নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েচেন, দেশে গত দেড় মাসে দশগুণ করোনা সংক্রমণ বেড়েছে।
তিনি বলেন, করোনা ভয়াবহভাবে বাড়ছে। গত দেড় মাসে এক লাখ ৬০ হাজার জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, যা এর আগের দেড় মাসে ছিল মাত্র ১৫ হাজার জন। আক্রান্তদের অধিকাংশই আইসিইউর জন্য হাসপাতালে ছোটাছুটি করছেন। আমরা আপনাদের আইসিইউতে দেখতে চাই না।
রোববার দুপুরে মহাখালীর ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতাল উদ্বোধনের সময় তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আইসিইউ নিয়ে শুরুতে নানা আলোচনা সমালোচনা ছিল। সবাই বলেছিল আমাদের আইসিইউর সংখ্যা কম। ঢাকায় দুইশ থেকে আড়াইশটি আইসিইউ রয়েছে। সব মিলিয়ে সারাদেশে পাঁচশ’র অধিক আইসিইউ হবে। এখন আমাদের আইসিইউ সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ডিএনসিসির করোনা হাসপাতলে ২১২টি আইসিইউ যুক্ত হয়েছে। সবমিলিয়ে রাজধানীতে যতসংখ্যক আইসিইউ, তার সমপরিমাণ আইসিইউ এই হাসপাতালে তৈরি হয়ে গেছে।
জাহিদ মালেক বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে ঢাকা শহরে সরকারি হাসপাতালে পাঁচ হাজার শয্যা রয়েছে। শুরুতে প্রাইভেট হাসপাতাল করোনা চিকিৎসায় না এলেও পরবর্তী সময়ে এক হাজার শয্যা নিয়ে তারা কাজ শুরু করে। পরবর্তী সময়ে তা দুই হাজার শয্যায় পরিণত হয়েছে। ফলে সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে আট হাজার শয্যা হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এক শয্যায় দুজনকে রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। বিভিন্ন উন্নত দেশগুলোতে তাঁবুতে রেখে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে হচ্ছে। কিন্তু এখনো আমরা রোগীদের হাসপাতালে রেখেই চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি।
তিনি বলেন, শুরুতে আমাদের হাসপাতালগুলোতে সেন্ট্রাল অক্সিজেন ছিল না। এখন আমরা ১০০টি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন দিয়েছি। আরও ৩০টি সেন্ট্রাল অক্সিজেনের কাজ শেষ পর্যায়ে। প্রতিটি সরকারি হাসপাতালকেই সেন্ট্রাল অক্সিজেনের আওতায় আনা হচ্ছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা দেখছি যে, ১৫ থেকে ২০ বছরের তরুণরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। তবে তাদের মৃত্য কম হচ্ছে। কিন্তু তারা বাসায় এসে মা-বাবাসহ বয়স্কদের সংক্রমিত করছে। তরুণদের উদ্দেশ্যে বলবো, আপনারা বাইরে যাবেন, তবে মাস্ক পরবেন। নিজে ভালো থাকবেন, অন্যদের ভালো রাখবেন। আমরা প্রিয়জনদের মৃত্যুর কারণ যেন না হই।
জাহিদ মালেক বলেন, গত বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্তের পর পর্যায়ক্রমে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এর বিস্তার ঘটে। এর প্রেক্ষাপটে ডিএনসিসি মার্কেটটিকে কোভিড-১৯ রোগীদের সেবা প্রদানের নিমিত্তি কিছুটা সংস্কার ও পরিবর্ধন করে এটিকে এক হাজার শয্যার করোনা আইসোলেশন সেন্টার হিসেবে প্রস্তুত করা হয়। পরবর্তী সময়ে গত বছরের ১৩ জুলাই এটির কার্যক্রম চালুর প্রাক্কালে সরকারের নানাবিধ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। ফলে করোনা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলে কোভিড আইসোলেশন কার্যক্রমটি স্থগিত করে এটিকে বিদেশগামী যাত্রীদের আরটি-পিসিআর স্যাম্পল কালেকশন সেন্টার হিসেবে কার্যক্রম শুরু করা হয়, যা অদ্যবধি অব্যাহত রয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, গত ২০-২৫ দিন ধরে কোভিড রোগে আক্রান্তের সংখ্যার ও তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। এ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে করোনায় আক্রান্ত সকল রোগীদের সুচিকিৎসার জন্য ডিএনসিসি করোনা আইসোলেশন সেন্টারটিকে প্রয়োজনীয় সংস্কার ও পরিবর্ধন করে এটিকে কোভিড-১৯ হাসপাতাল হিসেবে রূপান্তর করা হয়েছে। এটি এখন থেকে ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত হবে।
জাহিদ মালেক বলেন, এই হাসপাতালটিতে ২১২ শয্যার অত্যাধুনিক কোভিড আইসিইউ বেড রয়েছে। ২৫০ কোভিড বেড (HDU, Central Oxygen ও High Flow Nasal Canulla ) ব্যবস্থাসহ অন্যান্য ব্যবস্থা থাকছে। এখানে ৫০ শয্যার জরুরি বিভাগ ও ০৬ শয্যা ট্রায়াজ বেড রয়েছে। তাছাড়া ৫৩৮ কোভিড আইসোলেটেড কক্ষ থাকবে যেখানেও সিলিন্ডার অক্সিজেন ও অক্সিজেন কনসেনট্রেটর থাকবে।
হাসপাতালটিতে সর্বমোট ১০০০ শয্যার কোভিড রোগীর জরুরি চিকিৎসা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাসপাতালটিতে আধুনিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তাছাড়া ৫০০ কেভিএ জেনারেটর ও ১০০০ কেভিএ হাই ভোল্টেজ বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা করা হয়েছে। অগ্নিনির্বাপণের জন্য ৯০০০০ লিটার ওয়াটার রিজার্ভার থাকছে।
জাহিদ মালেক বলেন, আজ থেকে কোভিড রোগীদের বিশেষায়িত চিকিৎসা প্রদানের জন্য এটি চালু করা হলো। এটি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী সদস্যদের নিয়ন্ত্রণে থেকে পরিচালিত হবে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এই হাসপাতালটির জনবল, যন্ত্রপাতি ও ওষুধপত্রসহ দৈনন্দিন নির্বাহের সামগ্রিক ব্যয়ভার বহন করবে। সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা রোগী সেবা কার্যক্রমে নিয়োজিত থাকবেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এই বিশাল ভবনটি কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করার ব্যবস্থা করেছেন, যা এই সংকটময় পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
মন্ত্রী বলেন, আইসোলেশন সেন্টারটি কোভিড হাসপাতালে রূপান্তরের জন্য স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বশির আহমেদ সহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দিবারাত্রি নিরলস পরিশ্রম করে এত অল্প সময়ে এই বিশাল কার্যক্রম সম্পন্ন করে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আমি সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
সান নিউজ/আরআই