আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিশ্ব শ্রবণ দিবস আজ। বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে বিশ্ব শ্রবণ দিবস। বিশ্বব্যাপী ২০৫০ সাল নাগাদ আনুমানিক ২৫০ কোটি (প্রতি ৪ জনে ১ জন) মানুষ শ্রবণ সমস্যায় ভুগবে।
মঙ্গলবার (২ মার্চ) এ উপলক্ষে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ডব্লিউএইচও। প্রকাশিত প্রতিবেদনে বৈশ্বিক শ্রবণ বিষয়ে এমন সতর্কবার্তা দেয়া হয়। ডব্লিউএইচও জানায়, অন্তত ৭০ কোটি লোকের কান ও শ্রবণজনিত চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে, যদি না তারা এখনই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
এ বিষয়ে ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক টেড্রোস এ্যাডহ্যানম বলেন, আমাদের শ্রবণ ক্ষমতা অত্যন্ত মূল্যবান। চিকিৎসার অভাবে শ্রবণশক্তি হ্রাস পেলে তা পড়াশোনা, যোগাযোগ ও জীবিকা নির্বাহের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। একই সঙ্গে তা মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য ও সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রেও ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
তিনি আরও বলেন, এ প্রতিবেদন আমাদের সমস্যার একটা রূপরেখা দিয়েছে মাত্র। একই সঙ্গে এটি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রতিটি দেশকে বাস্তব প্রমাণ ভিত্তিক সমাধান খুঁজতে উৎসাহ প্রদানে সাহায্য করবে।
প্রতিবেদনটিতে শ্রবণ সমস্যা প্রতিরোধে দ্রুত উদ্যোগ নেয়ার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা তুলে ধরা হয়েছে। একই সঙ্গে কান ও শ্রবণ সেবার জন্য প্রয়োজনীয় সুবিধা ও বিনিয়োগ বরাদ্দ করতেও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে কান ও শ্রবণ সেবায় বিনিয়োগকে ব্যয় সাশ্রয়ী বলেও উল্লেখ করা হয়। এ খাতে প্রতি ১ ডলার বিনিয়োগে ১৬ ডলার পর্যন্ত ফেরত আসতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়।
ডব্লিউএইচও জানায়, যথাযথ তথ্য ঘাটতি ও অবহেলার কারণে অনেক মানুষই শ্রবণ সমস্যার জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণে ব্যর্থ হয়। এমনকি অনেক স্বাস্থ্যসেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানের এ-সংক্রান্ত দক্ষতারও অভাব রয়েছে। পাশাপাশি অনেক দেশেই এখন পর্যন্ত কান ও শ্রবণসেবাকে জাতীয় স্বাস্থ্য খাতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য ব্যবস্থায় এ সমস্যাটির খুব অল্প পরিমাণই শনাক্ত ও তালিকাভুক্ত করা হয়, যা এ সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাস্থ্য বিষয়ক সেবাখাতে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি রয়েছে জনবলের। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের প্রায় ৭৮ শতাংশ দেশে প্রতি ১০ লাখ নাগরিকের বিপরীতে একজনের কম নাক-কান ও গলা বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। ৯৩ শতাংশ দেশে প্রতি ১০ লাখের বিপরীতে একজনেরও কম শ্রবণ বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। কেবল ১৭ শতাংশ দেশে প্রতি ১০ লাখের বিপরীতে একজন অথবা তার বেশি স্পিচ থেরাপিস্ট রয়েছেন।
৫০ শতাংশ দেশে প্রতি ১০ লাখের বিপরীতে একজন বা তার বেশি শিক্ষক রয়েছেন শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের জন্য। তবে প্রাথমিক স্বাস্থ্য খাতে এসব সমস্যা অন্তর্ভুক্তির পাশাপাশি যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদান স্বাস্থ্যসেবা খাতের এ ঘাটতি কমাতে সাহায্য করবে বলে জানায় ডব্লিউএইচও।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যেসব দেশে পর্যাপ্ত কান ও শ্রবণসেবা বিশেষজ্ঞ রয়েছেন, সেখানেও বিশেষজ্ঞদের দায়িত্ব বণ্টনজনিত ঝামেলা দেখা যায়। এটি শুধু এ বিশেষজ্ঞদের জন্য প্রতিবন্ধকতাই সৃষ্টি করে না বরং তাদের ওপর অযৌক্তিক প্রত্যাশাও চাপিয়ে দেয়।
ডব্লিউএইচও জানায়, শিশুদের মাঝে অন্তত ৬০ শতাংশের শ্রবণ সমস্যা দূর করা যায় কেবল মা ও নবজাতকের যথাযথ যত্ন, রুবেলা ও মস্তিষ্কের ঝিল্লির প্রদাহ প্রতিরোধে টিকাদানের মাধ্যমে। বয়স্কদের ক্ষেত্রে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ, নিরাপদ শ্রবণমাত্রা ও ওটোটক্সিক ওষুধের পাশাপাশি কানের যত্ন নেয়ার মাধ্যমে শ্রবণ সমস্যা দূরীকরণ সম্ভব।
ডব্লিউএইচওর মতে, শ্রবণশক্তি হ্রাস ও কানের রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে প্রাথমিক ধাপ হলো শুরুতেই সমস্যা নির্ণয় করা। এরপর যথাযথ চিকিৎসা নেয়ার মাধ্যমে তা প্রতিরোধ করা। যত তাড়াতাড়ি সমস্যা নির্ণয় করা সম্ভব হবে ততই শ্রবণশক্তি হ্রাসের সম্ভাবনা কমে আসবে বলে জানায় ডব্লিউএইচও।
সান নিউজ/এসএ