সাইদুর রহমান রুমী :
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিমেডিসিন সেবা কার্যক্রম আরো নতুন আঙ্গিকে শুরু হতে যাচ্ছে ,যাতে দেশের যে কোন প্রান্ত হতে রোগীরা অনলাইনে নির্ভরযোগ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সেবা পাবেন।
অত্যাধুনিক এই সিস্টেমে রোগীরা অনলাইন ডায়াগনোসিস সিস্টেমের আওতায় রোগীর প্রয়োজনে ব্যবহার করা হবে ইলেকট্রনিক স্টেথোস্কোপ ও ১২-লিড ডিজিটাল ইসিজি মেশিন। ফলে রোগীরা ডাক্তারের সাথে সরাসরি সাক্ষাতের মতই সকল সেবা পাবেন। এ জন্য রয়েছে রোগীর অনলাইন ডায়াগনোসিস সিস্টেমের যন্ত্রপাতি এবং রোগীকে দেয়া হবে চিকিৎসকের লিখিত কম্পিউটারাইজড প্রেসক্রিপশন। আর আশার কথা হচ্ছে এসব প্রযুক্তির সবই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের নিজেদের প্রযুক্তিতে তৈরি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল ফিজিক্স এন্ড টেকনোলজি বিভাগের অনারারী প্রফেসর এবং এ প্রজেক্টের প্রধান বিজ্ঞানী ডঃ খোন্দকার সিদ্দিক-ই রব্বানী সান নিউজকে জানান, "বর্তমানে আমাদের এ প্রজেক্টে অনলাইন ইলেকট্রনিক স্টেথোস্কোপ ও ১২-লিড ডিজিটাল ইসিজি যন্ত্র চালু আছে, ভবিষ্যতে আরও যন্ত্র সংযুক্ত হবে। চিকিৎসক আমাদের সফটওয়্যারের সাহায্যে অল্প সময়ে একটি লিখিত প্রেসক্রিপশন তৈরি করে ‘ক্লাউড’ সার্ভারে সাথে সাথে জমা করতে পারবেন। গ্রামীণ কেন্দ্রের অপারেটর সাথে সাথেই সে প্রেসক্রিপশন ডাউনলোড করে রোগীকে প্রিন্ট করে দিতে পারবেন। এছাড়া সম্প্রতি ‘থাইরোকেয়ার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হয়ে আমরা একদিনের ভিতর প্যাথলজিকাল পরীক্ষার রিপোর্টের ব্যবস্থা করেছি (তবে নিয়মিত বাস সার্ভিসের সাথে এটি সংযুক্ত, কারণ স্যাম্পলগুলিকে কুরিয়ারের মাধ্যমে ঢাকায় পাঠাতে হয়)। বর্তমানে কয়েকটি কেন্দ্রে এটি চালু হয়েছে, ভবিষ্যতে আরও সম্প্রসারণ করা হবে।"
কার্যক্রমটি আরো ব্যাপক এবং সুন্দরভাবে এগিয়ে নিয়ে নেবার জন্য উদ্যোগটিতে চিকিৎসকদের নিবন্ধনে উৎসাহিত করার জন্য তিনি মিডিয়ার সহযোগিতা কামনা করেন। বর্তমান জরুরী পরিস্থিতিতে রোগীদের দোরগোড়ায় এমবিবিএস ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ সেবা দেশের জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য একটি বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ সিস্টেমে পরামর্শের প্রয়োজনে যেকোনো রোগী একটি বিশেষ নাম্বারে ফোন করে ঘরে বসেই চিকিৎসকদের পরামর্শ সেবা নিতে পারবেন।
আগামী একমাস বিনামূল্যে এ চিকিৎসা সেবা দেয়া হবে বলে ড. রব্বানী জানান। পরবর্তীতে চিকিৎসক বিশেষে নির্ধারিত ফি এর বিনিময়ে চিকিৎসা সেবা দেয়া হবে। টেলিমেডিসিন কার্যক্রমটি মূলত ২০১৫ সাল থেকেই পরিচালিত হয়ে আসছে।
দেশের যে কোন জায়গা হতে বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চলে প্রান্তিক জনগণের জন্য বর্তমানে রয়েছে ৫০টির মত কেন্দ্র। এ পর্যন্ত প্রায় ৩০,০০০ পরামর্শ সেবা দেয়া হয়েছে। এজন্য যেসব চিকিৎসক এখন থেকেই বিনামূল্যে এ সেবাটি দিতে চান তাদের নিবন্ধন শুরু করা হয়েছে। নিবন্ধিত চিকিৎসক তার পরামর্শের সময় নির্ধারিত করে দিতে পারবেন। এ সেবা কার্যক্রমে যুক্ত হবার জন্য ইচ্ছুক চিকিৎসকদের এ লিংকে নিবন্ধিত হতে অনুরোধ করা হয়েছে :
https://docs.google.com/forms/d/e/1FAIpQLSelF-g83mfotCLHJzYYpvX7BkcwGLqZYJOQUqb6d6RK2qt3LQ/viewform
ইন্টারনেট লিংকে গিয়ে একটি তথ্য ফরম পূরণ করতে অনুরোধ করা হয়েছে। কোন সমস্যা থাকলে বা আরও তথ্য জানতে চাইলে [email protected] ইমেইলে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হচ্ছে।
পরবর্তীতে যেসব রোগীর মোবাইল ইন্টারনেট আছে তাদের জন্য আরও সুবিধাসহ সেবার ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে। তখন পুরনো রোগীর ফলো-আপ সার্ভিস নিতে পারবেন। সাধারণ রোগীদের কথা মাথায় রেখে প্রাথমিকভাবে একটি অটোমেটিক হান্টিং ফোন লাইনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর প্রোগ্রামে চিকিৎসকদের টেলিফোন নাম্বারগুলো পছন্দের দিন ও সময়সহ সংরক্ষিত থাকবে। যে কোন রোগী তার মোবাইল ফোন থেকে এ হান্টিং নাম্বারে ফোন করলে ঐ সময়ে যারা চিকিৎসা দেয়ার জন্য তৈরি, তাদের ফোন নাম্বারগুলো খুঁজতে থাকবে। যার নাম্বার খোলা থাকবে তাদের কাছে কল যাবে।
আপাততঃ চিকিৎসক মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই মৌখিকভাবে রোগীকে পরামর্শ দেবেন। আগামী ১লা বৈশাখ (১৪ এপ্রিল) থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে স্মার্ট ফোন থেকে বা পাশে রাখা একটি পিসি এর মাধ্যমে রোগীর যাবতীয় তথ্যাদি ও প্রেসক্রিপশন চিকিৎসক কেন্দ্রীয় ‘ক্লাউড’ সার্ভারে জমা করতে পারবেন। তারপর একটি বাটন চাপলেই প্রেসক্রিপশনের মূল বিষয়বস্তুগুলো (ডায়াগনোসিস, ওষুধের নাম, উপদেশ, ইত্যাদি) রোগীর মোবাইল ফোনে মেসেজ আকারে চলে যাবে। ফলে ভবিষ্যতে একই রোগী ফিরে এলে পুরনো তথ্যগুলো ক্লাউড সার্ভার থেকে সামনে আনতে পারবেন।