্টায় ৬০ লিটার করে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছিল তাকে। এরমধ্যে হঠাৎ তার প্রসব বেদনা উঠে।
শেষ পর্যন্ত হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের প্রচেষ্টায় ফুটফুটে এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তিনি। আর করোনার যন্ত্রণার কথা ভুলে গিয়ে মা হওয়ার ভি-চিহ্ন প্রদর্শণ করেন ঝুমা আক্তার।
চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের করোনা ইউনিটের আইসিইউ ওয়ার্ডে মা হন ওই নারী। সময় তখন বৃহ¯পতিবার (১ জুলাই) রাত সাড়ে ৯টা। তখন থেকে পরবর্তি ২৪ ঘন্টা বিষয়টা কাউকে জানতে দেননি মা ও শিশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। নানা শঙ্কা কাটিয়ে শুক্রবার (২ জুলাই) দিনগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানান তারা।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের পরিচালনা পরিষদের সদস্য মো. জাবেদ আফসার চৌধুরী বলেন, রোগীর অবস্থা খুব খারাপ ছিল। তাকে ঘন্টায় ৬০ লিটার করে অক্সিজেন দিতে হচ্ছিল। এ অবস্থায় সন্তান জন্ম দেওয়াটা ছিল কঠিন কাজ। আমরা খুব চিন্তিত ছিলাম। যদি অস্ত্রোপচার করতে হতো, তাহলে ঝুঁকিতে পড়তে হতো। হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের প্রচেষ্টায় নরমাল ডেলিভারি সম্ভব হয়েছে। এরপরও নানা শঙ্কায় আমরা মা ও শিশুকে ২৪ ঘন্টা পর্যবেক্ষণে রেখেছি।
তিনি বলেন, ঝুমা আক্তারকে এখনও হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা দিয়ে ঘণ্টায় ৬০ লিটার অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। ওনার অবস্থা স্থিতিশীল। নাকে হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা লাগিয়েও ঝুমা আক্তার মা হওয়ার পর ভি-চিহ্ন দেখিয়েছেন। তিনি অনেক সাহসী। আশা করছি আল্লাহর রহমতে তিনি ভালো হয়ে যাবেন। জন্ম নেওয়া নবজাতকটিও ভালো আছে। নবজাতকের ওজন প্রায় আড়াই কেজি।
শিশুটি করোনা আক্রান্ত কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, গর্ভে থেকে করোনা নিয়ে আসার সম্ভাবনা খুবই কম। শিশুটিকে আরও একদিন দেখার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। শিশুটি বর্তমানে তার অভিভাবকদের কাছেই আছে।
হাসপাতালের তথ্যমতে, ঝুমা আক্তার (২৩) চট্টগ্রামের মিরসরাই এলাকার মানসী ভিলায় থাকেন। তার স্বামীর নাম আব্দুল মোতালেব। আবদুল মোতালেবের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে। অন্তঃসত্ত্বা ঝুমা আক্তারের জ্বর ও কাশিসহ করোনার লক্ষণ দেখা দেয়। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় মিরসরাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে তাকে না রেখে পাঠিয়ে দেওয়া চট্টগ্রাম মহানগরীতে। এরপর ২৮ জুন তাকে ভর্তি করা হয় আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে। পরে পরীক্ষায় তার করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় নেওয়া হয় হাসপাতালটির করোনা ইউনিটের আইসিইউ ওয়ার্ডে। সেখানে তাকে হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা দিয়ে ঘণ্টায় ৬০ লিটার অক্সিজেন দেওয়া শুরু হয়। নিজে বাচতে যখন প্রাণপণ যুদ্ধ এই সময়ের মধ্যে বৃহ¯পতিবার রাতে উঠে তার প্রসব বেদনা।
পরে মা ও শিশু হাসপাতালের আইসিইউর চিকিৎসক ফাহিম রেজা, ডা. আফরা, ডা. মাকসুদা হক, ডা. রাহুল, ডা. ইমরান, সিনিয়র স্টাফ নার্স ইনচার্জ রূপনা বড়ুয়া, সিনিয়র নার্স রোকেয়া, মিডওয়াইফ সেতু, আইরিন, সালমাসহ একটি টিম আইসিইউতে বিশেষ ব্যবস্থায় ঝুমা আক্তারের সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখানোর চেষ্টা শুরু করেন। পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন ঝুমা।
মা ও শিশু হাসপাতালের ট্রেজারার রেজাউল করিম আজাদ বলেন, আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে দুই মাস আগেও করোনা পজিটিভ এক নারীর সন্তান নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে ভূমিষ্ঠ করানো হয়েছিল। তবে ওই রোগীর অবস্থা ঝুমা আক্তারের মতো এতটা খারাপ ছিল না।
সান নিউজ/ আইকে