চট্টগ্রাম ব্যূরো :
বোতলের বাটনে চাপ দিলেই মিলছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, টাকার মতো উত্তোলন হচ্ছে ১টি করে মাস্ক। পাশাপাশি ডাস্টবিনে ফেলা হচ্ছে ব্যবহৃত মাস্কও। বিনামূল্যে এই সেবা সকলের জন্য উন্মুক্ত।
এটিএম বুথের আদলে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক উপ অর্থ-স¤পাদক হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের তৈরী করোনা রোধক এই বুথ নজর কেড়েছে চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষ ও পথচারীদের। ‘করোনা ঠেকাতে ফ্রি মাস্ক’ এমন ¯ে¬াগান নিয়ে শুরু হওয়া এই বুথ এখন বন্দর নগরী ছেড়ে ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশেও।
যুবলীগ নেতাকর্মী ও নগরবাসীর তথ্যমতে, গত ১ মে চট্টগ্রাম মহানগরের এনায়েত বাজার, নন্দনকানন ও আন্দরকিল্লা মোড়ে প্রথম করোনা প্রতিরোধক বুথ স্থাপন করেন হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর। পরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কার্যালয়, সিটি করপোরেশন কার্যালয় থেকে নগরীর শ‘খানেক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থাপন করা হয় এই বুথ। বর্তমানে নগরীর আরো ৫০০ পয়েন্টে এই বুথ স্থাপনের কাজ চলছে।
এছাড়া রাজশাহী, পিরোজপুর, মাদারীপুর, হবিগঞ্জ, সিলেট, ফেনী, নোয়াখালী, ঢাকা, যশোর, কুমিল্লাসহ দেশের বেশিরভাগ জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় পৌঁছে গেছে এই বুথ। শুধু তা নয়, পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান এবং খাগড়াছড়ির মানুষেরা ব্যবহার করতে পারছেন এই বুথ। বাকী জেলাগুলোতেও এই বুথ পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ফাউন্ডেশনের সহায়তায় এসব বুথ স্থাপনের কাজ চলছে। এই বুথ যাতে নিজেরাই তৈরি করে ব্যবহার করতে পারে সেই সুবিধার্থে করোনা প্রতিরোধক বুথ তৈরির প্রক্রিয়া ভিডিও করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার (২ জুলাই) সকালে করোনা প্রতিরোধক বুথ তৈরীর শুরু থেকে শেষের গল্প শুনিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় উপ-অর্থ স¤পাদক হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর। তিনি বলেন, শহরে এমন বহু নিন্মবিত্ত মানুষ আছে টাকা দিয়ে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিনতে অক্ষম। এই কারণেই তারা মাস্ক ব্যবহার করতো না। কিন্তু তাদেরই করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। আমি চাচ্ছিলাম তারা যাতে প্রতিনিয়ত মাস্ক-স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে পারে। মনে হলো একটা নির্দিষ্ট স্থানে তারা যাতে এগুলো ব্যবহার করতে পারে এমন কিছু তো আমি করতে পারি।
মাথায় আসলো এটিএম বুথে যেভাবে মানুষ টাকা তুলতে পারে সেভাবে যদি মাস্ক-স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে পারে তাহলে কেমন হয়! কার্পেন্টার ডেকে এটিএম বুথের আদলে একটি বক্স বানাই, যেখান থেকে একদিকে বিনামূল্যে মাস্ক নিতে পারবেন, সেই সঙ্গে দুই হাতও স্যানিটাইজ করতে পারবেন। ব্যবহৃত পুরোনো মাস্ক ফেলার জন্য একই বক্সে একটি ডাস্টবিনও রাখি। তারপর নগরের বিভিন্ন স্থানে ব্যক্তিগত উদ্যোগে এগুলো স্থাপন করি।
হেলাল আকবর বলেন, শুরুর দিকে নিজেই এই বুথ স্থাপন করলেও এটি পুরো চট্টগ্রামে ছড়িয়ে দিতে আমি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ফাউন্ডেশনের সহায়তা নেই। যদিও এই প্রচেষ্টায় বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলের আক্রোশের শিকার হয়ে কিছুটা থমকে যেতে হয়েছে আমাকে। তাই আমার বা ফাউন্ডেশনের ছবি ব্যবহার ছাড়াই এই বুথের সংখ্যা বাড়াতে থাকি। কারণ নিজেদের প্রচার নয়, মানুষকে বিনামূল্যে এই সেবা দেওয়াই আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল।
আমার মনে হলো এই বুথ সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া দরকার। দেশে এমন অনেকে আছে, যারা বিনামূল্যে এগুলো পেলে ব্যবহার করবে, করোনাসংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকবে। এভাবেই সারাদেশে এই বুথ ছড়িয়ে দেওয়ার ভুত চেপে বসে মাথায়। ফাউন্ডেশনের ব্যানারে টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে ধীরে ধীরে এই বুথ ছড়িয়ে দিতে থাকি প্রতিটি জেলায়।
তিনি আরও বলেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলমের নির্বাচনী এলাকা রাজশাহীর চারঘাটেও মহিউদ্দিন চৌধুরী ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আমি এই বুথ পাঠিয়েছি। শুধু তাই নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এসব করোনা প্রতিরোধক বুথ পাঠিয়ে অনুরোধ করেছি যদি সম্ভব হয় এমন আরও বুথ তৈরি করুন। তারা আমাদের এই অনুরোধ রেখেছেন। আমাদের পাঠানো এসব বুথের মত আরো বেশ কিছু বুথ তৈরি করে নিজেদের এলাকায় স্থাপন করেছেন।
হেলাল আকবর জানান, রাজশাহীতে ২টি বুথ উপহার পাঠানোর পর স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিরা তাদের নিজদের অর্থায়নে ৩০টি বুথ তৈরি করে ছড়িয়ে দিয়েছেন জেলার আনাচে-কানাচে। জানা গেলো, দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে এই বুথ। করোনা প্রতিরোধক বুথ তৈরির প্রক্রিয়া ভিডিও দেখে ভারতের কলকাতা, বারাসাত এবং চীনের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে সহযোগিতার অনুরোধ করা হয়েছে। তারা এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নিজেদের দেশে আরো উন্নতভাবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ব্যবহার করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
হেলাল আকবর বলেন, দেশের হাসপাতালগুলোতে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের মাধ্যমে ডাক্তারেরা যদি করোনা রোগীর সং¯পর্শে এসে নিজে সুস্থ থাকতে পারেন, তাহলে আমরাও আমাদের স্বাভাবিক জীবনে এগুলোর যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে করোনার সঙ্গে লড়াই করতে পারবো। আমার অনুরোধ, আপনারা আমাদের এই করোনা-প্রতিরোধক বুথ ব্যবহার করুন। সামর্থ থাকলে নিজ উদ্যোগে এ ধরনের বুথ তৈরি করে নিজেদের এলাকায় স্থাপন করুন। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা করোনা মোকাবিলা করতে সক্ষম হবো বলে আমার বিশ্বাস।
সান নিউজ/আইকে